মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
ফিরে দেখা ২০১৯

শেয়ারবাজারে বিপর্যয়ের বছর

আলী রিয়াজ

শেয়ারবাজারে বিপর্যয়ের বছর

সূচক, শেয়ার দর, মূলধন কমে দেশের শেয়ারবাজার এখন গভীর খাদে। চরম বিপর্যস্ত শেয়ারবাজারে গত এক বছরে মূলধন কমেছে ৫৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ সময় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক প্রায় ১১০০ পয়েন্ট নেমে গেছে। মন্দায় মূলধন হারিয়ে বাজার ছেড়ে গেছেন দুই লাখ বিনিয়োগকারী। ব্রোকারহাউস, কোম্পানির পরিচালকরা মিলে কারসাজির সিন্ডিকেট আরও পোক্ত হয়েছে। ভুয়া আর্থিক প্রতিবেদন, মিথ্যা তথ্য, গুজব ছড়িয়ে শেয়ারের দর নিয়ন্ত্রণ করে সিন্ডিকেটের পকেটে গেছে কোটি কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে আস্থা আসতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ ছিল না বিদায়ী বছরে। আস্থার সংকট কাটানো সম্ভব হয়নি। কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ফলে ২০১০ সালে ভয়াবহ দরপতনে পুঁজি হারানো লাখ লাখ সাধারণ বিনিয়োগকারী কিছুই পায়নি। বরং তারা নতুন করে মূলধন হারিয়েছেন। শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদের জন্য চরম হতাশার বছর গিয়েছে ২০১৯। বছরের শুরুতে বাজার পরিস্থিতি তুলনামূলক ঊর্ধ্বমুখী ছিল। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ডিএসইর সূচক ৫ হাজার ৪৬৫ পয়েন্ট দিয়ে শুরু হয়। ওই মাসেই সূচক প্রায় ৬ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি যায়। এরপরে জুন পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ হাজারের ঘরে ছিল সূচক। অক্টোবর থেকে সূচকের পতন শুরু হয়। ডিসেম্বরে এসে সাড়ে চার হাজার পয়েন্ট থেকে নামতে নামতে এখন ডিএসইএক্স পয়েন্ট দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪৩৩। শেয়ার দর কমতে থাকায় ডিএসই বাজার মূলধন কমেছে ৫৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। বছরের শুরুতে ডিএসইর মোট বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকা। বছরের শেষে এসে তিন লাখ ৩৮ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের কেনা শেয়ার মূল্য থেকেই কমেছে এই অর্থ। বাজারের এমন চরম দৈন্য-দশায় বছর জুড়েই ছিল ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ। মতিঝিলের রাস্তায় নেমে প্রতিদিনই বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন ক্রমেই নিঃস্ব হওয়া বিনিয়োগকারীরা। পুঁজি হারিয়ে দুই লাখের বেশি বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছেড়ে গেছেন এ বছর। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীর বেনিফিসিয়ারি অ্যাকাউন্ট (বিও) ছিল ২৭ লাখ ৭৯ হাজার। সর্বশেষ তা আছে ২৫ লাখ ৭৮ হাজার। অর্থাৎ কেউ আস্থা পাচ্ছে না বাজারে বিনিয়োগ ধরে রাখতে। গত দুই মাসে বাজার যেভাবে পড়েছে তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এদিকে বাজার স্থিতিশীলতায় কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজার স্থিতিশীলতার জন্য দরকার বৃহৎ মূলধনী কোম্পানি বাজারে নিয়ে আসা। বর্তমানে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বন্ধ থাকায় শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহে এক প্রকার ধস নেমেছে। বিদায়ী ২০১৯ সালে আইপিও ও রাইট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর অর্থ সংগ্রহের পরিমাণ ১১ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে ছিল। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৯ সালে আইপিও ও রাইট শেয়ার ইস্যু করে পুঁজিবাজার থেকে ৬৪১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে এ দুই মাধ্যমে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হয় ৬৫৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বর্তমান কমিশনের অনুমোদন দেওয়া প্রায় অর্ধশতাধিক কোম্পানির শেয়ারের দাম ইস্যু মূল্য অথবা ফেসভ্যালুর নিচে নেমে গেছে। আইপিওতে আসা কোম্পানিগুলোর এমন করুণ অবস্থার কারণে সমালোচনার মুখে পড়ে কমিশন।

নতুন বছরে নতুন সূচক ডিএসইতে : ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) নতুন বছরে নতুন সূচক চালু করবে। কৌশলগত বিনিয়োগকারী, শেনঝেন ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জের সমন্বয়ে চীনের কনসোর্টিয়ামের ব্যবসায়িক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে আকারভিত্তিক তিনটি (বৃহৎ, মধ্যম ও স্বল্প মূলধনি কোম্পানির সমন্বয়ে) নতুন সূচক চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা যাতে বৃহৎ, মধ্যম ও স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোর মূল্যের হ্রাস বৃদ্ধি এক নজরে বুঝতে পারেন সেজন্য এই সূচক চালু করা হবে। গতকাল বৃহৎ বাজার মূলধনের কোম্পানিগুলোকে নিয়ে CNI-DSE Select Index (“CDSET”) এর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।

 ডিএসইর শেয়ারহোল্ডারদের উপস্থিতিতে সূচকটি উদ্বোধন করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হাশেম। এ ছাড়াও কৌশলগত বিনিয়োগকারীর মনোনীত পরিচালক শিয়ে ওয়েনহাই এবং শেনঝেন সিকিউরিটিজ ইনফরমেশন কোম্পানি লি. জেনারেল ভাইস ম্যানেজার শিং জিং পিং উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর