শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আগুনে কেড়ে নিল বস্তিবাসীর শেষ সম্বল

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর কালশীতে ভয়াবহ আগুন কেড়ে নিয়েছে বাউনিয়াবাঁধ বস্তিবাসীর শেষ সম্বল। সর্বস্ব হারানো শত শত মানুষ তীব্র শীতের মধ্যেও খোলা আকাশের নিচে দিন কাটান। গতকাল পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি তারা। 

বাবা-মার সঙ্গে ধ্বংসস্তূপ থেকে নিজেদের পুড়ে যাওয়া জিনিস খুঁজছিল পাঁচ বছরের শিশু জুম্মান। দেখলে মনে হবে আগুনে সব হারানো জুম্মান আর তার পরিবারের অসহায়ত্বের কাছে ডিসেম্বরের এ তীব্র শীতও যেন হার মেনেছে।

জুম্মানদের মতো একই অবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত বাকি বস্তিবাসীরও। শরীরের সব গরম কাপড় আগুনে পুড়ে যাওয়া হাড় কাঁপানো শীতে বস্তির সামনে অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন তারা। এক রাতের ব্যবধানেই খোলা আকাশের নিচে ঠাঁই হয়েছে হতভাগ্য এসব মানুষের।

অগ্নিকান্ডের পর গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন স্থানীয় এমপি ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ। এরপর পরিদর্শনে যান ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের খাবার, শীতবস্ত্রসহ সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে। বাউনিয়াবাঁধ বস্তির সব হারানোদের একজন জেবুন্নেসা। পরিবারের ৮ জনকে নিয়ে সাত বছর ধরে বাস করতেন এই বস্তিতে। আগুনে পুড়েছে তার ঘর, পুড়েছে ভবিষ্যৎ। গতকাল সকালে তাকে ওই পোড়া ঘরেই কিছু খুঁজতে দেখা যায়। যদি কিছু মেলে। তিনি বললেন, পোড়া ঘরে কিছুই নেই। একটা কাপড় যে পরবেন সেটিও নেই। অন্যদিকে ভাঙারি দোকানের সামান্য আয়ে চলত সেলিম মিয়ার সংসার। এখন তার বেঁচে থাকার শেষ সম্বলটুকুও শেষ। সব পুড়ে শেষ, কোনো কিছুই রক্ষা করতে পারেননি তিনি। অগ্নিকান্ডে অনেকের অক্ষত মালামাল চুরি যায় বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। এই বস্তিতে প্রায় ৮০টি দোকানসহ তিন শতাধিক ঘর ছিল। এগুলোর বেশির ভাগই কাঠের টং ঘর, আর কিছু টিনের ঘর। প্রত্যক্ষদর্শী ভুক্তভোগীরা জানান, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টায় দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে বাউনিয়াবাঁধের এ বস্তি। মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো বস্তিতে। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে বস্তিবাসী দৌড়ে বেরিয়ে আসেন। খবর পেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। ১১টি ইউনিটের প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও এরই মধ্যে পুড়ে যায় বস্তির দুই শতাধিক ঘর। 

ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা রাসেল শিকদার জানান, বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকে বস্তিতে আগুন লাগে। এরপর আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তবে ধোঁয়ায় এক ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। আর আগুন লাগার পরই বস্তিবাসী দৌড়ে বেরিয়ে আসেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোস্তাক আহমেদ জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে পুলিশও ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। তারা ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করে। আগুনে বস্তিবাসীর দুটি গরু পুড়ে মারা গেছে।

এই অগ্নিকান্ডের পরপরই হাজারীবাগে একটি প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে রাত আড়াইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, হাজারীবাগের লোহারপুল সংলগ্ন প্লাস্টিকের বোতল তৈরির একটি কারখানায় আগুনের সূত্রপাত। এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ খবর