শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ব্যবসায়ী তোবারক হোসেন হত্যা

পুলিশের সন্দেহ খুনিরা পরিচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

পুলিশের সন্দেহ খুনিরা পরিচিত

রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে নিজ বাসায় সত্তরোর্ধ্ব ব্যবসায়ী শাহ মো. তোবারক হোসেন হত্যার কারণ এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তবে খুনিরা পরিচিত এবং পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ অনেকটা নিশ্চিত। পুলিশ বলছে, মতাদর্শগত পার্থক্য কিংবা অর্থ লুটের জন্য তাকে হত্যা করা হতে পারে। এ ঘটনায় গৃহকর্মী, দারোয়ান ও পালকপুত্রসহ ৬ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গত বুধবার ভোরে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার শান্তিনিকেতনের ১৭৮ নম্বর বাড়ির চতুর্থতলায় নিজ ফ্ল্যাটে খুন হন ব্যবসায়ী শাহ মো. তোবারক হোসেন। তিনি ওই বাসায় একাই থাকতেন। ঘটনার পর রাতেই নিহতের ছোটভাই মো. মোবারক হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা করেন। মামলাটি থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ, পিবিআই ও র‌্যাব তদন্ত করছে। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যবসায়ী শাহ মো. তোবারক হোসেন ছিলেন চট্টগ্রামের মাইজভা ারির ভক্ত। তিনি ভক্ত মুরিদানদের নিয়ে ওই ফ্ল্যাটে গত দুই বছর ধরে রয়েছেন। এসব কারণে তার পরিবারের সদস্যরা তাকে ছেড়ে চলে যান। এতে তোবারকের সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি হয়। ওই ফ্ল্যাটে প্রবেশকারী দুই মুখোশধারী খুনিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা সেখানে যাতায়াত করতেন। ঘটনার পর থেকে তারা গা-ঢাকা দিয়েছেন। তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী হোসেন খান জানান, তোবারক হোসেন হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা মামলাটি তদন্ত করছে। আমরা বেশকিছু আলামত পেয়েছি। এটা পরিকল্পিত হত্যাকা । হত্যার রহস্য উদঘাটনে ৪-৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্তে শিগগিরই সফলতা আসবে বলে আশা করছি। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলছেন, পারিবারিক, আর্থিকসহ অনেকগুলো বিষয়কে সামনে রেখে মামলার তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নিহত তোবারকের ফ্ল্যাটে গত ৫-৬ দিন ধরে হাসান নামে একজন অবস্থান করছিলেন। ঘটনার রাতেও তিনি ছিলেন। ঘটনার পর তিনি পালিয়ে যান। দুর্বৃত্তদের আঘাতে আহত তোবারকের কর্মচারী সাইফুল পুলিশকে ফোন করে বিষয়টি জানান।

হত্যাকান্ডের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক সাইফুলসহ অন্যদের কাছ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে হত্যায় জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সরাসরি জড়িত দুজনকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তাদের ধরতে পারলে হত্যার রহস্য উদঘাটন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থ লুট বা আর্থিক লেনদেন ও মতাদর্শিক বিরোধের জের ধরে খুনের সম্ভাবনার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার ভোরে মুখোশ পরিহিত অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি তোবারকের ফ্ল্যাটের কলিংবেল বাজান। এ সময় তার এক কর্মচারী দরজা খুলে দেন। দুর্বৃত্তরা ঘরে ঢুকে তোবারককে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে চলে যায়। পরে তার ওই কর্মচারী পুলিশকে ফোন করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তোবারককে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই বাসায় তোবারক হোসেন একাই থাকতেন। তার তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। মেয়েকে নিয়ে তার স্ত্রী পারভীন ইসমত আরা অন্যত্র থাকেন। একমাত্র ছেলে থাকেন বিদেশে। মহাখালীতে মামা প্লাজা নামে একটি মার্কেটের মালিক তোবারক হোসেন। নিহতের ওই বাসায় সাইফুল, সোহাগ, নাইম, জাবেদ, হাসানসহ বেশ কয়েকজনের নিয়মিত যাতায়াত ছিল। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শাহ মো. তোবারক হোসেনের মৃতদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গের হিমঘরে রাখা হয়েছে। আজ শুক্রবার তার যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছেলে শাহাদত হোসেন তুষার দেশে ফিরবেন। এরপর তোবারকের মৃতদেহ গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের চরপাড়ায় নিয়ে দাফন করা হবে।

সর্বশেষ খবর