শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

লোকালয়ে হাতির তাণ্ডবে উৎকণ্ঠা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

বন ছেড়ে লোকালয়ে ছুটে আসছে বন্য হাতির দল। লোকালয়ে এসেই হাতির পাল হয়ে উঠছে ধ্বংসাত্মক। তাতে প্রাণ হারাচ্ছে একের পর এক মানুষ। গত তিন মাসে বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় হাতির আক্রমণে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন। আহত হয়েছে অনেকে। প্রাণহানির পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে ফসলসহ সম্পদের। অভিযোগ রয়েছে হাতির পাল লোকালয়ে আসা ঠেকাতে নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগ। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াছ হোসেন বলেন, ‘লোকালয়ে হাতির আগমন আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। বিষয়টা নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’ ঘন ঘন হাতির লোকালয়ে আসাকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তা আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াসিন নেওয়াজ। তিনি বলেন, ‘হাতির পালের হাত থেকে জানমাল রক্ষায় নানান উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ‘এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম’ নামে একটি দল গঠন করা হয়েছে। তারা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে।’ চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সাল থেকে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বৃহত্তর চট্টগ্রামে বন্য হাতির আক্রমণে নিহত রয়েছে কমপক্ষে ৬০ জন। হাতির পালের আক্রমণে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এছাড়া লোকালয়ে এসে মারা গেছে কমপক্ষে ৯০টি হাতি। অন্য একটি সূত্রের দাবি-এ বছরের শেষ তিন মাস বৃহত্তর চট্টগ্রামে বন্য হাতির লোকালয়ে আসার হার অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেড়েছে অনেক গুণ। এ সময় বন্য হাতির আক্রমণে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অসংখ্য। হাতির পালের হানায় ক্ষয়ক্ষতির কোনো হিসেবে নেই। জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনীয়া, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, চন্দনাইশ ও বাঁশখালী উপজেলায় নিয়মিত হানা দিচ্ছে হাতির পাল। লোকালয়ে এসে বন্য হাতির দল জানমালের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে।

অথচ বনবিভাগ সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে না পারায় দিন দিন প্রাণহানির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি মানুষের ঘরবাড়ি, ফসলাদি বিশেষ করে পাকা ধানের ক্ষতি করায় কৃষকরা ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। মানুষের প্রাণহানি ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বন বিভাগের উপর ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বনের হাতি লোকালয়ে আসার অনেকগুলো কারণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন প্রাণী গবেষকরা। তার মধ্যে রয়েছে- পাহাড়ে নির্বিচারে বন কাটার ফলে হাতির আবাসস্থল ধ্বংস, হাতির খাদ্য সংকট, রোহিঙ্গাদের জন্য নির্বিচারে বন কাটা, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে উন্নয়নের নামে বন ধ্বংস এবং হাতির অভয়ারণ্যে মানুষের উৎপাদন বৃদ্ধি। এসব কারণে লোকালয়ে ছুটে আসছে হাতির পাল। তাদের মতে লোকালয়ে ছুটে এসে হাতি ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠার নানান কারণ রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে হাতির আচরণের বিষয়ে না জেনে অতি উৎসাহের সঙ্গে লোকজন কখনো কখনো হাতির চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। যা হাতিকে আতঙ্কিত করে তোলে। এতে ক্ষিপ্ত হয়েই হাতির পাল মানুষ, ঘরবাড়ি এবং সম্পদের উপর হানা দেয়। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজার্ভেশন অব  নেচার (আইইউসিএন) বলছে- মানুষ ও হাতির দ্বন্দ্ব যত বাড়বে, তত এমন প্রাণহানির ঘটতে থাকবে। এভাবে এক সময় বিলুপ্তও হয়ে যাবে ‘ফরেস্ট ইঞ্জিনিয়ার’ নামে পরিচিত বিশালদেহী হাতি।

সর্বশেষ খবর