বুধবার, ১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রাথমিক সমাপনী ইবতেদায়ি ও জেএসসি জেডিসির ফল প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, ইবতেদায়ি সমাপনী এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফল গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। ফলাফলে প্রাথমিক সমাপনীতে গড় পাসের হার ৯৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৮৮ জন খুদে শিক্ষার্থী। প্রাথমিকে ২৪ লাখ ৫৪ হাজার ১৫১ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ২৩ লাখ ৪৩ হাজার ৭৪৩ জন। ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার ৯৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৮৭৭ জন। ইবতেদায়িতে ৩ লাখ ৪ হাজার ১৭৮ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ২ লাখ ৯১ হাজার ৮৭৫ জন উত্তীর্ণ হয়। ফল প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল বেলা ১টায় সংবাদ সম্মেলন করেন গণশিক্ষামন্ত্রী মো. জাকির হোসেন। এ সময় শিক্ষা সচিব মো. আকরাম আল হোসেন ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এফ এম মঞ্জুর কাদির  উপস্থিত ছিলেন। প্রাথমিক সমাপনীতে শতভাগ পাস করা স্কুলের সংখ্যা ৬৭ হাজার ৮৯৩টি। অন্যদিকে ৩৪১টি স্কুলে একজনও পাস করেনি।

গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘আমরা মোটিভেশন করে পাসের হার বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’ জেএসসি-জেডিসির ফল প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পাবলিক পরীক্ষাসহ সমাপনী পরীক্ষাগুলোর ফলাফলে জিপিএ-৫ প্রাপ্তি নিয়ে মাতামাতি না করে শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকশিত করতে সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত। ২০২০ সাল থেকে জেএসসি-জেডিসির ফলাফল জিপিএ-৫-এর পরিবর্তে জিপিএ-৪-এ দেওয়া হতে পারে বলে জানান তিনি।

নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে জেএসসিতে এবার ২২ লাখ ২১ হাজার ৫৯১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৯ লাখ ৪৫ হাজার ৭১৮ জন। পরীক্ষায় পাসের হার ৮৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৬ হাজার ৭৪৭ জন শিক্ষার্থী। গত বছরের চেয়ে ১০ হাজার ৬৩৯ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে জেডিসিতে ৩ লাখ ৮০ হাজার ৪৪২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩ লাখ ৪১ হাজার ৫৫৩ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার ৮৯ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত বছর ৮৯ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। এ বছর জেডিসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৬৮২ জন শিক্ষার্থী। গত বছরের চেয়ে জিপিএ-৫ কমেছে ৩০৫টি। জেডিসিতে পাসের গড় হার গতবারের চেয়ে সামান্য বাড়লেও কমেছে জিপিএ-৫।

গতকাল দুপুরে ফল প্রকাশের পর ভালো ফল করা শিক্ষার্থীরা নেচে-গেয়ে উৎসব করে স্কুলগুলোতে। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে, বাদ্য বাজিয়ে ফলাফল উদ্্যাপন করে তারা। শিক্ষার্থীদের উচ্ছ্বাসে উত্তাল ছিল প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণ। রাজধানীর ডেমরায় সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে শতভাগ পাসসহ জেএসসিতে ৪১৭, প্রাথমিক সমাপনীতে ৮৮৮ জন ও প্রাথমিক ইংলিশ ভার্সনে ৬৪ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, শিক্ষার্থীদের চেষ্টা আর শিক্ষকদের সঠিক দিকনির্দেশনাতেই এমন ভালো ফল।

ছাত্রীরা এগিয়ে : এ বছর জেএসসি-জেডিসিতে ছাত্রের তুলনায় ২ লাখ ১০ হাজার ৪৫৩ জন বেশি ছাত্রী অংশ নিয়েছে। ফলাফলে ছাত্রের তুলনায় ২ লাখ ৫ হাজার ৮৮৭ জন বেশি ছাত্রী পাস করেছে। পাসের হারেও এগিয়ে আছে মেয়েরা। ছেলেদের পাসের হার ৮৭ দশমিক শূন্য ৩। অন্যদিকে ছাত্রীদের পাসের হার ৮৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও এগিয়ে আছে মেয়েরা। ছাত্রদের তুলনায় ১৩ হাজার ৩৩৭ জন ছাত্রী বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে।

পাসের হারে শীর্ষে বরিশাল, নি¤ন্ডেœ ঢাকা : বোর্ডভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে বরিশাল শিক্ষা বোর্ড এবং সর্বনিম্ন পাসের হার ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের। বরিশাল বোর্ডে ৯৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ এবং ঢাকা বোর্ডে ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮২ দশমিক ৯৩, যশোর বোর্ডে ৯১ দশমিক শূন্য ৮, রাজশাহী বোর্ডে ৯৪ দশমিক ১০, কুমিল্লা বোর্ডে ৮৮ দশমিক ৮০, দিনাজপুর বোর্ডে ৮৩ দশমিক ৯২, সিলেট বোর্ডে ৯২ দশমিক ৭৯ এবং প্রথমবারের মতো পরীক্ষা দেওয়া ময়মনসিংহ বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৭ দশমিক ২১ শতাংশ।

ফল পুনর্নিরীক্ষণ : টেলিটক মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে আজ থেকে আগামী ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করা যাবে। এ জন্য RSC লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে বিষয় কোড দিয়ে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। প্রতিটি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা ফি প্রযোজ্য। ২ নভেম্বর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া ১৭ নভেম্বর প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী শুরু হয়ে শেষ হয় ২৪ নভেম্বর।

সর্বশেষ খবর