সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

আপন ঘরের খুনি

মির্জা মেহেদী তমাল

আপন ঘরের খুনি

তাজুল ও রাসেল। বয়স ১৯ থেকে বিশ। অল্প সময়ে অনেক টাকার মালিক হতে চায় তারা। কিন্তু কী উপায়ে বড় লোক হবে, তা তাদের মাথায় আসছিল না। হঠাৎ তাদের মাথায় আসে, কোথাও সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকরি নিলেও তো চুরি-ডাকাতি করতে পারবে। যেমন চিন্তা তেমন কাজ। এসব পরিকল্পনা নিয়ে নিজেদের নাম পরিচয় পাল্টে ফেলে। সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি নেয়। তাদের দায়িত্ব পরে মিরপুরের একটি বাসায়। কিছুদিন পর মিরপুরের ওই বাসায় খুন হন গৃহকর্তা প্রবীণ আইনজীবী রওশন আক্তার। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী তাজুল ও রাসেলকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তারা স্বীকার করে, টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটের জন্যই হত্যা করে রওশনকে। দুজন চাকরি করার জন্য ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করেছিল। এ কারণে তাদের ধরতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। কাফরুল এলাকার একটি মার্কেটের সোনার দোকান লুট হয়। দুর্ধর্ষ এ লুটের রহস্য উন্মোচন ও মালামাল উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট পুলিশের সঙ্গে সিআইডি ও গোয়েন্দা পুলিশ তদন্তে নামে। অবশেষে নিরাপত্তাকর্মী ইয়াকুব আলী ও বাচ্চু মিয়া নামের দুই নিরাপত্তাকর্মী আটকের পর জানা যায় প্রকৃত ঘটনা। তারাই মূলত এ ঘটনার নায়ক। বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের ৮২ নম্বর বাসায় পরিবার নিয়ে থাকতেন চীনা নাগরিক গাউ জিয়ান হু। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই পরিবারের বাকি সদস্যরা চীনে রয়েছেন। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গাউ জিয়ানকে হত্যা করে তার টাকা লুটের পরিকল্পনা করে ভবনের সিকিউরিটি গার্ড রউফ ও ইনামুল। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৬ ডিসেম্বর একবার গাউ জিয়ানের বাসায় ঢোকার চেষ্টা করেও পারেনি। এরপর ১০ ডিসেম্বর তারা বাসায় ঢুকে গাউ জিয়ানের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর তার ব্যাগ থেকে ৩ লাখ ৪৯ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। পরে লাশ বাড়ির পেছনে মাটিচাপা দেয়। সর্বশেষ বনানীতে খুন হন ব্যবসায়ী তোবারক। এ ঘটনাতেও জড়িত সেই সিকিউরিটি গার্ড।  মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া যাদের দায়িত্ব, সেই নিরাপত্তাকর্মীরাই ঘাতক হিসেবে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করছে। নিরাপত্তা কর্মীদের হাতে খুন-খারাবির মতো ঘটনা বেড়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে মনিবের সব খবরই তাদের জানা থাকে। আর এ সুযোগ নিচ্ছে তারা। আপন ঘরের খুনির মতোই তারা নিরাপদে ভয়ঙ্কর সব অপরাধ ঘটিয়ে যাচ্ছে।

গত কয়েক মাসের ব্যবধানে রাজধানীতে নিরাপত্তাকর্মীর মাধ্যমে ঘটেছে এমন অনেক ঘটনা। আটকের পর নিরাপত্তাকর্মীর ছদ্মবেশী এই অপরাধীরাও এ বিষয়ে দিচ্ছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাদের বেশির ভাগই জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, চুরি-ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যাসহ অপরাধ সংঘটিত করতেই নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে তারা কাজ শুরু করে। কারণ হিসেবে দেখা গেছে, কোনো ধরনের নীতিমালা না থাকায় চিহ্নিত অপরাধীরাও নিরাপত্তাকর্মী সেজে ভয়ঙ্কর অপরাধ করছে। আর তাদের নাম, ঠিকানা ও ছবি না থাকায় ঘটনার পর পুলিশ তাদের ধরতে পারে না। এ অবস্থায় পুলিশ বলছে, নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগে আরও সচেতন না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছে, রাজধানীর বেশির ভাগ সিকিউরিটি কোম্পানি যাচাই-বাছাই ছাড়াই নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দেয়। তাই পরিচয় গোপন করে বাসাবাড়িতে একশ্রেণির অপরাধীরা হত্যা ও লুট করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের ব্যাপারে আরও মনোযোগী হতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর