শুক্রবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

চোরাচালান রোধে বিমানবন্দরে মোতায়েন হচ্ছে ডগ স্কোয়াড

মাহবুব মমতাজী

চোরাচালান রোধে বিমানবন্দরে মোতায়েন হচ্ছে ডগ স্কোয়াড

বিমানবন্দরে চোরাচালান রোধে ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করতে যাচ্ছে সরকার। বিদেশে যাওয়া শ্রমিকদের মাধ্যমে কাতার কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মাদক পাচারের ঘটনায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। মাদক পাচারের অভিযোগে কাতারের কারাগারে অন্তত ৫২ জন বাংলাদেশি শ্রমিক বন্দী আছেন বলে জানা গেছে।

১৪ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে বাংলাদেশি কর্মীদের মাদক-সম্পৃক্ততার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কিত কমিটির প্রথম সভায় ডগ স্কোয়াড মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সুরক্ষা বিভাগের (মাদক অনুবিভাগ) অতিরিক্ত সচিব ড. তরুণ কান্তি শিকদার। একই সঙ্গে বিদেশে যাওয়া বাংলাদেশি কর্মীদের ডোপ টেস্ট করানোর বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিমানবন্দরগুলোতে অত্যাধুনিক স্ক্যানার স্থাপন, স্ক্যানিংয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করা এবং কাস্টমস কর্মকর্তাদের আরও সতর্ক থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বেবিচক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানা গেছে। 

২ ডিসেম্বর ওই সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো জানাতে সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব মুহাম্মদ আবদুর রউফ মিয়া স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ১৫টি সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

তবে মাদক-সম্পৃক্ততার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কিত কমিটির প্রথম সভার কার্যবিবরণীর একটি কপি এ প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে।

সভায় ড. তরুণ কান্তি শিকদার জানান, কাতার বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষস্থানীয় শ্রমবাজার। কাতারে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাদক সেবন ও বহনের দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিদেশে ভাবমূর্তি হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশি কর্মীরা মাদক-সংক্রান্ত অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় ভবিষ্যতে বিদেশে শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ছাড়া বিমানবন্দরে স্ক্যানিং সিস্টেম যথোপযুক্ত নয়। এ সময় সভায় প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পুলিশ, জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরো, বাংলাদেশ ফিনানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সেখানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড ইন্টেলিজেন্স) ড. এ এফ এম মাসুম রব্বানী জানান, বাংলাদেশ দূতাবাস, শ্রম উইং এবং কাতার থেকে পাওয়া প্রতিবেদনে দেখা যায়, কাতারে গ্রেফতার বাংলাদেশিরা দেশটিতে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে লাগেজ স্ক্যানিংয়ে মাদক ধরা পড়েনি। অথচ কাতারের বিমানবন্দরে একই লাগেজ স্ক্যানিং করার সময় মাদক পাওয়া যায়। তবে পৃথিবীর অনেক দেশের বিমানবন্দরে ডগ স্কোয়াড মোতায়েন রাখা হয়, যার মাধ্যমে মাদক শনাক্ত করা অনেকাংশেই সহজ হবে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ কিংবা র‌্যাবের সহযোগিতায় ডগ স্কোয়াড নিয়োগ করা যেতে পারে।

সভায় এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিনিধি জানান, যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুটি স্ক্যানিং মেশিন আনা হয়েছে। এখনো কাজ শুরু হয়নি। তবে শিগগিরই স্ক্যানিং মেশিন স্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে সব ধরনের কঠোরতা গ্রহণ করা হয়েছে। আর বিমানবন্দরগুলোতে অত্যাধুনিক স্ক্যানার স্থাপন করা হলে লাগেজে থাকা মাদক শনাক্ত করা সম্ভব হবে।

পরে সভায় বিদেশে অবস্থিতদের মাদক পাচারে দেশীয় সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে সুরক্ষা সেবা বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে কাতারের কারাগারে বন্দী ৫২ বাংলাদেশির তথ্য হালনাগাদের জন্য পুলিশ, র‌্যাব ও পুলিশের বিশেষ শাখাকে চিঠি দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সব বিমানবন্দরে নিষিদ্ধ ওষুধের তালিকা টানিয়ে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বিএমইটি, বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডকে (বোয়েসেল) বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর