মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সাগরে আসছে ইয়াবা

দুর্বৃত্তদের হাতে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম আর স্যাটেলাইট ফোন

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

সাগরে আসছে ইয়াবা

নৌপথেই সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে মরণ নেশা ইয়াবা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়াতে পাচারকারী চক্রের হোতারা সাগরপথেই তৈরি করছেন নিত্যনতুন ‘ইয়াবার রুট’। শুধু তাই নয়, গভীর সমুদ্রে তারা যাতে পথভ্রষ্ট না হয় সেজন্য ব্যবহার করছে ‘গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিআরএস)’। পাচারকারীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করছে স্যাটেলাইট ফোন! বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানে এমন তথ্য মিলেছে।

চট্টগ্রাম মেট্রো মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, ‘সড়কপথে কড়াকড়ি চলছে, তাই পাচারকারীরা এখন নৌপথকে নিরাপদ মনে করছে। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চালানগুলো নৌপথেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছে। কিন্তুসাগরে অভিযান চালানোর মতো প্রয়োজনীয় সাপোর্ট আমাদের নেই। তাই আমরা চাইলেও সাগরে অভিযান পরিচালনা করতে পারি না। অপ্রতুল সাপোর্ট নিয়ে এরই মধ্যে অনেক অভিযান চালানো হয়েছে। এতে সফলও হয় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।’

অনুসন্ধানে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবার চালান সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে এখন মাদক ব্যবসায়ীরা সাগরকেই নিরাপদ মনে করছেন। তাই নৌপথ ব্যবহার করেই সারা দেশে পাচার করা হচ্ছে ইয়াবা। সাগর দিয়ে মাদক পাচারকারী চক্রের হোতারা ব্যবহার করছেন অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি। তারা নির্ধারিত স্থানে পৌঁছাতে যাতে পথভ্রষ্ট না হন সেজন্য ব্যবহার করেন অত্যাধুনিক জিপিআরএস। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে খুব সহজেই টেকনাফের সেন্ট মার্টিন এলাকা থেকে নৌপথে দেশের অন্যান্য উপকূলীয় এলাকায় নির্ভুলভাবে ইয়াবার চালান পৌঁছানো যাচ্ছে। সাগরে ‘মাল’ আনা-নেওয়ার সময় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখতে ব্যবহার করেন স্যাটেলাইট ফোন। পরিবহনের জন্য ব্যবহার করেন হাইস্পিড বোট। মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান সেন্ট মার্টিন এলাকায় প্রবেশের পর হাইস্পিড বোটে তুলে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য কিংব সোর্সদের বিভ্রান্ত করতে মাঝে আরেকটা বোট পরিবর্তন করা হয়। এ বোট দিয়েই নিয়ে যাওয়া হয় নির্ধারিত গন্তব্যে। এরই মধ্যে ইয়াবা পাচারের কয়েকটি নৌরুটের সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব রুটে সেন্ট মার্টিন এলাকা থেকে নিয়মিত ইয়াবার চালান যায়। যার মধ্যে রয়েছে সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জ, পটুয়াখালী, কুয়াকাটা, বরিশাল, বরগুনা, চাঁদপুর, সাতক্ষীরা, কুয়াকাটা, চট্টগ্রামের ফিশারিঘাট, সন্দ্বীপ, আনোয়ারা ও সীতাকুন্ড উপকূলীয় এলাকা। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘মাদক ব্যবসায়ীরা এখন অনেক অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। তাদের প্রযুক্তির ব্যবহার দেখে অনেকটা অবাক হতে হচ্ছে। কয়েকটি ঘটনায় দেখা গেছে, সোর্সের দেওয়া তথ্যানুযায়ী সাগরে ইয়াবাবোঝাই বোট পাওয়া যায়। ওই বোটকে ধাওয়া দিলেও তাদের গতির কাছে হার মানতে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর