শক্ত মাটির বুক চিরে ফসল ফলানোই চাষির কাজ। কিন্তু সেই মাঠে ফলানো ফসলে যদি থাকে শিল্পের ছোঁয়া ফসল দিয়ে আঁকা হয় আলপনা, তবে সেটি ভিন্ন এক আমেজ বহন করে। এমনই শৈল্পিক দৃষ্টি নিয়ে ভিন্ন আলপনা এঁকে মাঠে ফসল ফলিয়ে আলোচনায় এসেছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়ী ইউনিয়নের পাড়াখালবলা গ্রামের কৃষক আবদুল কাদির। কৃষিজমিতে বিভিন্ন নকশা করে রবিশস্য চাষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ভাইরাল এই কৃষক। ফসলের মাঠে নিজের নাম এবং ভালোবাসার ‘লাভ’ চিহ্ন আঁকায় এলাকায় অনেকেই তাকে ‘প্রেমিক পুরুষ’ নামে ডাকতে শুরু করেছেন। কেউ কেউ এসে তার সঙ্গে ছবিও তুলছেন। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়ী ইউনিয়নের কাঁচামাটিয়া নদীর পাড় ঘেঁষে পলিমাটির উর্বর জমিতে তিনি সরিষাসহ বিভিন্ন শাক-সবজি ও রবিশস্য চাষ করেছেন। উপজেলার পাড়াখালবলা গ্রামের হাজী তারা মিয়ার দ্বিতীয় ছেলে সৃষ্টিশীল মনের অধিকারী আবদুল কাদির নিজের ৩৫ শতক জমিতে কারুকার্যের মতো করে ফসলের মাঠকে করে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন। জমিতে বারি-১৫ জাতের সরিষাবীজ বপন করেন। সেই বীজ গজানোর পর পুরো খেত যেন জীবন্ত ছবির রূপ ধারণ করে। কৃষক কাদির বলেন, ‘কৃষিকাজকে কেউ কেউ কাজ বলে মনে করে না, সম্মানও করে না। আর এ কাজ করে তেমন কোনো আনন্দও পাওয়া যায় না। কিছুটা আনন্দ পাওয়ার জন্য আমার ফসলি জমিতে খেয়ালিপনা করে নিজের আবেগ-অনুভূতি ও জীবনের কিছু স্মৃতি তুলে ধরে জমির বুকে চিত্রাঙ্কন করে সরিষা বুনি। গ্রামে একটি ক্লাব আছে। আমি এই ক্লাবের উপদেষ্টা। আমার এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ক্লাবের অন্য সদস্যরা সহযোগিতা করেন। ক্লাবের কেউ একজন আমার খেতের ছবি তুলে ফেসবুকে দেন। এর পর থেকে আমার খেত নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি এমন হবে আমি ভাবিনি!’ খেতের মাঝখানে ফসল দ্বারা অঙ্কিত বড় আকৃতির লাভ চিহ্ন, দুই পাশে রয়েছে দুটি নৌকা, জাতীয় ফুল শাপলা, চার কোণে আরও চারটি ভালোবাসার চিহ্ন। কাদির বলেন, ‘নৌকা হলো আমার প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা ও গণমানুষের প্রতীক। শাপলা হলো আমাদের জাতীয় ফুল। ফুল আমার ভালো লাগে। ভালোবাসার চিহ্ন হচ্ছে আমার জীবনের মধুর স্মৃতি। আমার স্ত্রী, যাকে নিয়ে আমি সংসার করছি, তাকে বিয়ে করার আগে তার সঙ্গে আমার প্রেম ছিল। তখনকার যুগে মুঠোফোন না থাকায় চিঠিতে আমাদের যোগাযোগ হতো। আমি যখন তাকে চিঠি দিতাম, তখন চিঠির চার কোণায় চারটি লাভ চিহ্ন এঁকে মাঝখানে একটি বড় লাভ এঁকে আমার নাম লিখে দিতাম। সেসব স্মৃতি মনে করেই আমি এগুলো এঁকেছি।’ স্বামীর ভালোবাসার এমন বহিঃপ্রকাশে কিছুটা লাজুক কৃষক কাদিরের স্ত্রী মুর্শিদা আক্তার বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে আমি আমার স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে সুখে আছি। আপনাদের কাছে দোয়া চাই।’ উপজেলার আঠারোবাড়ী ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল হক ইমরান বলেন, ‘পাড়াখালবলা গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কৃষক আবদুল কাদিরের এমন শৈল্পিক কাজের জন্য কৃষকসমাজ ও আমরা যারা কৃষি সেবা দিয়ে থাকি তারা সম্মানিত হয়েছি।’