প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনামতে নদী-খাল দখলমুক্ত করতে সারা দেশে শুরু হয়েছে উচ্ছেদ অভিযান। স্থানীয় প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) যৌথভাবে গতকাল এ অভিযান শুরু করে। দেশের সব নদী-খাল পুরোপুরি দখলমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত উচ্ছেদ কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের খবর-সিলেট : জকিগঞ্জ ও জৈন্তাপুর উপজেলায় নদীতীরের শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে প্রশাসন। জকিগঞ্জে সুরমা নদীর তীর দখল করে নির্মিত ৬০টি ও জৈন্তাপুর উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর নির্মিত ৪০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পর্যায়ক্রমে সব উপজেলায় অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে অভিযান চলবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। ময়মনসিংহ : ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। ময়মনসিংহের পাটগুদাম ব্রিজ থেকে কাচারিঘাট পর্যন্ত সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। সেগুলো ধারাবাহিক অভিযানে দখলমুক্ত করা হবে বলে জানান পাউবো কর্মকর্তারা। কুমিল্লা : গোমতী নদীর পাড়ের ১৩৯টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। আদর্শ সদর উপজেলার গোমতী নদীর পালপাড়া, চানপুর, আড়াইওড়া, শ্রীপুরে বেড়িবাঁধ ও চর দখল করে গড়ে ওঠা দোকানপাট, বাড়িঘর ভেঙে দেওয়া হয়। বগুড়া : করতোয়া নদীর পাড় থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের যৌথভাবে পরিচালিত অভিযানে গতকাল ১৬টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে চার তলা ভবন তিনটি, আধাপাকা চারটি। কুষ্টিয়া : ভেড়ামারায় গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জি কে) সেচ পাম্প হাউসসংলগ্ন এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। জি কে মেইন খালের ওপর থাকা ৭০টি স্থাপনা গতকাল উচ্ছেদ করা হয়েছে। কুষ্টিয়া পাউবো জানায়, ৩৫ কিমি মেইন খালের ওপর প্রায় ১ হাজার ৬০০ অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে তিন মাস আগে থেকে একাধিকবার উচ্ছেদ নোটিস দেওয়া হয়েছে। নাটোর : নাটোরের নারদ নদের তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করেছে প্রশাসন। শহরের নিচাবাজার হেমাঙ্গিনী সেতুর কাছে অভিযান শুরু করা হয়। জেলা প্রশাসক জানান, পৌর এলাকার চিহ্নিত ১৫টি স্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এ উচ্ছেদ অভিযান চলমান থাকবে। চুয়াডাঙ্গা : আলমডাঙ্গায় জি কে (গঙ্গা-কপোতাক্ষ) খালের পাশে গড়ে ওঠা শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জানান, জি কে খালের পাশে ২৮৪ জন অবৈধ দখলদার আছেন। নদী-খালের পানিপ্রবাহ চলমান রাখতেই নদীর পাশে গড়ে ওঠা সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। পঞ্চগড় : শহরের তুলার ডাঙ্গা এলাকায় করতোয়া নদী দখলমুক্ত করার লক্ষ্যে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ দখল করে বসবাস করছিল ৯৬টি পরিবার। লক্ষ্মীপুর : খাল দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ৫০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য মাইকিং করে প্রচার চালানো হয়েছে। কিন্তু দখলদাররা স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়ায় বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পাবনা : ইছামতি নদীর দুই পাড়ের সব অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন জানায়, এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। পর্যায়ক্রমে ইছামতির ৩৩৪ জন তালিকাভুক্ত দখলদারসহ জেলার সহস্রাধিক অবকাঠামো উচ্ছেদ করা হবে। পাউবো জানায়, গতকাল ৮০টি অবকাঠামো ভেঙে উদ্ধার করা হয় ৫ একর সম্পত্তি; যার মূল্য ৫০ কোটি টাকা। দিনাজপুর : শহরের মাঝ দিয়ে বহমান ঘাগড়া খালটি দখলদারমুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। খালের ১৫ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ৮ কিলোমিটার এলাকায় প্রথম দফায় উচ্ছেদ করা হবে ৫৫৭টি স্থাপনা। রংপুর : নগরের পার্কের মোড় এলাকার খোকসা ঘাঘট নদের আশপাশে অভিযান চালিয়ে তিনটি স্থাপনা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। জেলা প্রশাসক জানান, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন পার্কের মোড় এলাকায় নদ ও খাল দখলে রাখা ১৬টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে। সব উচ্ছেদ করা হবে। পর্যায়ক্রমে শ্যামা সুন্দরী খাল ও তিস্তা নদী দখলমুক্ত করা হবে। রাজবাড়ী : বালিয়াকান্দির চন্দনা নদীর তীরে অবৈধ ৩৩টি স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। রাজবাড়ী পাউবো জানায়, পর্যায়ক্রমে বালিয়াকান্দি, নারুয়া, মৃগী, পাংশাসহ জেলাব্যাপী অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। শরীয়তপুর : পৌরসভার বটতলায় খালের ওপর অবৈধভাবে নির্মিত ৭৭টি দোকান উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। দিনব্যাপী অভিযান চালিয়ে ভেকু দিয়ে দোকানগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। মাদারীপুর : পুরানবাজার কাঠপট্টি ব্রিজের নিচ থেকে গড়ে ওঠা কাঁচা-পাকা ঘর, দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। জেলায় ৫ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা রয়েছে বলে জানা গেছে। সদর ইউএনও জানান, উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে। পিরোজপুর : সদর উপজেলার বিভিন্ন খালের পাড়ে গড়ে ওঠা ১০৯টি অবৈধ স্থাপনা ও দোকানঘর উচ্ছেদ করা হয়েছে। নওগাঁ : মান্দার পাঠাকাটা থেকে সতিহাট পর্যন্ত ১০ কিলোমিটারজুড়ে খালের দুই পাশে গড়ে তোলা হয়েছে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। গতকাল অভিযানের প্রথম দিন সতিহাটে ৪৬টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পর্যায়ক্রমে পুরো খালটি দখলমুক্ত করা হবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শেরপুর : নকলা উপজেলার পাঠাকাটা ইউনিয়নের পলাশকান্দি, পাঁচকাহুনিয়া ও পাঠাকাটা এলাকায় সুতি নদীতে অবৈধভাবে খনন করা মাছ চাষের ব্যক্তিগত পুুকুর উচ্ছেদ করে নদী খননকাজ শুরু করেছে পাউবো। ব্রাহ্মণবাড়িয়া : আখাউড়া উপজেলায় বাড়ি, দোকানসহ ছয়টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। নরসিংদী : জেলায় ছোট-বড় ২ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে বলে জানা গেছে। চাঁদপুর : ফরিদগঞ্জ উপজেলার বরোপিট খালের চান্দ্রা বাজার থেকে নারিকেলতলা পর্যন্ত ২২৭ দখলদারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে ১ হাজার ৪৫টি অবৈধ দখলদার চিহ্নিত করে উচ্ছেদ পরিচালনা শুরু হয়েছে। গতকাল প্রথম দিনে খোয়াই নদীর হবিগঞ্জ সদর ও চুনারুঘাট উপজেলার ৮০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। নেত্রকোনা : এ জেলায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান শুরু হয়েছে।