শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

গাছের বিয়ে

জামান আখতার, চুয়াডাঙ্গা

গাছের বিয়ে

গ্রামের আর ১০টা বিয়ে বাড়ির মতোই আয়োজন ছিল চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের নবিছদ্দিন বিশ্বাসের বাড়িতে। উঠোনে শামিয়ানা টানানো। নানা রঙের কাগজ কেটে সাজানো হয়েছে বাড়ির চারদিক। ঘটা করে আয়োজন করা বিয়েতে বর-কনেকে নতুন পোশাকে সাজানো হয়েছে।

তবে এ বাড়িতে নবিছদ্দিনের ছেলে কিংবা মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না। বিয়ে হচ্ছে দুটি গাছের। একটি বট গাছের সঙ্গে একটি অশ্বত্থ (পাকড়) গাছের বিয়ের আয়োজন চলছিল। নবিছদ্দিনের স্ত্রী মোমেনা খাতুনের স্বপ্ন পূরণের জন্য এ আয়োজন। নবিছদ্দিনের স্ত্রী মোমেনা খাতুন জানান, এক বছর আগে স্বপ্নে প্রথমে তাকে এবং পরে তার স্বামীকে বাড়ির বট ও অশ্বথ গাছের বিয়ের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই নির্দেশ পালন করতেই তিনি এবং তার পরিবার এ বিয়ের আয়োজন করেছেন। গ্রামবাসী জানায়, বৃহস্পতিবার বিনোদপুর গ্রামের দরগাতলাপাড়ায় নবিছদ্দিনের বাড়িতে বিয়ে উপলক্ষে সকাল থেকেই চলে গান-বাজনা। এলাকার অনেককে নিমন্ত্রণ জানানো হয়। অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য জবাই করা হয় একটি খাসি-ছাগল। বট গাছটিকে বর এবং অশ্বথ গাছটিকে কনে সাজে সাজানো হয়। দুপুরে শতাধিক গ্রামবাসীকে খাওয়ানো হয় সাদা ভাত, খাসির মাংস, মুরগির মাংস, মসুর ডাল আর সবজি। বিয়ের দাওয়াতে আসা একই গ্রামের মনোয়ার হোসেন জানান, এই প্রথম তিনি এ ধরনের বিয়ের আয়োজন দেখলেন। জরিনা খাতুন নামের এক বৃদ্ধা বলেন, ‘আমার জীবনে আমি এ ধরনের বিয়ে দেখিনি। নবিছদ্দিন বিশ্বাস জানান, স্বপ্নে গাছের বিয়ের নির্দেশ পেয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে বিয়ের আয়োজন করা হয়। বর-কনের শাড়ি, লুঙ্গি, সাজ-সজ্জার উপকরণসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হয় বিয়ের আয়োজন। সংশ্লিষ্ট ডাউকি ইউনিয়নের মেম্বার বদর উদ্দিন জানান, প্রথমে ভেবেছিলাম নবিছদ্দিনের নাতির বিয়ের আয়োজন চলছে। কারণ বাড়িতে গান-বাজনাসহ বিয়ের সব আয়োজন ছিল। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি গাছের বিয়ের খবর। এতে আমি অনেকটা হতবাক হয়েছি। পাশের জামজামি গ্রামের মাওলানা নাসির উদ্দিন বলেন, এ ধরনের বিয়ে ধর্মীয়ভাবে সমর্থনযোগ্য নয়। এটা কুসংস্কার। এর দ্বারা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। আলমডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কৃষিবিদ গোলাম সরোয়ার বলেন, দুটি গাছের বিয়ের আয়োজনের কথা এলাকায় প্রথম শুনলাম। তবে কুসংস্কার থেকে গ্রামের একটি পরিবারের এ আয়োজন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর