রবিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ওরা ফুটবলার নয়

মির্জা মেহেদী তমাল

ওরা ফুটবলার নয়

গত শুক্রবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানার শাহ আমানত সেতু এলাকা থেকে সাড়ে সাত হাজার পিস ইয়াবাসহ দুই বিদেশিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরা তিনজনই আফ্রিকান। পেশায় ফুটবলার। ফুটবল খেলতে এরা বাংলাদেশে আসে। পুলিশ জানতে পারে, ফ্রাঙ্ক ও রিচার্ড বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্লাবে ভাড়ায় ফুটবল খেলেন। পুলিশ জানতে পারে, এরা ফুটবলের কথা বলে ইয়াবা ব্যবসা করে আসছে। শুধু ইয়াবা ব্যবসাই নয়, নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বিদেশিরা। ফুটবলারের ছদ্মবেশে এরা দীর্ঘদিন ধরেই প্রতারণা করে আসছে। জানা গেছে, ঢাকার ক্লাব ফুটবলে বিদেশিদের আধিক্য। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ফুটবল টুর্নামেন্টগুলোতেও বিদেশি ফুটবলাররা খেলেন। তাদের বেশির ভাগই নাইজেরিয়া, ঘানা আর হাইতির মতো দেশগুলোর। বিভিন্ন ক্লাবে খেলা এসব বিদেশি ফুটবলাররা জড়িয়ে পড়ছেন নানা অপরাধে। সম্প্রতি ফেনী সকার ক্লাবের পাঁচ বিদেশি ফুটবলার মিলে একটি ভয়ঙ্কর প্রতারণার মতো ঘটনা ঘটিয়েছেন। বিদেশি পাঁচ ফুটবলার বাংলাদেশি দুই নাগরিকের সহায়তায় আরেক বাংলাদেশির কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। বিদেশে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার জিতেছেন জানিয়ে ওই নাগরিককে তারা প্রতারণার ফাঁদে ফেলেন। এ জন্য প্রতিযোগিতার আয়োজক থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম বন্দরের শীর্ষ কর্তাও সাজেন তারা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফেনী সকার ক্লাবের পাঁচ বিদেশি ফুটবলারকে আটক করে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, দেশের ধনাঢ্য ও সনামধন্য মানুষদের টার্গেট করে এই প্রতারকরা। তারা ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে নিজেদের ইউরোপিয়ান ও আমেরিকান বলে পরিচয় দিয়ে প্রথমে বন্ধু তৈরি করে। এরপর প্রলোভন দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় কোটি টাকা। রাজধানীর নাদিয়া আক্তার একজন চিত্রশিল্পী। তিনি ইংল্যান্ডে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। প্রতারকরা বাংলাদেশি নাগরিকদের সহযোগিতায় নাদিয়ার সব তথ্য জেনে পরিকল্পনা করে। নাদিয়া আক্তার চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছেন জানিয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই বিদেশিরা। চট্টগ্রাম বন্দরে তার জন্য একটি পার্সেল রয়েছে বলে প্রতারক চক্রের সদস্য থমাস কিং তাকে জানান। সেখানে ৩ লাখ পাউন্ড (বাংলাদেশি প্রায় ৩ কোটি টাকা) ও আকর্ষণীয় পুরস্কার আছে। এরপর চট্টগ্রাম বন্দরের কাস্টমসের বড় কর্তা সেজে নাদিয়াকে ফোন করেন শামীমরা রহমান নামে এক মহিলা। পার্সেলটিতে পাউন্ড থাকায় সেটি আটক করে মামলা করা হয়েছে বলে জানান। ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই মহিলার ১ কোটি ১ লাখ ৯৮ হাজার ৪০০ টাকা আদায় করেন। নাদিয়া আক্তার পরবর্তীতে পুরস্কার না পেয়ে ফুটবলার থমাস কিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে পুরস্কার দেওয়া যাবে না জানিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হয়। এরপরই তিনি বনানী থানায় মামলা দায়ের করেন। সিআইডির কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারের পর তাদের ২০টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে। এগুলো ব্যবহার করে তারা প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করত। এ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকে ১৯টি অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে, যেখানে টাকা লেনদেন হয়েছে। ফেনী সকার ক্লাবের এই ফুটবলাররা এর আগে শীর্ষ দুই ক্লাবেও খেলেছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর