মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

পদ্মা দখল করছে প্রভাবশালীরা

চলছে ভরাট, হচ্ছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

পদ্মা দখল করছে প্রভাবশালীরা

পদ্মা দখল করছে প্রভাবশালীরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রাজশাহীতে পদ্মা নদী ভরাট করছেন আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল আলম বেন্টু। ১৮ দিন ধরে তিনি শ্রমিক লাগিয়ে নদী ভরাটের কাজ করছেন। এতে করে নদীর গতিপথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ট্রাক চলাচলের রাস্তা করতে ইতিমধ্যে নদীর দুই তীর থেকে প্রায় ২০০ গজ ভরাট করে ফেলা হয়েছে।

শুধু আজিজুল আলম বেন্টু নন, নানাভাবে পদ্মা নদীর ৩০ কিলোমিটার এলাকায় চলছে ভরাটের মহোৎসব। বালু পরিবহন ও দোকানঘর নির্মাণের নামে ভরাট চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হলেও দখল, ভরাট বন্ধ হয়নি। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল আলম বেন্টু তার ‘মেসার্স আমিন ট্রেডার্স’ নামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে পবা উপজেলার চরশ্যামপুর ও চরখিদিরপুর মৌজার একটি বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন। তবে ইজারাবহির্ভূত এলাকা থেকে বালু তোলার কারণে হাই কোর্টের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ২৪ জুলাই বালুঘাটটি বন্ধ করে দেন। এরই মধ্যে পদ্মায় পানি চলে আসে। অভিযানের পর কিছুদিন বালু তোলা বন্ধ থাকে। এরপর আবার বালু তোলা শুরু করেন বেন্টু। পদ্মায় পানি থাকায় এত দিন ড্রেজারে করে বালু তোলা হচ্ছিল। এরই মধ্যে নদীর পানিও কমে গেছে। মাঝে চর পড়ে দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে পদ্মা। এখন সেই চরেই বালুর ট্রাক পাঠাতে নদীর এপারের অংশ ভরাট করে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। নদীর দুই তীর থেকে এরই মধ্যে প্রায় ২০০ গজ ভরাট করা হয়েছে। নদী ভরাট করে রাস্তা তৈরি করা যায় কি না জানতে চাইলে আজিজুল আলম বেন্টু বলেন, ‘এটা জেলা প্রশাসককে প্রশ্ন করেন। তিনিই তো বালুঘাট ইজারা দিয়েছেন।’ তবে জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক জানিয়েছেন, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে সোনাইকান্দি থেকে বুলনপুর পর্যন্ত এলাকা রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সোনাইকান্দি বালুমহাল থেকে উত্তোলিত বালু পরিবহনের রাস্তা অপসারণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের চিঠি দেওয়া হয়। ১১ জুন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও বালুমহাল ইজারাদারকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের চিঠির কোনো তোয়াক্কা না করেই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ রজব আলী বালু উত্তোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। বালু পরিবহনে পদ্মার অনেকটা অংশ ভরাট করে রাস্তা করা হয়েছে।

পদ্মা নদীর পাড় দখল করে গড়ে উঠছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সিটি করপোরেশনের তৈরি করা বিনোদন কেন্দ্রের পাশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ার হিড়িক পড়েছে। পদ্মার পাড়ে এ রকম শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পরিবারিক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় নদী দখলের প্রবণতা বাড়ছেই। বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়ায় নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। সেই রাস্তা দিয়ে বালু পরিবহন করা হচ্ছে। ১৮ ডিসেম্বর স্থানীয় বাসিন্দারা এ নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। রাজশাহীর নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন, ‘আমরা এভাবে নদী ভরাটের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। কারণ এ বছর নদী ভরাট করে রাস্তা তৈরি করা হলে সেটা আগামী ভরা মৌসুমে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করবে।’ রাজশাহী পরিবেশ আন্দোলন ঐক্যের সদস্য ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘নদী এভাবে ভরাট করে ফেলা খুবই দুঃখজনক। আমরা এর প্রতিবাদে আন্দোলনে যাচ্ছি।’

সর্বশেষ খবর