সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

গাজীপুরে ৪০ হাজার অবৈধ ইজিবাইক

গাজীপুরের সুখ-দুঃখ - ৭

মোস্তফা কাজল, গাজীপুর থেকে ফিরে

গাজীপুরে ৪০ হাজার অবৈধ ইজিবাইক

প্রায় ৪০ হাজার অবৈধ ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গাজীপুর। এগুলো ছোট ছোট গাড়ির সঙ্গে তো পাল্লা দেয়ই, কখনো কখনো বাস-ট্রাকের সঙ্গে পাল্লা দেয়। গাড়িগুলোকে সাইড না দিয়ে রাস্তার ঠিক মাঝখান দিয়ে চলে ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। মাঝেমধ্যে তাল সামলাতে না পেরে উল্টে পড়ে যায়। ব্যাটারিচালিত এ রিকশাভ্যানগুলো এখন ৩৩০ বর্গমাইলের গাজীপুরে আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বৈধ অনুমোদন না থাকলেও পুলিশ প্রশাসনের কিছু সদস্যকে ম্যানেজ করে ভয়ানক এ যানগুলো শহরসহ পুরো এ জেলা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। জেলা-উপজেলার অলিগলি তো আছেই, অনেক সময় মহানগরের সদর রাস্তায়ও এগুলোকে দাপটের সঙ্গে চলতে দেখা যায়। তবে কিছু ইজিবাইকের বৈধতা দিতে যাচ্ছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন। সরকারিভাবে কোনো হিসাব না থাকলেও একাধিক রিকশা গ্যারেজ মালিকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য। অনুমোদন ছাড়াই গাজীপুর জেলায় চলছে ৪০ হাজার ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। কিছু শ্রমিক সংগঠনের স্টিকার লাগিয়ে ওই রিকশাগুলো চালানো হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, এগুলোকে পুঁজি করে কিছু পুলিশ সদস্য এবং অসাধু ব্যক্তি মাসে অন্তত কয়েক লাখ টাকা উপার্জন করছেন। ব্যাটারিচালিত এ রিকশাগুলো সাধারণ রিকশার চেয়ে দ্রুতগতিতে চলে। দ্রুতগতিতে চলে বলে সাধারণ রিকশার চেয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ রিকশায় ভাড়াও বেশি। এগুলোর কাঠামো সাধারণ রিকশা বা ভ্যানের মতোই। পেছনে কয়েকটি ব্যাটারি লাগানো থাকে, যার সাহায্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ যানগুলো চলাচল করে। জেলার টঙ্গী উপজেলার স্টেশন এলাকার বাসিন্দা হোসেন মিয়া বলেন, গতি বেশি হওয়ায় এগুলো প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটায়। গাজীপুর মহানগরের শিববাড়ী এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, ‘গতকাল ছায়াবীথি এলাকা থেকে ওই রিকশায় করে বঙ্গতাজ অডিটরিয়ামে একটি অনুষ্ঠানে রওনা হই। আমাকে বহনকারী রিকশাটির গতি এতই বেশি ছিল যে, ভাঙা রাস্তায় ছিটকে রিকশা থেকে পড়ে যাই।’ এ এলাকার ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম জানান, এ জেলায় অটোরিকশা যারা চালাচ্ছে তাদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৪-১৫ বছর। সাইফুল হক নামের অপর এক ব্যক্তি জানান, গতকাল রাতে তিনি শহরের সোনালী ব্যাংকের সামনে দিয়ে রেল স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন। সে সময় ব্যাটারিচালিত একটি রিকশা তার ওপর এসে পড়লে গুরুতর আহত হন তিনি। সূত্র জানায়, এ জেলায় রিকশা ভ্যানচালক ও মালিকদের ৪টি সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠনের স্টিকার নিয়েই চলছে রিকশা ও অটোরিকশা। অটোরিকশাগুলোর ব্যাটারি চার্জ দিতেও অনেক বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। প্রতিটি রিকশায় ১২ ভোল্টের দুই থেকে তিনটি ব্যাটারি রয়েছে। গড়ে ৩৫ থেকে ৩৮ হাজার ব্যাটারি চার্জ হচ্ছে প্রতিদিন। এগুলো হচ্ছে চোরাই লাইন দিয়ে। রিকশার গ্যারেজগুলোতে অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগের মাধ্যমে এসব ব্যাটারিতে চার্জ দেওয়া হয় বলে জানান ছায়াবীথি এলাকার এক গ্যারেজ কর্মচারী। ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো মহাসড়কেও চলছে। অথচ ওই সব রোডে রিকশা চলাচল নিষেধ। এ কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ ছাড়া মহাসড়কে এসব রিকশার কারণে জটের সৃষ্টি হচ্ছে। এর চালকরা অনেকটা বেপরোয়া। আবার ব্যাটারিগুলো থাকে পেছনে আটকানো, যা চরম বিপজ্জনক। যে কোনো সময় এ ব্যাটারি ছিটকে পড়ে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। সূত্র জানায়, মাঝেমধ্যে অবৈধ রিকশার বিরুদ্ধে আটকাভিযান চালানো হলেও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলছে অবাধেই। জানা গেছে, পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে এসব রিকশা মালিকরা মাসিক ভিত্তিতে দেন কমপক্ষে এক হাজার টাকা। অঞ্চলভেদে কোথাও কোথাও বেশিও দিতে হয়। মাসে এই অটোরিকশা থেকে কর্তৃপক্ষের আয় আছে কয়েক লাখ টাকার ওপরে। মফিজ মিয়া নামের এক রিকশাচালক জানান, মাসে প্রতিটি গাড়ি থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার কিছু পুলিশ সদস্য এক হাজার টাকা করে নেন। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, কিছু প্রতিবন্ধী মানুষের নামে এ রিকশাগুলো চলাচলের মৌখিক বা কাগুজে অনুমতি নেওয়া হয়। মানবিক কারণে প্রতিবন্ধীদের এ অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু দেখা যায় যার নামে অনুমতি নেওয়া হয় তিনি গাড়িটি চালাচ্ছেন না। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অনেক এলাকায় এক ব্যক্তির নামে একাধিক গাড়ির অনুমতি নেওয়া রয়েছে। আসলে প্রতিবন্ধীদের নাম দিয়ে সুস্থ সবলরাই এ অনুমতি নিয়ে ব্যবসা করছে। অবৈধ এ অযান্ত্রিক যানবাহনের বিষয়ে গাজীপুরের সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা আপাতত ২০ হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক চলাচলের অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছি। এ জন্য সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ৫ থেকে ১৫ হাজার টাকা যানপ্রতি নেওয়া হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর