শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

পরিকল্পনায়ই গেল সাত বছর

মাহবুব মমতাজী, কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) থেকে ফিরে

পরিকল্পনায়ই গেল সাত বছর

মাস্টার প্ল্যান জটিলতায় সাত বছর ধরে আটকে আছে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার উন্নয়ন কার্যক্রম। এতে করে বছরের পর বছর জমি কেনাবেচা বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।  ফলে ভূমি রেজিস্ট্রেশন কমে যাওয়ায় অপার সম্ভাবনার কুয়াকাটায় সরকারও হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।  

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ জনপদের আকর্ষণীয় সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটাকে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করতে সরকার ২০১২ সালে পরিকল্পিত উন্নয়ন ও পর্যটন মাস্টার প্ল্যান হাতে নেয়। এটি বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয় ২০৩০ সাল পর্যন্ত। এজন্য গঠন করা হয় ‘কুয়াকাটা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ’। মাস্টার প্ল্যানের আওতায় কুয়াকাটার একাধিক পর্যটন জোন নির্মাণ, বেড়িবাঁধের বাইরে সামাজিক বনায়ন, পর্যটকবান্ধব ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম, ওয়াচ টাওয়ার, কুয়াকাটা-ট্যাঙ্গরাগিরি ক্যাবল রেললাইন, আন্তর্জাতিক মানের হোটেল, এয়ারপোর্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এসব বাস্তবায়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কুয়াকাটার জমিজমা ক্রয়-বিক্রয় ও স্থাপনা নির্মাণের জন্য পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের অনুমোদনের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়। ২০১৪ সালে কুয়াকাটার মাস্টার প্ল্যানের বহু প্রতীক্ষিত প্রজ্ঞাপন প্রকাশিত হলেও ক্রয়-বিক্রয় ও স্থাপনা নির্মাণের জন্য পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের পরিবর্তে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের দফতর থেকে অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে কুয়াকাটার ৪টি মৌজার হাজার হাজার শতাংশ ভূমি দীর্ঘ ৭ বছর ধরে বিক্রি বন্ধ রয়েছে। এতে কুয়াকাটায় বিনিয়োগও কমে গেছে। জমি ব্যবসায়ী, হোটেল মোটেল নির্মাণে আগ্রহীরা হয়রানির ভয়ে বিনিয়োগ করছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানান, মাস্টার প্ল্যানে অনেক স্থাপনা আছে যেগুলো ভাঙা পড়বে। যে কারণে বনায়ন ছাড়া মাস্টারপ্ল্যানের কোনো কিছুই আলোর মুখ দেখেনি। আবার মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন না হওয়ায় অনেক কোম্পানির কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে। বড় বড় বিনিয়োগকারীরাও এখান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। জিরো পয়েন্ট, জাতীয় উদ্যান, কুয়াকাটার কুয়া, শুঁটকিপল্লী, কাউয়ার চর, সোনারচর, লেবুর চর, ঝাউবন, ঝিনুক বিচ, কুয়াকাটা বৌদ্ধমন্দির ও রাখাইন তাঁতিপল্লী ঘুরে জানা যায়, পরিকল্পিত উন্নতমানের কোনো ভবন, স্থাপনা কিংবা হোটেল নির্মাণ বন্ধ রয়েছে কুয়াকাটায়। এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি কোনো বহুতল ভবন। পুরো এলাকা ঘুরে দেখতে কাঁচা-পাকা ভাঙা অনেক রাস্তা পাড়ি দিতে হয়। পৌরসভা হলেও পুরো এলাকা অপরিচ্ছন্ন অগোছালো। অনেক বাসা-বাড়ি সংস্কার করে বানানো হয়েছে আবাসিক হোটেল। রাত যাপনে স্বাচ্ছন্দ্য না থাকায় অনেক পর্যটক সেখানে যেতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। হোটেল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নানা প্রতারণার অভিযোগ আনেন সাধারণ পর্যটকরাও। এমনকি হোটেল ব্যবস্থাপনায় প্রশিক্ষণ না থাকায় পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাও পান না অতিথিরা। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার (টোয়াক) প্রেসিডেন্ট রুমান ইমতিয়াজ তুষার জানান, প্রশাসনিক জটিলতার কারণে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কুয়াকাটায় বিশ্বমানের উন্নয়ন হচ্ছে না। নানা জটিলতার কারণে অর্থনৈতিকভাবে বিপুল সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন এলাকার উদ্যোক্তারা হতাশার মধ্যে আছেন। সরে যাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এ পর্যটন কেন্দ্রকে আন্তর্জাতিক মানের করার জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তবে পদ্মা সেতু চালু হলে কুয়াকাটায় পর্যটকদের যাতায়াত বেড়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। কথা হয় সি বিচের মাহবুব সিকদার নামে এক মোটরবাইকারের সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, সি বিচ ঘুরে দেখানোর জন্য অন্তত ৭শ মোটরসাইকেল চলাচল করে। প্রত্যেক মোটরবাইকার দিনে প্রায় ১ হাজার টাকা করে আয় করেন। এদের বেশিরভাগই পর্যটকদের সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নেন। ১৪টি স্পট ঘুরে দেখানোর কথা বলে প্রতিজন পর্যটকের কাছ থেকে ৭ থেকে ৮শ টাকা করে আদায় করেন। অথচ ৬টিই স্পটই জিরো পয়েন্টের আশপাশে পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখা যায়। আর সন্ধ্যা নামলেই বাড়ে আড্ডা, তাতে মেতে ওঠেন এই মোটরবাইকাররা। কারও ওপরই প্রশাসনের তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে মাস্টার প্ল্যান সম্পর্কে বাস্তব চিত্রের ঠিক উল্টোটাই বলছেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মতিউল ইসলাম চৌধুরী। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, মাস্টার প্ল্যান গেজেট আকারে প্রকাশ হয়েছে। এটি শতভাগ বাস্তবায়ন হচ্ছে। আর যে কোনো বিষয় অনুমোদনের ক্ষেত্রে আমরা মাস্টার প্ল্যানকে অনুসরণ করি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর