বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রবৃদ্ধির সূচকে স্থান নেই আত্মতুষ্টির

-ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ

প্রবৃদ্ধির সূচকে স্থান নেই আত্মতুষ্টির

পিকেএসএফের চেয়ারম্যান, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, আমাদের প্রবৃদ্ধি, সামাজিক সূচক, প্রত্যাশিত জীবন, রেমিট্যান্স, রপ্তানি সবই বেড়েছে। বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা ছিল গত বছরেও। তবে এই প্রবৃদ্ধি নিয়ে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। বিশ্বের সব দেশের সমস্যা রয়েছে বা নতুন  করে সৃষ্টি হয়, বাংলাদেশেও হবে। তাই টেকসই উন্নয়ন ধরে রাখতে হলে বড় প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন দরকার। সুশাসন, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা বিষয়ে আমাদের ব্যর্থতা ছিল। যেগুলো সরকার কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি, বৈষম্য হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তনে অনেক নীতি কর্মসূচি আছে। এগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ধীর গতি, স্বচ্ছতার অভাব আছে। সরকারের ইশতেহারে বেশ কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছিলেন। যেগুলোর মধ্যে গ্রাম-শহরের বৈষম্য, আঞ্চলিক বৈষম্য, নারী-পুরুষ বৈষম্য, নারীদের প্রতি সহিংসতা, নদী-জলাশয় দখল ইত্যাদি চিহ্নিত করা আছে। এগুলোর উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারের সফলতা আছে। কিন্তু প্রত্যাশিত মাত্রায় আমরা এখনো আগাতে পারছি না। এটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পদ্মা সেতু হলে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের অনেক সুবিধা হবে। ধনী-দরিদ্র বৈষম্য কমাতে বড় ভূমিকা রাখবে। এ রকম বড় প্রকল্প যেমন বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে, এশিয়ান হাইওয়ে, সমুদ্রবন্দর বাস্তবায়ন হলে আর্থিক গতি আরও বাড়বে। তিনি বলেন, অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে অতি দরিদ্রদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। হাওড় অঞ্চল, উপকূলীয় অঞ্চল, প্রতিবন্ধী, বিভিন্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যারা আর্থিক কাঠামোর বাইরে যারা রয়েছে তাদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। উন্নয়ন প্রবৃদ্ধি কাউকে বাদ দিয়ে হবে না।

পিকেএসএফ চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দক্ষ জনবলের অভাব এই সময় খুব পরিলক্ষিত হচ্ছে। দক্ষ জনবল পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে আমার পরামর্শ হলো বিভিন্ন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে একটি জরিপ করা উচিত। যেখানে আমাদের কোনো ধরনের জনবল দরকার সেই অনুযায়ী শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে আরও বেশি নজর দিতে হবে। যার পদক্ষেপ এখনো সেভাবে চোখে পড়েনি। তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত শীর্ষ দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। বিপুল মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত সমস্যায় রয়েছে। এই সংকট কাটানোর জন্য আমাদের অনেক অর্থ ব্যয় করতে হবে। আমাদের তেমন অর্থ এই খাতে নেই, বিদেশ থেকে টাকা এনে ব্যয় করতে হবে। বিষয়টি খুবই গুরুতর সমস্যা, যেটি বাড়ছে। তিনি বলেন, ব্যাংকিং, পুঁজিবাজারে সমস্যা মোকাবিলা করা যায়নি। খেলাপি ঋণ, অনিময়, সুশাসনের ঘাটতি এখনো চরম আকারে আছে। যারা ব্যাংকিং খাতে, পুঁজিবাজারে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচার না হলে এই খাতে সুশাসন নিশ্চিত করা যাবে না। অনেক ব্যাংক দুর্বল, চলতে পারছে না। এসব নিয়ে কঠোরভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিনিয়োগ ধরে রাখতে হলে ব্যাংক, পুঁজিবাজার সুস্থ রাখার বিকল্প নেই। সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে রেমিট্যান্স বেড়েছে, রপ্তানিও বেড়েছে। তবে রপ্তানির প্রবৃদ্ধির হার বাড়েনি বরং কমেছে। প্রবৃদ্ধির হার সুসংহত রাখতে হলে এগুলোর ওপর নজর দিতে হবে।

সর্বশেষ খবর