শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

আবাসন সুবিধা নেই ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থীর

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

আকতারুজ্জামান

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবাসন সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তথ্যমতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৪ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীই আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন না। আবাসন সুবিধা না পেয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে, গণরুমে গাদাগাদি করে আবার কোথাও মসজিদেই থাকছেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দীন হলে শিক্ষার্থীরা ছাদেও থাকছেন। আবাসিক হলে পালা করে কেউ দিনে, আবার কেউ রাতে, এভাবেও থাকছেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল না থাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থীই আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন না। আবাসিক সুবিধা না পাওয়ায় বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে নির্ভরশীল হতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকার মেসগুলোর ওপর। এতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অধিকার থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। কারণ, আবাসিক হলে লাইব্রেরি, সেমিনারসহ নানা শিক্ষা উপকরণ হাতের নাগালেই পান শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্দীন হল। ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ হলে ১২০টি কক্ষে ৩৮৭ জন ছাত্রের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। অথচ এখানে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন। হলের বেশির ভাগ কক্ষেই ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বা তারচেয়েও বেশি ছাত্র থাকছেন। ‘গণরুম’গুলোতে থাকছেন ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি ছাত্র। চারজনের একটি কক্ষে থাকছেন ২০ থেকে ২৫ শিক্ষার্থী। হলটিতে এ ধরনের ১০টি গণরুম আছে। এ হলে অনেকেই ঘুমান পালা করে। কেউ ঘুমান রাতে আর কেউ দিনে। তীব্র গরম, গাদাগাদি, তার ওপর ছারপোকার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে কেউ কেউ থাকেন হলের বারান্দায়। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে সিট না পেয়ে ওই হলের মসজিদে উঠেছেন বিভিন্ন বিভাগের প্রথম বর্ষের প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী। এরা সবাই জহুরুল হলের এটাচ পাওয়া ছাত্র।

ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন ২০১৮-এর তথ্যমতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৩৭ হাজার ৯৮৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৫ হাজার ৭৫ জন শিক্ষার্থী বিভিন্নভাবে আবাসিক হলে থাকছেন। শতকরা হিসেবে ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসন সুবিধা পাচ্ছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সুবিধা রয়েছে মাত্র ৩৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর। এছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েটে ৩৬ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭ শতাংশ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ শতাংশ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০ শতাংশ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২ শতাংশ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ শতাংশ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ শতাংশ, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ২ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা রয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর জন্য কোনো আবাসন সুবিধাই নেই। একইভাবে শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য কোনো হল নেই বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়েও। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আড়াই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন মেসে থাকছেন। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ হাজার ৫৩ শিক্ষার্থীর বিপরীতে আবাসিক হলগুলোতে আসন আছে মাত্র ১ হাজার ৩৯ জনের। ফলে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে নির্ভরশীল হতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকার মেসগুলোর ওপর। ইউজিসি প্রতিবেদনের তথ্যমতে মাত্র ১২ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়া জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬ শতাংশ। সবমিলে দেশের ৪০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাত্র ৩৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন সুবিধা রয়েছে। বাকি ৬৪ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রীই এ সুবিধার বাইরে রয়ে গেছেন।

সর্বশেষ খবর