শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে জটিলতা

রেহাই চান ব্যবসায়ীরা

রুহুল আমিন রাসেল

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য খালাসে বিলম্ব হওয়া এখন নিত্যদিনের ঘটনা। রপ্তানিতেও চলছে জটিলতা। এই সংকট থেকে রেহাই চান তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা। সমস্যা সমাধানে তারা ৭ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। এতে খরচ কমানোর স্বার্থে পাকিস্তানি পণ্যের শতভাগ কায়িক পরীক্ষা না করেই খালাসের প্রস্তাব দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

এ প্রসঙ্গে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, হারমনাইজড সিস্টেম বা এইচএস কোড জটিলতায় আমরা অসহায়ত্বের মধ্যে আছি। সংকট উত্তরণে প্রায় ৩০০ এইচএস কোড অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব দিয়েছি। পাশাপাশি পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছি, যাতে সহজে পাকিস্তানি কাপড় আনতে পারি। কারণ, ক্রেতারা চাচ্ছেন পাকিস্তানি কাপড়ের পণ্য। কিন্তু এই কাপড় আনতে গিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। ১৫ দিন থেকে দুই মাস পর্যন্ত সময় লাগছে। ক্রেতারা পাকিস্তানে চলে যাচ্ছেন।

পোশাকশিল্প মালিকদের আরেক সংগঠন বিকেএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সরকারের শীর্ষ মহল থেকে বাণিজ্য সুবিধা প্রদান করা হলেও মাঠ পর্যায়ে তার প্রয়োগ কম হচ্ছে। কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে রপ্তানি খাতে জটিলতা বাড়ছে।

বস্ত্রশিল্প মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, শিল্পের স্বার্থে, অর্থনীতির চাকা গতিশীল রাখার স্বার্থে, পণ্য খালাসে সব জটিলতার অবসান চাই।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরে বস্ত্র ও পোশাকশিল্পের চলমান সমস্যা সমাধানে গত ২৩ ডিসেম্বর সাত দফা লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ। প্রস্তাবে বলা হয়, জটিলতায় পণ্য চালান খালাসে সৃষ্ট সমস্যা দূর করতে বন্ড লাইসেন্সে এইচএস কোড তালিকাযুক্ত করতে হবে। আরও এইচএস  কোডের প্রয়োজন হলে প্রতিষ্ঠানের আবেদন ও বিজিএমইএর সুপারিশের ভিত্তিতে বন্ড লাইসেন্স সংযোজন করা হবে। এইচএস কোড বন্ড লাইসেন্সে সংযোজনের জন্য এক মাসের পরিবর্তে দুই মাস সময় দিতে হবে। শতভাগ রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পে ফ্রি অফ কস্টের ভিত্তিতে আমদানি হওয়া কাঁচামাল বন্ডের আওতায় ছাড়করণের ক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রত্যায়নপত্র যাচাই পদ্ধতি সংশোধন করতে হবে।

প্রস্তাবে বলা হয়, অনেক বিদেশি ক্রেতা বিভিন্ন হোটেলে ব্যবহৃত বেড-শিট সংগ্রহ করে বাংলাদেশ থেকে পুনরায় ব্যাগ বা অন্য কোনো পণ্য তৈরি করে। পরে সেই পণ্য পুনরায় বিদেশে রপ্তানি করতে আগ্রহী। সরকার বর্তমানে পণ্য বহুমুখীকরণের কাজ করছে। প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের জন্য এ ধরনের প্রস্তাব বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া পোশাকশিল্পের কাঁচামাল ছাড়করণে শতভাগ কায়িক পরীক্ষাসহ রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। পাকিস্তানি মুদ্রা অবমূল্যায়নের কারণে ডেনিম ও টুইল কাপড় উৎপাদনে তারা অনেক এগিয়ে রয়েছে। অন্য দেশের তুলনায় পাকিস্তানে স্বল্প মূল্যে কেনা সম্ভব হচ্ছে। তাই অনেক বিদেশি ক্রেতা পাকিস্তানি কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরির রপ্তানি আদেশ দিচ্ছে। দেশের রপ্তানির স্বার্থে সময় ও খরচ কমানো এবং দ্রুততার সঙ্গে পাকিস্তান থেকে আমদানির জন্য পণ্য চালান খালাসের লক্ষ্যে শতভাগ কায়িক পরীক্ষার বদলে স্ক্যানারের মাধ্যমে যাচাই করে পণ্য ছাড়করণের অনুমোদন প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে। প্রস্তাবে তৈরি পোশাকশিল্পের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত ও আধুনিক বন্ডেড ওয়্যার হাউস স্থাপনের লক্ষ্যে রাসকিং সিস্টেম প্রযুক্তি শুল্কমুক্ত রেয়াতি সুবিধা দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

সর্বশেষ খবর