সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব

আবাসনে নিবন্ধন খরচ সুদ বড় প্রতিবন্ধকতা

রিহ্যাব আবাসন মেলা শুরু হচ্ছে কাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

আবাসন শিল্পে উচ্চ নিবন্ধন খরচ, ক্রেতাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা না থাকা ও ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহারকে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছে এ খাতের মালিকদের সংগঠন রিহ্যাব। সংগঠনটি বলেছে, নীতিনির্ধারণী কিছু সমস্যার কারণে সংকট থাকলেও তা থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছে আবাসন খাত। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ভর্তুকি দিয়ে ৫ শতাংশ সুদে গৃহঋণ চালুর পর স্থবিরতা কাটছে। সর্বশেষ ফ্ল্যাট কিনতে সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা গৃহঋণ সুবিধায় ইতিবাচক ধারায় ফিরছে আবাসন শিল্প। এমন প্রেক্ষাপটে আগামীকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হচ্ছে পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাব আবাসন মেলা-২০১৯। গতকাল রাজধানীর হোটেল সুন্দরবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল। উপস্থিত ছিলেন রিহ্যাবের প্রথম সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ, মো. আনোয়ারুজ্জামান, সোহেল রানা, মো. আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী, পরিচালক তৌহিদা সুলতানা প্রমুখ। রিহ্যাবের শীতকালীন এই আবাসন মেলার কো-স্পন্সর হিসেবে রয়েছে দেশের শীর্ষ শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রাইভেট) লিমিটেড। আগামীকাল শুরু হতে যাওয়া এই মেলা চলবে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে মেলা। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল বলেন, প্রধানমন্ত্রী ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট বা এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে জোর দিলেও তা এখনো হয়নি। অর্থমন্ত্রীও উদ্যোগ নিয়েছেন। বাজেটে ঘোষণা দেওয়ার পর ছয় মাসেও নিবন্ধন খরচ কমানোর প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। এ ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সহযোগিতা করলেও আইন ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের আমলাতান্ত্রিক ঘাটতি আছে। আশার কথা হলো, প্রজ্ঞাপনটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ে আছে। তিনি বলেন, বৈধ উপায়ে অর্জিত অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের প্রয়োজন আছে। এই অর্থ পাচার না হয়ে দেশে বিনিয়োগ হলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু একটি সংস্থার ওই অর্থ বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ আছে। তবে সরকার ইতিবাচক। যদিও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও এনবিআর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ-সংক্রান্ত বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে।

রিহ্যাব সভাপতি লিখিত বক্তব্যে বলেন, নীতিনির্ধারণী কিছু সমস্যার কারণে আবাসন খাত সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে এই সংকটময় অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে এ খাত বেরিয়ে আসছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ভর্তুকি দিয়ে ৫ শতাংশ সুদের গৃহঋণ চালু করার পর এ খাত স্থবিরতা থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টায় রয়েছে। এ ছাড়া গত মাসে ফ্ল্যাট কেনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বোচ্চ দুই কোটি টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ দেওয়ার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, যেটা আগে এক কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ছিল। এটা অবশ্যই আবাসন খাতের জন্য ইতিবাচক। এই ব্যবস্থায় ক্রেতারা লাভবান হবেন। তবে এখনো উচ্চ নিবন্ধন ব্যয়, সব নাগরিকের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা না থাকা এবং ব্যাংক ঋণের উচ্চ হার এ খাতের বড় প্রতিবন্ধকতা।

তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী আবাসন খাতে নিবন্ধন ব্যয় কমানোর ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে প্রায় ১৫ শতাংশ ভূমিকা রাখা আবাসন শিল্পে নিবন্ধন ব্যয় কমিয়ে ৬ থেকে ৭ শতাংশে নিয়ে এলে এ খাত অর্থনীতিতে আরও অবদান রাখতে পারবে। আবাসন খাত এগিয়ে গেলে নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা ‘বাসস্থান’ পূরণের পাশাপাশি শিল্প-কারখানা বিকশিত হবে। ফলে সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি। রিহ্যাব বলেছে, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে মানুষের ভালো জায়গায় সুন্দর ফ্ল্যাট নিয়ে থাকার আগ্রহ বাড়ছে। সব নাগরিক যাতে ভাড়ার টাকায় নিজস্ব ঠিকানা খুঁজে নিতে পারেন সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করছে রিহ্যাব। গত কয়েক দশক সহজে আবাসনের মালিকানা সৃষ্টি মানুষের মনে আত্মনির্ভরতা তৈরি করেছে। এ ছাড়া সরকারের রাজস্ব আয়, কর্মসংস্থান, রড, সিমেন্ট, টাইলস্সহ ২৬৯ ধরনের লিংকেজ শিল্প প্রসারের মাধ্যমে সমগ্র নির্মাণ খাত জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সমগ্র নির্মাণ খাতের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ। এ খাত ৩৫ লাখ শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল ২ কোটি মানুষের অন্নের জোগান দিয়েছে।

রিহ্যাব জানিয়েছে, আবাসন খাতের সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘রিহ্যাব উইন্টার ফেয়ার ২০১৯’ উদ্যোক্তা ও ক্রেতাদের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সাধ ও সাধ্যের মধ্যে মনের মতো ফ্ল্যাট বা প্লট খুঁজে নিতে ক্রেতাদের সাহায্য করবে। ২৪ থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠেয় এবারের মেলায় ২৩০টি স্টল থাকছে। এতে ৩০টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস ও ১৪টি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান এতে অংশগ্রহণ করছে। মেলা উদ্বোধন করবেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। প্রথম দিন ক্রেতা-দর্শনার্থীরা বেলা ২টা থেকে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। পরের দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সবার জন্য মেলা উন্মুক্ত থাকবে। মেলায় প্রবেশের জন্য দুই ধরনের টিকিট থাকছে। একটি সিঙ্গেল এন্ট্রি, অপরটি মাল্টিপল এন্ট্রি। সিঙ্গেল টিকিটের প্রবেশমূল্য ৫০ টাকা। আর মাল্টিপল এন্ট্রি টিকিটের প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা। টিকিটের প্রাপ্ত অর্থ দুস্থদের সাহায্যার্থে খরচ করবে রিহ্যাব। টিকিটের র‌্যাফেল ড্রতে থাকছে আকর্ষণীয় সব মূল্যবান পুরস্কার। মেলার শেষ দিন ২৮ ডিসেম্বর রাত ৯টায় র‌্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হবে।www.rehabwinterfair2019.com এই ওয়েবসাইটে লটারি বিজয়ীদের নাম প্রকাশ করা হবে। প্রসঙ্গত, ২০০১ সাল থেকে ঢাকায় আবাসন মেলা শুরু করে রিহ্যাব।

সর্বশেষ খবর