শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিয়ে ব্যবসায়ী

মির্জা মেহেদী তমাল

বিয়ে ব্যবসায়ী

ফেসবুকে লিমার (ছদ্মনাম) পরিচয় রাব্বির সঙ্গে। কদিনের মধ্যেই তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে  তোলেন রাব্বি। একজন হুজুর ডেকে তাকে বিয়েও করেন তিনি। বিয়ের পর রাব্বি নানা সমস্যার কথা বলে লিমার কাছ থেকে প্রায় ৪৫ হাজার টাকাও হাতিয়ে নেন। কিছুদিন যেতেই লিমা বুঝতে পারেন রাব্বি একজন প্রতারক। তিনি মামলা করেন তেজগাঁও থানায়। পুলিশ রাব্বিকে গ্রেফতার করে। পুলিশের জেরায় রাব্বির তথ্য শুনে পুলিশ হতবাক।

লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী থানার দুর্গাপুর গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে জাকির হোসেন  বেপারী। তার ডাক নাম রাব্বি। তিনি কোনো চাকরি বা সাধারণ কোনো ব্যবসা করতেন না। তবে তিনি এমন একটা ব্যবসা বেছে নিয়েছেন, যা সচরাচর দেখা যায় না। এই ব্যবসাতেই তিনি প্রচুর অর্থকড়ির মালিক বনে গেছেন। আর এই ব্যবসাটি হলো বিয়ে করা। রীতিমতো তিনি একজন বিয়ে ব্যবসায়ী। আর এই ব্যবসায় তার পুঁজি হলো দামি দামি পোশাক পরে ব্র্যান্ডের গাড়িতে চড়ে বেড়ানো, আর তরুণীদের মন জয় করা। আর এটা করেই তিনি বিয়ে করতেন। এরপর ব্ল্যাকমেইল। এতে অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে গেছেন রাব্বি। বর্তমান ঠিকানা তার টঙ্গীর আহসান মোল্লা রোড। পুলিশ জানতে পেরেছে, বিয়ে আর প্রতারণার মধ্য দিয়েই চলছিল রাব্বির জীবন। তার বিয়ে করার আসল উদ্দেশ্য ছিল ধর্ষণ ও গোপনে ভিডিও ধারণ করে প্রতারণা করা। তিনি বিয়ে করেছেন ২৮৬টি। রাব্বি যখন প্রথম বিয়ে করেন তখন তার বয়স ছিল ২১ বছর। এখন ৩৫। ২১ থেকে ৩৫ এই ১৪ বছরের মধ্যে মোট ২৮৬টি বিয়ে করেছেন তিনি। রাব্বির বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে তেজগাঁও থানায় মামলা করার পর রাজধানীর মণিপুরী পাড়া এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে নিজের প্রতারণার কাহিনি অপকটে স্বীকার করেন রাব্বি।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রাব্বি জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন সময় নিজেকে অবিবাহিত এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। তাদের মধ্যে অনেককে তিনি বিভিন্ন সময় বিয়ে করেন। বিয়ের পর রাব্বি নববধূর বাসায় থাকতেন এবং কৌশলে তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন। এসব বিয়ের খবর তিনি আর কোনো স্ত্রীকে জানতে দিতেন না। সবারই ব্যক্তিগত ভিডিও ধারণ করতেন। কেউ প্রতিবাদ করলে ওই সব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাতেন।

পুলিশ জানায়, রাব্বি ফেসবুকে নিজেকে লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী হিসেবে পরিচয় দিতেন। ২০০৫ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করেন। এরপর থেকে প্রতি মাসেই তিনি একটি করে বিয়ে করেছেন। তার বিয়ে করা এক স্ত্রীসহ (শাপলা বেগম) একটি চক্র রয়েছে। এরা শ্বশুরবাড়ি থেকে নানা কায়দায় অর্থ হাতিয়ে নেয়। পুলিশ জানায়, প্রতারণার ফাঁদ পেতে তরুণীদের সর্বস্ব লুটে নিতে রাব্বির রয়েছে সিন্ডিকেট চক্র। সংঘবদ্ধ ওই চক্রে রয়েছে নকল কাজী ও মৌলভি। এ ছাড়া চক্রের কিছু নারী-পুরুষ নিজের মা-বাবা ও ভাইবোন বানিয়ে রাব্বি তরুণীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন। এভাবে বিয়ের নামে গত দুই বছরে জাকির ২২ ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী নারীকে ধর্ষণ করেছেন।

সম্প্রতি ফেসবুকে বিয়ের নামে আরেকটি প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন রাব্বি। অবশ্য এবার নিজেই ফাঁদে পড়েন, আগেভাগেই প্রতারণার শিকার নারী বুঝে ফেলেন রাব্বির উদ্দেশ্য। ভুক্তভোগী তরুণীদের মাধ্যমে পাওয়া গেছে রাব্বির অসংখ্য বিয়ের কাবিনসহ তার প্রতারণায় ব্যবহৃত ছবি, ফেসবুকের চ্যাটবক্সে কথোপকথনের স্ক্রিনশট ও ভিডিও ক্লিপ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর