শিরোনাম
রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

তোবারক খুনের পরিকল্পনা হয় সাত মাস আগে

জড়িত আটজন শনাক্ত

মাহবুব মমতাজী

রাজধানীর নিকেতনে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী তোবারক হোসেন হত্যাকান্ডে আটজনকে শনাক্ত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জেরে এ হত্যাকা- ঘটেছে বলে জানতে পেরেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। আর খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল প্রায় সাত মাস আগে।

এর মধ্যে শুক্রবার রাতে বিভিন্ন স্থান থেকে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। আজ রবিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে এ-সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিবি পুলিশের পশ্চিম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহাদাত হোসেন। 

গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন গোলাম রাব্বী (২৪), বাবুল প্রধান বাবু (২৮), ইমন হোসেন (২০), আল আমিন খন্দকার  (২১) ও হৃদয় মিয়াজি (২১)।

ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, তোবারক হোসেনের শাহীন নামে একজন কর্মচারী ছিলেন। আর্থিক অসদুপায় অবলম্বনের জন্য তোবারক তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে দুই-তিন বছর আগে শাহীনকে বের করে দেন। আর শাহীন জানতেন, তোবারকের ফ্ল্যাটে সব সময় মোটা অঙ্কের নগদ টাকা থাকে। তোবারকের ওই ফ্ল্যাটে শাহীন তার বন্ধু নজরুল ও সোহেল প্রধানকে নিয়ে প্রায় সাত মাস আগে ডাকাতির পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গোলাম রাব্বী, বাবুল প্রধান, ইমন হোসেন, আল আমিন খন্দকার ও হৃদয় মিয়াজিকে সঙ্গে নিয়ে শাহীন ওই ফ্ল্যাটে যান। তোবারকের ফ্ল্যাটে একজন কেয়ারটেকার থাকেন এটিও তারা আগেই জেনেছিলেন। শাহীন কৌশলে ইমনকে প্রায় ১৫ বছর আগে মারা যাওয়া তোবারকের সাবেক কেয়ারটেকার মোহাম্মদ আলীর ছেলে বানান। ইমনের সাজানো নাম দেওয়া হয় হাসান। ১৭ ডিসেম্বর ওই বাসায় কাজের উদ্দেশ্যে ইমনকে পাঠান শাহীন। মোহাম্মদ আলীর ছেলে জেনে কাজের জন্য বাসায় ইমনকে রেখে দেন তোবারক। কয়েক দিনে তোবারকের দৈনন্দিন কাজের রুটিন জেনে নেন ইমন। ইমন লক্ষ করেন, ওই ভবনের দারোয়ান প্রতিদিন ফজরের নামাজের সময় দরজা খুলে রেখে নামাজ পড়তে যান। রাব্বী, বাবু, হৃদয় ও শিহাব ঘটনার আগের দিন চকবাজার থেকে ছয়টি ছুরি কেনেন। এরপর তারা স্কচটেপ ও দড়ি সংগ্রহ করেন। সন্ধ্যায় আলমারি ভাঙার জন্য বাবু ও শিহাব মহাখালী থেকে একটি শাবলও কিনে আনেন। এরপর শাহীন রাতেই তোবারককে চিনিয়ে দেন সহযোগীদের। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা নর্দায় ইমন ও রিমনের মেস বাসায় অবস্থান করেন। পর দিন ফজরের আজানের সময় তারা নিকেতনে পৌঁছান। বাসার দারোয়ান নামাজে চলে গেলে তারা ভবনের চতুর্থ তলায় ওই বাসায় গিয়ে ইমনের কক্ষে অবস্থান নেন। শাহীন ও সোহেল ভবনের বাইরে রাস্তায় অবস্থান করতে থাকেন। ইমনসহ বাইরে থেকে যাওয়া পাঁচজন শয়নকক্ষে গিয়ে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তোবারক ও তার সহকারী সাইফুলকে বিছানার ওপরই চেপে ধরেন।

 ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনের হাত-পা দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলেন এবং চোখে ও মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেন দুর্বৃত্তরা। এর পর ছুরি দিয়ে আঘাত করেন তাদের। এতে তোবারক নিস্তেজ হয়ে যান। আহত সাইফুলকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে রেখে আলমারি ভাঙা শুরু করেন তারা। আলমারিতে থাকা নগদ টাকা লুট করে তারা পালিয়ে যান। এরপর ইমন ও রিমনের মেস বাসায় গিয়ে টাকা ভাগ করেন এবং সবাই ঢাকার বাইরে চলে যান।

বুধবার রাজধানীর নিকেতনে নিজ বাসায় খুন হন ব্যবসায়ী তোবারক। এর পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পালক ছেলে সাইফুল ও বাসার নিরাপত্তারক্ষীসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। তোবারক হোসেনের মহাখালীতে মামা মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর