বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত সন্তোষজনক নয় ১১ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে

ইউজিসির প্রতিবেদন

আকতারুজ্জামান

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অনুপাত সন্তোষজনক নয়। এতে শিক্ষার মান যথাযথভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না বলেই মনে করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৮-তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি এ প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। চ্যান্সেলরের দায়িত্বে রয়েছেন দেশের রাষ্ট্রপতি। তথ্যমতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০১৮ সালে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৯২ জন। আর শিক্ষক ছিল মোট ১৬ হাজার ৭৪ জন। গড় হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতি শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ২৩ জন। যা সন্তোষজনক বলেই মনে করে ইউজিসি। কিন্তু ১১ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকটিতে এক শিক্ষকের বিপরীতে ৩০ জনের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। এমনকি কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষকের বিপরীতে ৮৫ জন ছাত্র-ছাত্রীও রয়েছে, যা কাম্য নয় বলেই মন্তব্য করেছে ইউজিসি। প্রতি শিক্ষকের বিপরীতে ২৩ জন শিক্ষার্থীকে আদর্শ মান ধরে ইউজিসি বলছে এই ১১ বিশ্ববিদ্যালয়ে আদর্শমানের চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষার্থী পড়ছে উচ্চশিক্ষার এসব বিদ্যাপীঠে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগংয়ে এক শিক্ষকের বিপরীতে ৮৫ শিক্ষার্থী, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ৩১ জন, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটিতে ৩৬ জন, লিডিং ইউনিভার্সিটিতে ৩৬ জন, উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিজন শিক্ষকের বিপরীতে ৩১ জন, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সে এক শিক্ষকের বিপরীতে ৬৬ জন, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে ৩৫ জন, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে প্রতি শিক্ষকের বিপরীতে ৫১ জন, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজিতে (বিইউএফটি) ৩৩ জন, ফার্স্ট ক্যাপিটাল ইউনিভার্সিটিতে ৪৩ জন এবং ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে প্রতি শিক্ষকের বিপরীতে শিক্ষার্থী রয়েছে ৪০ জন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কাক্সিক্ষতমানে শিক্ষক না থাকার ব্যাপারে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত কাক্সিক্ষতমানের না হওয়ার পেছনে কিছু কারণ রয়েছে। শিক্ষক অনুপাতে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা রয়েছে। তবে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে এ নিয়ম মানতে চান না। তারা বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করে। অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে ভাড়া করা শিক্ষক দিয়ে শিক্ষক কার্যক্রম চালায়। কিন্তু এটি ঠিক নয়। শিক্ষক শিক্ষার্থী অনুপাত সন্তোষজনক না হলে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। এসব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার জন্য ইউজিসির পক্ষ থেকে চাপ প্রয়োগ করা হবে। শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলেও মত দেন ইউজিসি চেয়ারম্যান। শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা বলছেন, কাক্সিক্ষত অনুপাতে শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেকক্ষেত্রেই পাঠদান যথাযথভাবে সম্ভব হয় না। পড়াশোনার যথাযথ পরিবেশেরও অভাব ঘটে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এ ছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পূর্ণকালীন শিক্ষক ছিল ১১ হাজার ৭২২ জন। খ-কালীন শিক্ষক ছিল ৪ হাজার ৩৫২ জন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট শিক্ষকের ৭২ দশমিক ৯৩ শতাংশ পূর্ণকালীন এবং ২৭ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ খ-কালীন ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী খ-কালীন শিক্ষকের সংখ্যা পূর্ণকালীন শিক্ষকের এক তৃতীয়াংশের বেশি হবে না। এ নীতি অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকের ক্ষেত্রে পূর্ণকালীন ও খ-কালীন শিক্ষকের অনুপাতও সন্তোষজনক নয়।

সর্বশেষ খবর