শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ইয়াবার আরেক রুট কুয়াকাটা

একের পর এক অভিনব কৌশল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি

মাহবুব মমতাজী, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) থেকে ফিরে

ইয়াবার আরেক রুট কুয়াকাটা

একের পর এক অভিনব কৌশল আবিষ্কার করছে ইয়াবাচক্র। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে নিত্যনতুন রুট পরিবর্তন করছে তারা। সড়কপথের ব্যবহার কমিয়ে বেশিরভাগ ইয়াবা চালান নৌপথে সারা দেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে তারা। আগে ইয়াবা মূলত মিয়ানমার থেকে টেকনাফে এসে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম হয়ে সড়কপথে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যেত। নতুন রুট মিয়ানমার থেকে টেকনাফ হয়ে কুয়াকাটা। এরপর কুয়াকাটা থেকে নদীপথে চাঁদপুরে এসে নৌপথেই ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহীসহ সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। কুয়াকাটার শুঁটকি পল্লীর ব্যবসায়ী, ধোলাই মার্কেটের ব্যবসায়ী, কাউয়ার চরের জেলে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের স্থানীয় কর্মকর্তা ও টুরিস্ট পুলিশের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। সূত্র জানায়, সম্প্রতি ইয়াবা পাচারের নতুন রুট হিসেবে নৌপথকে বেশি ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। মিয়ানমার থেকে নাইক্ষংছড়ি ও বান্দরবানের কিছু দুর্গম পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা প্রথমে ভারতের সীমানায় নেওয়া হতো। এই রুট পরিবর্তন করে কুয়াকাটা ও বরিশালসহ উপকূলীয় অঞ্চলের নৌপথকে বেছে নিয়েছে ইয়াবা চোরাকারবারিরা। কয়েকটি চালান এরই মধ্যে র‌্যাব আটকও করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, মিয়ানমার থেকে টেকনাফ ও কক্সবাজার হয়ে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা হয়ে ঢাকায় পৌঁছতে গিয়ে অনেক স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তল্লাশির মুখোমুখি হতে হয়। এ কারণে এখন টেকনাফ থেকেই নদী ও সাগরপথে ইয়াবা সরাসরি আসছে কুয়াকাটায়। ছোট-বড় লঞ্চ, মাছ ধরার ট্রলার, বালিবাহী নৌকার মাধ্যমে সাগর ও নদীপথে ইয়াবার চালান সারা দেশে সরবরাহ করা হয়। এসব ইয়াবা চালান আবার বিভিন্ন পয়েন্টে বাহন বা হাত বদল হয়। র‌্যাব-৮ সূত্র জানায়, গতবছর অক্টোবরে পটুয়াখালীতে ইয়াবার একটি বড় চালান জব্দ করে তারা। ৭ লাখ ইয়াবা ও অস্ত্রসহ দুজনকে আটক করে। সাগর পথে কুয়াকাটায় ইয়াবার বড় একটি চালান খালাস হবে এমন তথ্য তাদের কাছে আগেই ছিল। এ তথ্যে তারা কলাপাড়ার শেখ কামাল ব্রিজের দক্ষিণ পাশে অভিযান চালিয়ে ৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫৬ পিস ইয়াবা এবং দুটি বিদেশি অস্ত্রসহ তাদের আটক করে। আটককৃতরা টেকনাফের পশ্চিম পানখালীর ইউনুচ আলীর ছেলে ইব্রাহীম (২৫) ও উখিয়ার আবুল হোসেনের ছেলে আলম (৩০)। কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান জানান, ট্রলারে করে মাদক চোরাচালান ঠেকাতে নানা ধরনের সচেতনতামূলক কাজ করা হয়। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও খুব সক্রিয় ভূমিকা পালন করে থাকে। কুয়াকাটায় মাদকবিরোধী অভিযানে ১৪ ডিসেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ৫ লিটার চোলাই মদসহ এক মাদক বিক্রেতাকে আটক করে। কুয়াকাটার পঞ্চায়েত পাড়া থেকে মেহেদি হাসান মুরাদ (২৪) নামে ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। মুরাদ বরিশালের চরমোনাই এলাকার মৃত সাইয়েদুর রহমান চুন্নু মিয়ার ছেলে। সাগর নীড় সীমানায় আবুল খায়ের নামে এক জেলে জানান, তারা বিচ থেকে ৫ নটিক্যাল মাইল দূরে মাছ ধরতে যান। আর যেসব ট্রলার ইয়াবা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত, সেসব ট্রলারের কাছে গভীর সাগর থেকে স্পিড বোট নিয়ে আসেন ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। এরপর মাছ ধরা ট্রলারের মাধ্যমে বিচের কাছে সরবরাহ করেন। বিচে আবার ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের কিছু চালক সন্ধ্যা নামতেই মাদকের আড্ডায় মেতে ওঠেন। তারাই মূলত মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকেন।

সর্বশেষ খবর