সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগ : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল চট্টগ্রামে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে অফিসারদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন -বাসস

বঙ্গোপসাগর অপার সম্পদের উৎস, সে কথা উল্লেখ করে প্রয়োজনে সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে নৌবাহিনীকে সমুদ্রসীমার সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল চট্টগ্রাম নেভাল একাডেমিতে নৌবাহিনীর রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ পরিদর্শন শেষে প্রশিক্ষণার্থী অফিসারদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার বিরোধ মীমাংসার ফলে সমুদ্রের গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রচুর মৎস্য ও খনিজ সম্পদে ভরপুর আমাদের জলসীমার অতন্দ্র প্রহরী       হিসেবে নৌবাহিনীকে সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও এর সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও জাতীয় প্রয়োজনে নৌবাহিনীর সদস্যরা সিভিল প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উপকূলীয় অঞ্চলে কাজ করে থাকে। জাতীয় স্বার্থে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে ভবিষ্যতেও সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রশিক্ষণার্থী অফিসারদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কঠোর প্রশিক্ষণ তারা শেষ করছেন, তা উৎকর্ষ অর্জনের সূচনা মাত্র। সততা, সঠিক নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আপনাদের সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সরকার জাতির পিতার প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতির আলোকে ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’ প্রণয়ন করে এবং তার বাস্তবায়ন শুরু করে। সেই থেকে টানা তিনবার সরকার গঠনের ফলে আমাদের সরকারের উদ্যোগে এখন পর্যন্ত নৌবাহিনীতে ২৭টি যুদ্ধ জাহাজ সংযোজিত হয়েছে। আমরা নৌবাহিনীর দক্ষ কমান্ডো ও উদ্ধারকারী দল তথা স্পেশাল ওয়ারফেয়ার ডাইভিং অ্যান্ড স্যালভেজ কমান্ড এবং  নৌবাহিনীর বৈমানিক দল বা এভিয়েশন উইং সৃষ্টি করেছি। ২০১৭ সালে আমরা নৌবহরে দুটি অত্যাধুনিক সাবমেরিন সংযোজন করি। এর ফলে আমরা বাংলাদেশ  নৌবাহিনীকে একটি পূর্ণ ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে রূপান্তরিত করতে সমর্থ হয়েছি। শেখ হাসিনা বলেন, একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ  মোকাবিলায়, আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায়, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার কওে নৌবাহিনী যাতে সক্ষমতা অর্জন করতে পারে, সেজন্য সরকার এ বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি করে যাচ্ছে। আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর) জানায়, অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ২০১৭/এ ব্যাচের ৬১ জন মিডশিপম্যান এবং ২০১৯/বি ব্যাচের ১১ জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসারসহ ৭২ জন নবীন কর্মকর্তা কমিশন্ড লাভ করেন। এদের মধ্যে সাতজন মহিলা এবং দুজন মালদ্বীপের কর্মকর্তা রয়েছে। সদ্য কমিশন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে মিডশিপম্যান ২০১৭/এ ব্যাচের রাইয়ান রহমান সব বিষয়ে সর্বোচ্চ মান অর্জন করে সেরা চৌকস মিডশিপম্যান হিসেবে ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন। এ ছাড়া মিডশিপম্যান মো. সাইদিস সাকলাইন মিরান প্রশিক্ষণে ২য় সর্বোচ্চ মান অর্জনকারী হিসেবে ‘নৌ-প্রধান স্বর্ণ পদক’ এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ২০১৯/বি ব্যাচ হতে এ্যাক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট মো. কামরুজ্জামান শ্রেষ্ঠ ফলাফল অর্জনকারী হিসেবে ‘বীর শ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্বর্ণ পদক’ লাভ করেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌ বাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাতসহ নৌ-সদর দফতরের পিএসওগণ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর আঞ্চলিক অধিনায়কগণ, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নৌ কমান্ডোসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, দেশি-বিদেশি কূটনীতিক এবং শিক্ষা সমাপনী ব্যাচের অভিভাবকগণ উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন।

নেতা হতে চাইলে মানুষের কাছে যান : দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইলেকশন করতে চান, ভোট চান, সংগঠন করতে চান, নেতা হতে চান তো আগে মানুষের কাছে যান। মানুষের কী সমস্যা আছে দেখেন। মানুষের জন্য কী করতে পারেন, করেন। তাহলে মানুষই আপনাদের সব সুযোগ করে দেবে। আপনাদের কারও কাছে গিয়ে ধরনা দিতে হবে না। আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলে পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হওয়ায় কাউন্সিলররা গতকাল সন্ধ্যায় গণভবনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের দারিদ্র্যের হার আজকে ২০ ভাগে নেমেছে। আমি তো মনে করি, আমরা সবাই যদি উদ্যোগ নেই আমাদের নেতা-কর্মীদের বলব আপনাদেরও উদ্যোগ নেওয়া উচিত যে, আপনার এলাকায় কয়টা লোক দরিদ্র আছে। কয়টা লোক ভূমিহীন আছে নিজেরাই খুঁজে বের করে বলেন, আমাদেরকে দেন। হিসাব বের করা দল হিসেবে এটা আমাদের একটা কর্তব্য। আমরা করতে পারি, আমাদের দলই পারে। আমরা তাদের ঘরবাড়ি করে দিতে, থাকার ব্যবস্থা করে দিতে পারি। সবই করে দিতে পারি।

 আমাদের তরফ থেকে উদ্যোগটা থাকতে হবে।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমরা যে উন্নয়ন করে যাচ্ছি সে কথা মানুষকে বার বার বলতে হবে। এটা আপনাদের দায়িত্ব। আপনারা বিভিন্ন জেলা, বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন, এটা আপনাদের দায়িত্ব মানুষকে বলে দিতে হবে যে, আপনাদের জন্য আমরা এ কাজ করেছি। আগে ছিল না, এখন হয়েছে। মানুষ সুখ পেলে দুঃখের কথা ভুলে যায়। আর সুখটা যে কারা দিল সেটাও মনে রাখতে চায় না। সেই কারণে তাদেরকে বার বার স্মরণ করাতে হবে। বলতে হবে, আজকে বাংলাদেশ যে পর্যায়ে এসেছে সেটা আওয়ামী লীগ করেছে।

সর্বশেষ খবর