শুক্রবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বায়ু বিদ্যুতে নতুন সম্ভাবনা

পর্যবেক্ষণ শেষ, চলছে প্রকল্প স্থাপনের কাজ

জিন্নাতুন নূর

বায়ু বিদ্যুতে নতুন সম্ভাবনা

বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে বায়ু বিদ্যুৎ ঘিরে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। কারণ নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবে চীন ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বায়ু বিদ্যুৎ এখন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ফলে বাংলাদেশও এবার এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাইছে। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)-এর তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে দেশে বায়ু বিদ্যুৎ থেকে প্রায় তিন মেগাওয়াট (দুই দশমিক নয় মেগাওয়াট) বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। নবায়নযোগ্য  জ্বালানি হিসেবে এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হলেও এবার বৃহত্তর পরিসরে বায়ু বিদ্যুৎ-এর সম্ভাব্যতা পরখ করতে চাইছে সরকার। যদিও এক সময় বাংলাদেশে বায়ু বিদ্যুতের সম্ভাবনা নেই বলে ধারণা করা হয়েছিল, কিন্তু সম্প্রতি এ ধারণায় পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে।

পিডিবি সূত্র জানায়, গত বছর বায়ু প্রবাহের রেকর্ড পর্যবেক্ষণ করে আমেরিকার ন্যাশনাল রিনিউয়েবেল এনার্জি ল্যাবরেটরি (এনআরইএল) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, দেশের কিছু এলাকা বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। বায়ু প্রবাহের ক্ষেত্রে সংস্থাটির বছরব্যাপী পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট নয়টি এলাকার বাতাসের গড় গতিবেগ ৫ থেকে ৬ মিটার/সেকেন্ড; যা বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য আদর্শ। সূত্র জানায়, এই প্রতিবেদনের পরই সরকার বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে জোর দিয়েছে। এনআরইএল’র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের বায়ুর প্রবাহ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উপযোগী এবং স্বাভাবিকভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকায় ১০ হাজার মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে কুতুবদিয়া ও ফেনীতে বায়ু বিদ্যুতের দুটি পাইলট প্রকল্প চালু আছে। কুতুবদিয়ায় এক মেগাওয়াট করে দুটি এবং ফেনীতে এক মেগাওয়াট ক্ষমতার আরেকটি কেন্দ্র রয়েছে। তবে এই পাইলট প্রকল্প দুটি বেশ পুরনো প্রযুক্তির। ফলে এর বাইরে দেশের পৃথক আরও তিনটি স্থানে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ১৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে চাইছে। প্রতিটি ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সংযুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে। এই কেন্দ্র তিনটি হবে আইপিপিভিত্তিক। আর বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো নির্মিত হবে চাঁদপুরের কচুয়া, কক্সবাজারের ইনানি এবং বাগেরহাটের মোংলায়। এ লক্ষ্যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পিডিবি বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করবে। কেন্দ্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানই কেন্দ্রটি পরিচালনা করবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে বায়ু বিদ্যুতে এটিই হবে দেশের সব থেকে বড় উদ্যোগ। এ ছাড়াও ফেনীর সোনাগাজীতে ভারতীয় কোম্পানি উইন্ড এনার্জি প্রাইভেট লিমিটেড ৩০ মেগাওয়াটের উইন্ড মিল নির্মাণ করতে যাচ্ছে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে এটি হবে দেশের প্রথম বৃহৎ পরিসরে স্থাপিত কোনো উইন্ড মিল। এর আগে দেশের দুটি স্থানে উইন্ড মিল নির্মাণ করা হলেও এর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র এক মেগাওয়াটেরও কম। সূত্র জানায়, সোনাগাজীর কেন্দ্রটির জন্য মোট ১৫টি উইন্ড মিল বসানো হবে। প্রতিটি উইন্ড মিল ২ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে। বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পটুয়াখালীর কলাপাড়ার পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প এলাকাতে বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে গত এক বছরে টাওয়ার বসিয়ে সেই এলাকার বাতাসের গতিবিধি পরীক্ষার ফলাফলও পাওয়া গেছে। চীনে এই ডাটা পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে যাচাই-বাছাই শুরু করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ সেই ফিজিবিলিটি রিপোর্টের ভিত্তিতে এরই মধ্যে প্রকল্প এলাকায় ৫০ মেগাওয়াটের বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য টারবাইন বসানোর উদ্যোগও নিয়েছে। এটি নির্মাণে দুই বছর সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে চায়না ক্রসবাঁধ ঘেঁষে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে আরেকটি বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয় চলতি বছরের শুরুতে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বাস্তবায়নে কাজ করছে প্যান এশিয়া পাওয়ার সার্ভিস লিমিটেড। ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮টি টাওয়ারের মাধ্যমে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।

সর্বশেষ খবর