বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

নারী মাদকাসক্ত সাত বছরে তিনগুণ

জিন্নাতুন নূর

নারী মাদকাসক্ত সাত বছরে তিনগুণ

সরকারি পর্যায়ে চিকিৎসাপ্রাপ্ত মাদকাসক্তদের নিরাময় কেন্দ্রের বহির্বিভাগে আট বছর আগে ২০১১ সালে কোনো নারী মাদকাসক্ত ভর্তি হননি। কিন্তু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী,  ২০১২ সালে ৬২ জন নারী মাদকাসক্ত চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। ২০১৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ১৯ জন, ২০১৪ সালে তা দাঁড়ায় ২৪ জনে। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল তিনজন। ২০১৬ সালে ৪৩ জন। ২০১৭ সালে ২৮ জন। ২০১৮ সালে ৯১ জন আর ২০১৯ সালে মোট ১৭৭ জন নারী মাদকাসক্ত চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। গত সাত বছরে প্রায় তিনগুণ (২.৮৫) নারী মাদকাসক্ত মাদক নিরাময় কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি হাসপাতালগুলোতে নারী মাদকাসক্তদের চিকিৎসার জন্য আলাদা ব্যবস্থা না থাকলেও বিগত কয়েক বছরে নারী মাদকাসক্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন এসব হাসপাতালে নারীদের জন্যও আলাদা বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একসময় বাংলাদেশে নারী মাদকাসক্তদের চিকিৎসার বিষয়টি ‘সুপ্ত’ অবস্থায় থাকলেও এখন পরিবারের সদস্যরাও বিষয়টি আর না লুকিয়ে তাদের চিকিৎসা করাচ্ছেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্যে ঢাকার তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ১২৪টি বেডের মধ্যে বর্তমানে পুরুষদের জন্য ৯০টি, শিশুদের জন্য ১০টি আর নারী মাদকাসক্তদের জন্য ২৪টি বেড রয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারিভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে রাজধানী ঢাকায় ৬০-এর অধিক মাদক নিরাময় কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। সরকারি নিরাময় কেন্দ্রের তুলনায় এসব বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্রে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নারী মাদকাসক্তরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। আবার পারিবারিক ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার ভয়ে অনেক নারীকে তার পরিবার নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছেও না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নারী মাদকাসক্তরা সহজে চিকিৎসা নিতে চান না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাদক গ্রহণের পর শরীর যখন আর সহ্য করতে পারে না এবং মাদকাসক্ত নারীরা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন শুরু করেন তখনই তারা চিকিৎসার জন্য নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হন। কিন্তু পুরুষ মাদকাসক্তদের মতো নারী মাদকাসক্তদের অনেকেই চিকিৎসা শেষে কিছুদিন বিরতির পর আবারও মাদক গ্রহণ শুরু করেন। ঢাকার শ্যামলীর পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটিতে আহছানিয়া মিশনের ফিমেল ড্রাগ ট্রিটমেন্ট অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারটিতে বেসরকারিভাবে নারী মাদকাসক্তদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই সেন্টারের কর্তৃপক্ষ জানান, এখানে রোগীদের জন্য ডরমেটরি,  বেডসহ কেবিন, ক্ল¬াসরুম, কাউন্সিলিং রুম, টিভিরুম, লাইব্রেরিরুমসহ অন্যান্য বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে প্রতিষ্ঠানটির প্রোগ্রাম অফিসার উম্মে জান্নাত বলেন, আমরা নারী মাদকাসক্তদের তিন মাসের চিকিৎসা দেই। এ সময় রোগীদের জন্য ডোপটেস্টসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করাই। আর পরিকল্পনা অনুযায়ী এমনভাবে এসব রোগীর চিকিৎসা হয় যে তিনি সুস্থ হয়ে আর ভুল পথে পা বাড়ান না। ১৬ বছরের মেধাবী ছাত্রী নিরা। ‘ও’ লেভেল পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে ও যুক্ত ছিল সে। কিন্তু সঙ্গ দোষে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে নিরা। মাদকাসক্তির এক পর্যায়ে তৃতীয়বার আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গেলে নিরার পরিবার তাকে আহছানিয়া মিশনের নারী মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি করায়। নিরা অ্যালকোহল ও ঘুমের ওষুধে আসক্ত ছিল। মেয়েটি ছিল তার মা-বাবার একমাত্র আদরের সন্তান। কিন্তু হঠাৎ করে নিরার বাবার মৃত্যু হলে সে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে, সাংস্কৃতিক কর্মকা  থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে এবং মাদক নিতে শুরু করে। আহছানিয়া মিশনে নিরাকে তিন মাস চিকিৎসা নিতে হয়।

সর্বশেষ খবর