নির্ভয়া গণধর্ষণ মামলায় দোষী সাব্যস্ত চার আসামির বিরুদ্ধে দীর্ঘ সাত বছর পর গতকাল মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছে দিল্লির পাতিয়ালা হাউস কোর্ট। এ মামলায় আরও দুজন দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। এর মধ্যে পঞ্চম অভিযুক্ত রাম সিং আত্মহত্যা করেন। আরেক আসামি ছিল কিশোর বয়সী। তাই তাকে তিন বছর সংশোধনাগারে রাখার পর মুক্তি দেওয়া হয়। গতকাল বিচারকের নির্দেশে বলা হয়, ২২ জানুয়ারি সকাল ৭টায় চার ধর্ষক- পবন গুপ্ত, মুকেশ সিংহ, বিনয় শর্মা ও অক্ষয় ঠাকুর সিংহকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করতে হবে। দিল্লি তিহার জেল থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিচারকের সঙ্গে গতকাল কথা বলেন ওই চার দোষী। তাদের বক্তব্য শোনার পর বিকাল ৫টা নাগাদ রায় দেন বিচারক। তবে দোষীরা চাইলে রায় সংশোধনের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানাতে পারেন। ক্ষমাভিক্ষাও করতে পারেন। দোষীদের ফাঁসি কার্যকর করার নির্দেশ এগিয়ে আনতে পাতিয়ালা হাউস কোর্টে আর্জি জানিয়েছিলে নির্ভয়ার পরিবার। তাদের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারির আর্জি জানিয়েছিলেন নির্ভয়ার মা আশা দেবী ও বাবা বদ্রীনাথ সিংহ। গত ১৮ ডিসেম্বর সেই আবেদনের শুনানি চলাকালীন, ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত রায় স্থগিত রাখেন অতিরিক্ত দায়রা বিচারক সতীশ অরোরা। সে সময় আদালতের মধ্যেই ভেঙে পড়েছিলেন নির্ভয়ার মা আশা দেবী। গতকালও আদালতের রায়ের পর কান্না চেপে রাখতে পারেননি আশা দেবী। তবে দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের শেষে সাফল্যের তৃপ্তিও ছিল তাতে। আদালত থেকে বেরিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন আশা দেবী। সেখানে তিনি বলেন, ‘এই রায়ে আইন ব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা ফিরবে। আমার মেয়ে সুবিচার পাবে। সুবিচার পাবে দেশের সব মেয়ে।’
নির্ভয়ার বাবা বদ্রীনাথ বলেন, ‘আদালতের রায়ে খুশি আমি। ২২ জানুয়ারি সকাল ৭টায় দোষীদের ফাঁসি হবে। এ ধরনের অপরাধ যারা ঘটায়, এই রায় তাদের মনে ভয় ধরাবে।’ ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে দিল্লিতে চলন্ত বাসে প্যারামেডিকেল ছাত্রী ২৩ বছর বয়সী নির্ভয়াকে গণধর্ষণ করে ৬ ব্যক্তি। ধর্ষণের পর রক্তাক্ত তরুণীকে বাস থেকে ছুড়ে ফেলা হয়। ২৯ ডিসেম্বর নির্ভয়া মারা যান। নির্ভয়া ও তার বন্ধু অবীন্দ্র প্রতাপের ওপর নৃশংস অত্যাচার চালায়। সেই মামলায় আগেই ওই চারজনকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ২০১৭ সালে সেই রায় পুনর্বিবেচনা করে দেখতে আদালতে আর্জি জানিয়েছিলেন আসামি অক্ষয়। গত মাসে তার সেই আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
