বুধবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

রাজধানীর উপকণ্ঠে পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচির

মোস্তফা কাজল, আশুলিয়া থেকে ফিরে

রাজধানীর উপকণ্ঠে পরিযায়ী পাখির কিচিরমিচির

প্রকৃতিতে শুরু হয়েছে শীতের আমেজ। ফলে ভোরের শিশিরবিন্দু জমে থাকে পাখির ঠোঁটের ডগায়। দূরদিগন্ত থেকে উড়ে আসে অনেক পরিযায়ী পাখি। দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে ওই পাখিরা। এবার সেই পাখির খোঁজ মিলেছে রাজধানীর উপকণ্ঠের আশুলিয়ার বিলে। দুই দিন ধরে এসব পাখি এখানে অবস্থান করছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, হেমন্তের পাকা ধানের সুবাস শেষ হলেই উত্তরের হিমেল বাতাসে ভর করে পরিযায়ী পাখি ভিড় জমায় আমাদের দেশে। এসব পাখি হাজার হাজার মাইল দূরের পথ উড়ে এ দেশে আসে তীব্র শীত ও খাদ্যাভাব থেকে বাঁচার জন্য। আসে সুদূর সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া, তিব্বত, হিমালয়ের পাদদেশ, চীনসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে। আসতে শুরু করে ডিসেম্বর মাসে। থেকে যায় মার্চ পর্যন্ত। অল্প দিনেই এসব পাখি আমাদের বন্ধুতে পরিণত হয়। পরিযায়ী পাখির খবরে অনেকে ভিড় করতে থাকেন এ বিলে। গতকাল টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার মাঠ অতিক্রম করার পর পাওয়া গেল অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দ। আরও কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ চোখে পড়ল কয়েকটা সাদা বক উড়ে যাচ্ছে। আরও দেখা গেল, ঝিলের জলে ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখি বসে আছে। আরেকটু সামনে যেতেই দেখা মিলল পরিযায়ী পাখিরা আপন মনে বসে আছে। নেই কোনো কোলাহল, নেই কোনো পাখি শিকারির দল। জীবজগতের মধ্যে পাখিরাই সর্বাধিক পরিযায়ী। শীতের এসব পাখিকে অতিথি পাখি বলেন অনেকে। পাখি অতিথি নয়। পাখি কোনো দেশের নয়। তবে পাখিদের দেশভিত্তিক একটা তালিকা থাকতে পারে। অতিথি পাখি বলে কোনো শব্দ বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর কোথাও ব্যবহৃত হয় না। কোনো পাখি এক দিন মাত্র কোনো দেশে থাকলে সে পাখিটা সেই দেশের পাখি হয়ে যায়। যে পাখি সারা বছর এ দেশে বাস করে তাকে আমরা আবাসিক পাখি বলে থাকি। যে পাখি বছরের পুরোটা সময় এ দেশে না থেকে নিয়মিত বিদেশ ভ্রমণ করে, তাদের পরিযায়ী পাখি বলা হয়। বাংলাদেশে ৬৫০ প্রজাতির পাখির একাংশ গ্রীষ্মে আহার, বাসস্থান ও প্রজননের জন্য হিমালয়ের তুষারঢাকা অঞ্চল হয়ে সুদূর সাইবেরিয়া ও তুন্দ্রা অঞ্চলে চলে যায়। এসব পাখির কোনোটা তিন মাস, কোনোটা ছয় মাস ওই অঞ্চলে থাকে। তারপর আবার দেশে ফেরে। ১০ থেকে ১৫ প্রজাতির যেসব পাখি শীতের সময় দেশে থাকে না, এরা হলো সুমচা ও কোকিল প্রজাতির পাখি। বিলের অনেক দূরে দেখা গেল একটা ডিঙি নৌকা। নৌকার ওপর আপন মনে বসে আছে খয়রা, ইমু, খস্তেকরা ও হাড়গিলা। এখানে মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। আরও সামনে গিয়ে দেখতে পাই পরিযায়ী পাখি ঝিলের মধ্যে যেন জলকেলি করছে। অসাধারণ সে দৃশ্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। ঝিলের জলে পাখিদের ছুটে বেড়ানোর দৃশ্য যে-কারও মন ভরিয়ে দেবে। খুব স্বল্প সময়ে কাছের দূরত্বে দেখার মতো লোভনীয় স্থান এটি।

সর্বশেষ খবর