মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রত্যাহার হচ্ছে সঞ্চয়পত্রের কর রেয়াত সুবিধা

ভুল সিদ্ধান্ত বললেন সাবেক গভর্নর, চাপ বাড়বে বয়স্ক ও নারী বিনিয়োগকারীর

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের সুপারিশে চলতি অর্থবছর থেকে সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর বাড়িয়ে দ্বিগুণ করা হয়েছে। এর প্রভাবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ তলানিতে  নেমেছে। এই খাতে কমেছে ঋণপ্রবাহ। বেড়েছে অবসরভোগী আর নিম্ন মধ্যবিত্তের উদ্বেগ। অর্থবছরের অর্ধেক সময় পার হওয়ার পর সেই উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিয়ে সঞ্চয়পত্রে প্রচলিত কর রেয়াত সুবিধা  যৌক্তিকীকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অবশ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ সিদ্ধান্তটিকে ত্রুটিপূর্ণ ও ভুল বলে মন্তব্য করেছেন। সূত্রগুলো জানায়, সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত নগদ এবং ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটির ৪৪তম সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনা ঝুঁকি ও ব্যয় হ্রাসের লক্ষ্যে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের বিপরীতে এনবিআরের প্রদেয় আয়কর রেয়াতের বিষয়টি পর্যালোচনার মাধ্যমে যৌক্তিকীকরণের পদক্ষেপ নিতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নিয়ে সভায় আলোচনার এক পর্যায়ে উল্লেখ করা হয় যে, এই খাতে বিনিয়োগকারীরা একদিকে যেমন উচ্চ হারে সুদ পাচ্ছেন, অন্যদিকে তারা আয়কর রেয়াত পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা দ্বৈত সুবিধা পান। এ ধরনের দ্বৈত সুবিধাপ্রাপ্তি আয়কর রেয়াত যৌক্তিকীকরণের মাধ্যমে কমানো যেতে পারে সভায় অনেকে মত প্রকাশ করেন। এখন কররেয়াত ‘যৌক্তিকীকরণ’-এর বিষয়টি সুনির্দিষ্ট কী হবে সেটি এনবিআর চূড়ান্ত করবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। এক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রে বড় বিনিয়োগে কররেয়াত সুবিধা প্রত্যাহার হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সূত্র জানায়, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা দেওয়ার সময় মুনাফার ১০ শতাংশ উৎসে কর হিসেবে কর্তন করা হয়। আগে এ হার ছিল ৫ শতাংশ। সরকারের সিদ্ধান্তে নতুন হার চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত মন থেকে মেনে নিতে পারেননি দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিক ও অবসরভোগী এবং নারী বিনিয়োগকারীরা। তারা মূলত ব্যাংকে সুদের হার কম বলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে তা দিয়ে সংসারে খরচ চালায়। এখন নতুন করে কর যৌক্তিকীকরণের নামে কর সুবিধা প্রত্যাহার করা হলে মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়বে। তাদের সঞ্চয় মানসিকতায় পরিবর্তন আসবে। সংসারের খরচ চালাতে গিয়ে মূলধনে হাত দিতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সম্পূর্ণ ভুল যুক্তির ওপর এই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগ চালু হয়েছে বিশেষ শ্রেণিকে সুবিধা দেওয়ার জন্য। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত, অবসরভোগী এবং নারী বিনিয়োগকারীদের রাষ্ট্রের পক্ষে কিছু সুবিধা দিতেই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কিছুটা বেশি রাখা হয়েছে।

 এটা এক ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। এখন প্রথমে এটিতে উৎসে কর দ্বিগুণ করা হলো। এখন আবার কর যৌক্তিকীকরণের নামে অবসরভোগী আর নিম্ন আয়ের মানুষ যারা সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীল তাদের নতুনভাবে করের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। এতে মানুষের মধ্যে আয়বৈষম্য আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, সরকারের উচিত অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় বাড়িয়ে মানুষকে বিনিয়োগমুখী করা। সেটি না করে এ ধরনের ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিলে সঞ্চয় কমবে। পাশাপাশি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে যা সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

সর্বশেষ খবর