বুধবার, ১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

এবার চোখ পঞ্চম সমুদ্রবন্দরে

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

এবার চোখ পঞ্চম সমুদ্রবন্দরে

চট্টগ্রাম, মোংলা, পায়রা ও মাতারবাড়ীর পর এবার মিরসরাইয়ে দেশের পঞ্চম সমুদ্রবন্দর নির্মাণে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। চট্টগ্রামের মিরসরাই, ফেনী ও সীতাকু-  এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা দেশের বৃহত্তম শিল্পাঞ্চল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরকে ঘিরে এ বন্দরটি হবে। কয়েক বছর ধরে এই শিল্পনগর ঘিরে একটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা চলছে সরকারের মধ্যে। আলোচনার টেবিল থেকে এবার বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর মাস্টারপ্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে প্রস্তাবিত এই সমুদ্রবন্দর। সূত্রগুলো জানায়, ২০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) গভর্নিং বডির সভা হয়। ওই সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের মাস্টারপ্ল্যান বিষয়ে আলোচনায় মিরসরাইয়ে একটি সমুদ্রবন্দর গড়ে তোলার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি প্রস্তাবিত বন্দরের কাজ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দেন। সূত্রগুলো জানায়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ওই সভার যে কার্যবিবরণী পাঠানো হয়েছে, সেখানেও মিরসরাই সমুদ্রবন্দরের নির্মাণকাজ ত্বরান্বিত করার বিষয়টি পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বেজার কর্মকর্তারা জানান, এই সমুদ্রবন্দর নির্মাণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সমন্বয়ে গঠিত শিল্পজোটের (কনসোর্টিয়াম) সঙ্গে চুক্তি করেছে বেজা। জাপানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সজিত করপোরেশন, বাংলাদেশের এনার্জিপ্যাক এবং জাপান ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট সম্মিলিতভাবে বন্দর স্থাপনের এই কনসোর্টিয়ামে রয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ওই কনসোর্টিয়াম ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে প্রস্তাবিত বন্দরটি এমনভাবে গড়ে তুলবে, যেখানে ৪০ হাজার টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ ভিড়তে পারবে। সম্ভাব্যতা যাচাই করে ৪০ মাসের মধ্যে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরুর কথা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আনুমানিক ৫০০ মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে বলে কনসোর্টিয়ামের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বেজা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৩০ হাজার একর জমি নিয়ে গড়ে তোলা এই শিল্পনগরে এরই মধ্যে ভূমি ইজারা পেয়েছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এ অঞ্চলে দেশি-বিদেশি শিল্পোদ্যোক্তাদের ৮৩ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। সেখানে প্রায় দুই হাজার একর জমিতে বিনিয়োগ করতে চায় বসুন্ধরা, পিএইচপি, কেএসআরএম, বিএসআরএম, ঝেজিয়াং, কুনমিংসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বড় শিল্প গ্রুপ। এসব শিল্প গ্রুপের কারখানা থেকে যেসব পণ্য উৎপাদিত হবে, সেগুলো দেশ-বিদেশে রপ্তানির জন্য কাছাকাছি একটি সমুদ্রবন্দর দরকার। সূত্রগুলো জানায়, শিল্পনগর ঘিরে জেটি উন্নয়নের ফলে ভারী মালামাল আমদানির গতিশীলতা সহজতর হবে, যা চট্টগ্রাম বন্দরে মাল খালাসে দীর্ঘ সময়ের সংকট কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। শিল্পপার্ক এবং জেটি স্থাপনের ফলে এলপিজি, এলএনজি এবং এইচএফও স্টোরেজ সুবিধার পথও সুগম হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন সচিব মো. আবদুস সামাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর ঘিরে প্রাথমিকভাবে সমুদ্র উপকূলে ওয়াটার ফ্রন্ট জেটি গড়ে তোলার প্রস্তাব দিয়েছে জাপানি কোম্পানি। তারা জানিয়েছে, এটি পরে বন্দরে রূপ নেবে। বন্দর জেটি নির্মাণের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে (চবক)। জানা গেছে, দেশের বৃহত্তম এই শিল্পনগর ঘিরে বন্দর গড়ে তোলার বিষয়ে ইতিবাচক মতামত দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন পাঠিয়েছে চবক। প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, এ চাপ হ্রাস করার জন্য হলেও মিরসরাই এলাকায় সমুদ্র উপকূলে নতুন আরেকটি বন্দর নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
সম্ভাব্য বন্দরের যোগাযোগ সুবিধা সম্পর্কে বলা হয়, প্রস্তাবিত বন্দর এলাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনবিশিষ্ট মহাসড়কের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে থাকায় যোগাযোগ খুবই সহজ হবে। এ ছাড়া মহাসড়কের ৫০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ থাকায় সড়ক ও রেলপথে সারা দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ করা যাবে। প্রস্তাবিত এলাকায় বন্দর নির্মাণ করা হলে দেশীয় লাইটারেজ জাহাজ এবং বিদেশি বড় জাহাজ ওই এলাকায় বার্থিং করার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের চাপ কমে যাবে। সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ফলে পুরো এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন এবং কর্মসংস্থানের পথ উন্মুক্ত হবে এবং বেকারত্ব কমে যাবে। চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি প্রস্তাবিত সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্থাপন সহজ হবে।

সর্বশেষ খবর