বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

নিউইয়র্কের আদলে পাতাল রেল

প্রকল্পের নকশা দ্রুত শেষ করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর, চলবে বিদ্যুতের সাহায্যে, প্রতি মিনিটে গতি হবে এক কিলোমিটার

মানিক মুনতাসির

নিউইয়র্কের আদলে পাতাল রেল

দেশের প্রথম পাতাল রেলের নকশার (ডিটেইল ডিজাইন স্কেচ) কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীবাসীকে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরার সুযোগ করে দিতে এই পাতাল রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনবে বলে মনে করেন তিনি। জরুরি ভিত্তিতে ২৩ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি সারমর্ম পাঠানো হয়। পরদিনই সারমর্মের ফিরতি ফাইলে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয় ও ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানায়, দেশের প্রথম পাতাল রেল স্থাপন করা হচ্ছে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর রুটে, যা এমআরটি লাইন-১ নামে পরিচিত। এটি হবে নিউইর্য়কের আদলে, যা সেখানে সাবওয়ে নামে পরিচিত। চলবে বিদ্যুতের সাহায্যে। এ রেলের গতিবেগ হবে প্রতি মিনিটে এক কিলোমিটার। সে হিসেবে প্রায় ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এমআরটি-১-এর সময়ের দূরত্ব হবে মাত্র ২০ মিনিট।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পাঠানো সারমর্মের তথ্যনুযায়ী, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নেই হবে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন। বর্তমানে ডিটেইল ডিজাইন স্কেচের কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই নকশা প্রণয়নের কাজ শেষ হবে। এমনটাই জানিয়েছেন এমআরটি লাইন-১-এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল ওয়াদুদ। তিনি বলেন, এটি এমনিতেই একটি অগ্রাধিকার প্রকল্প। এ ছাড়া এসব প্রকল্প সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মনিটরিং করা হয়। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সারমর্ম অনুযায়ী এ প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা। ১৫ অক্টোবর এর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোফাইল (ডিপিপি) অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২২ সালের ৩০ জুন থেকে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এরই মধ্যে বিমানবন্দর থেকে খিলক্ষেত হয়ে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি, নতুনবাজার, কুড়িল ও আশপাশ এলাকায় শুরু হয়েছে মাটি নিরীক্ষার কাজ। ৫০ ফুট গভীরে তৈরি হবে স্টেশন। প্রতি স্টেশনে যাত্রী ওঠানামার জন্য ট্রেনগুলো থামবে সর্বোচ্চ ৩০ সেকেন্ড। বিদ্যুৎ-চালিত এসব ট্রেনে ২০ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতে সময় লাগবে ২০ মিনিট। এমআরটি লাইন-১-এর রুট হবে বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে টার্মিনাল-৩, খিলক্ষেত, যমুনা ফিউচার পার্ক, নতুনবাজার, উত্তর বাড্ডা, হাতির ঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ হয়ে কমলাপুর। লাইন-১-এর আরেকটি রুট হবে নতুনবাজার, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা পুলিশ অফিসার্স হাউজিং সোসাইটি-মাস্তুল-পূর্বাচল, পশ্চিম পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল সেক্টর-৭ হয়ে পিতলগঞ্জ ডিপো। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ৫২ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৯ হাজার কোটি টাকা জোগান দেওয়া হবে সরকারি তহবিল থেকে। বাকি অর্থ দেবে জাইকা। লাইন-১ এখানে পাতাল রেল হবে ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার। লাইন-১-এ একই সঙ্গে চলবে ২০০টি কোচ। প্রতিটি সেটে আটটি করে কোচ থাকবে। এ অংশে ১৯টি স্টেশনের মধ্যে পাতালে থাকছে ১২টি স্টেশন। এদিকে পাতাল মেট্রোরেল স্থাপনের কাজ শুরুর আগেই কয়েকটি বাধার মুখে পড়েছে এ প্রকল্প। এর মধ্যে আন্ডারগ্রাউন্ডে লাইন স্থাপনে মাটি খোঁড়ার কাজ ও মাটি তুলে স্টেশন তৈরি এবং লাইনের বসানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বা বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে মাটি অপসারণ করাকে। কেননা প্রকল্প এলাকার আশপাশে তেমন খালি জায়গা নেই, যেখানে অপসারণ করা মাটি রাখা যাবে। পাতাল রেল হবে মাটির উপরিভাগের সড়ক থেকে ১৫০-২০০ ফুট নিচে। আর স্টেশনগুলোর আয়তন হবে কয়েক হাজার বর্গফুট ও তিন-চারতলাবিশিষ্ট। এতে পাতাল রেলের টানেল ও স্টেশন নির্মাণের জন্য প্রচুর মাটি অপসারণ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘এর জন্য বিভিন্ন সম্ভাব্য পথ খোলা রয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এর জন্য জাইকাও কাজ করছে। আশা করি দ্রুত সমাধান বেরিয়ে আসবে।’

সর্বশেষ খবর