২২ ডিসেম্বর দুপুর পৌনে ২টা। বিআরটিএর উত্তরা কেন্দ্রে ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফিল্ড টেস্ট নিচ্ছিলেন দায়িত্বপ্রাপ্ত মোটরযান পরিদর্শক। খানাখন্দে ভরা মাঠের মাত্র কয়েক ফুট জায়গায়ই নেওয়া হচ্ছিল লাইসেন্সের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ পরীক্ষাটি। এ সময় দুর্ভোগ পোহানোর কথা জানিয়েছেন পরীক্ষা দিতে আসা অনেকেই। শুধু লাইসেন্স ইস্যু নয়, ভাড়া বাড়ি আর অন্যের জমিতে চলা বিআরটিএর এ কেন্দ্রে সমস্যার শেষ নেই। রবিবার কয়েক ঘণ্টা বিআরটিএর এই কার্যালয় (ঢাকা মেট্রো সার্কেল-৩) ঘুরে এমনটাই দেখেছে বাংলাদেশ প্রতিদিন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এ কার্যালয়ে প্রতিদিন দেড়-দুই হাজার মানুষ আসেন ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস সনদ ও নতুন গাড়ির নিবন্ধন বা মালিকানা বদলির সেবা নিতে। বিদ্যুতের বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সেবাগ্রহীতাদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। একটিমাত্র ব্যাংকের শাখা থাকায় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিতে হয়। এ ছাড়া কোনো সীমানাপ্রাচীর না থাকায় মালিক ও চালকরা থাকেন গাড়ি চুরির আতঙ্কে। গাড়ির নম্বরপ্লেট লাগানোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় রাস্তার ওপর লাইন করে নম্বরপ্লেট লাগানো হয়। অতিরিক্ত রোদ বা বৃষ্টিতে গ্রাহকদের দাঁড়ানোর মতো কোনো জায়গা নেই এখানে। গ্রাহকদের দু-একজন দুর্ব্যবহারেরও শিকার হন। সেবাগ্রহীতাদের কেউ কেউ আবার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানিয়েছেন, সমস্যা থাকলেও ঢাকার অন্য দুই কেন্দ্রের চেয়ে এখানেই সহজে কাক্সিক্ষত সেবা পাওয়া যায়।
রাজধানীর উত্তরায় দিয়াবাড়ীতে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ঢাকা মেট্রো সার্কেল-৩-এর কার্যালয়টি চালু হলেও নিজস্ব ভবন হয়নি আজও। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর উত্তরা কেন্দ্রের সহকারী পরিচালক মো. শহিদুল আযম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভবন ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে জমি নেওয়া হয়েছে। নিজস্ব ভবনে যাওয়ার পরই এ কার্যালয়ে আসা সাধারণ মানুষের কষ্ট কমবে।’ নিজস্ব জমিতে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের সুবিধা নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।এআরওর টেবিলেই আটকে থাকে রেজিস্ট্রেশন-ট্রান্সফার : বিআরটিএর উত্তরা কেন্দ্রের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (রেজিস্ট্রেশন ও মালিকানা বদলি) আবদুস সালাম আট ঘণ্টার অফিস সময়ের প্রায় চার ঘণ্টাই বাইরে কাটান বলে অভিযোগ। ২২ ডিসেম্বর সরেজমিনে ওই কার্যালয়ে গিয়েও এমন চিত্র দেখা গেছে। ওই দিন দুই দফায় তিন ঘণ্টারও বেশি সময় তিনি অফিসে অনুপস্থিত ছিলেন। এতে ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে সেবাগ্রহীতাদের। ভিড় জমে ছিল তার টেবিলের সামনে। কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেন তিনি। কেউ কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করলেই রেগে যান। এর আগে তার বিরুদ্ধে একাধিকবার দুর্ব্যবহারের অভিযোগে বিভাগীয় তদন্তও হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আবদুস সালাম বিআরটিএ কার্যালয়ের পাশে দিয়াবাড়ীতেই ছয় কাঠা জমিতে নিজের বাড়ি নির্মাণ করছেন। অফিস সময়েই তিনি চলে যান বাড়ির নির্মাণকাজ দেখতে। তবে নিজের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুস সালাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এসব অভিযোগ সঠিক নয়। আর আমি যদি খারাপ ব্যবহারই করতাম তাহলে এত দিন চাকরি করতে পারতাম না।’
ফিটনেস শাখায় হঠাৎ চাপ বেড়েছে : নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের আদেশ জারির পর থেকে বিআরটিএর ঢাকা মেট্রো অঞ্চলের তিনটি কেন্দ্রেই ফিটনেস সনদ শাখায় চাপ বেড়েছে। এর মধ্যে অন্য কেন্দ্রগুলোর তুলনায় উত্তরা কেন্দ্রের যোগাযোগব্যবস্থা ভালো থাকায় হঠাৎ করেই চাপ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মাত্র দুজন মোটরযান পরিদর্শক দিয়ে চলছে এ কেন্দ্রের ফিটনেস সনদ দেওয়ার কার্যক্রম। ২২ ডিসেম্বর এ কার্যালয় থেকে ১ হাজার ৭৪টি গাড়িকে ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়েছে। বিআরটিএর ঢাকা মেট্রো সার্কেল-৩-এর ফিটনেস শাখার দায়িত্বে থাকা সহকারী পরিচালক শেখ মো. ইমরান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ফিটনেস সনদ সিস্টেমটি অনলাইন হওয়ায় আমাদের এখানে চাপ বেড়েছে। আমাদের পরিদর্শকরা কোনো কোনো দিন রাত ৯টা পর্যন্তও কাজ করেন।’
লাইসেন্স পেতেও ভিড় বেড়েছে : ২২ ডিসেম্বর বিআরটিএর উত্তরা কেন্দ্রে ৪৩৪ জন ড্রাইভিং লাইসেন্স গ্রহীতা পরীক্ষা দিয়েছেন। এদিন ২২৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। এখানকার একজন মোটরযান পরিদর্শক জানান, আগে ১৮০ থেকে ২০০ জনের মতো পরীক্ষার্থী আসতেন প্রতিদিন। তবে নতুন সড়ক পরিবহন আইন হওয়ার পর চাপ বেড়েছে। লাইসেন্স শাখার সহকারী পরিচালক এস এম মাহফুজুর রশীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে জায়গাস্বল্পতার কারণে কিছু সমস্যা থাকলেও নাগরিকদের সেবা তো দিতেই হবে। যিনি এ অফিসে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন, তাকে লাইসেন্স দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়াই আমাদের কাজ। সব সমস্যা সঙ্গে নিয়েই আমরা আমাদের কাজ করে যাচ্ছি।’