বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ক্যাসিনোকাণ্ডে ৪২০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ

মাহবুব মমতাজী

ক্যাসিনো-টেন্ডারবাজির আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপরাধের পর হওয়া আটটি মানি লন্ডারিং মামলা তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মামলাগুলোর তদন্তে অন্তত ৪২০টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে সংস্থাটি। চলতি মাসেই খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে করা মানি লন্ডারিং মামলার চার্জশিট জমা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে। যদিও ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের সময় অনেকে আত্মগোপনের পর প্রকাশ্যে আসা শুরু করেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, শীর্ষ পর্যায়ের সবুজ সংকেত পেলে আবারও সেই অভিযান শুরু করা হবে। গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে শুদ্ধি অভিযানের শুরু। সর্বশেষ ৩১ অক্টোবর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জুকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেফতারের পর এ অভিযান থেমে যায়। প্রায় দেড় মাসের এ অভিযানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটসহ ১১ জন গ্রেফতার হন। অনেকেই দেশ ছাড়েন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হওয়ায় এরই মধ্যে দেশে ফিরেছেন যুবলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য মিজানুর রহমান, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শেখ রবিউল ইসলাম এবং প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছেন সম্রাটের সহযোগী হিসেবে পরিচিত ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ২০ ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন। সেই সময় ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, গুলিস্তানেই প্রথম শুরু হয়েছিল সম্রাটের ক্যাসিনো ব্যবসা। মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে তার ক্যাসিনোর ব্যবসা দেখভাল এবং সুন্দরবন মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করতেন শাহাবুদ্দিন। সম্রাট গ্রেফতারের পর তার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সিআইডির ডিআইজি (স্পেশাল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন) ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, অপরাধের মাধ্যমে পাওয়া কোনো সম্পদ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা, অপরাধের মাধ্যমে আয় করা সম্পদের উৎস গোপন করা কিংবা অপরাধের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদকে কোনো কিছু কিনে বৈধ করা- এই তিন ধাপের কোনো একটিতে পড়লেই সেটি মানি লন্ডারিং হবে। যে আটটি মামলা তারা তদন্ত করেছেন সেগুলোতে ওই তিন ধাপেই স্পর্শের প্রমাণ পাওয়া গেছে। মামলাগুলোর তদন্ত শেষ পর্যায়ে দ্রুতই সেগুলোর চার্জশিট দেওয়া হবে। সিআইডি থেকে জানা যায়, খালেদ, জি কে শামীম, সেলিম প্রধান ও মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজানের একটি করে মানি লন্ডারিং মামলা তদন্ত করছে সংস্থাটি। আর পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া আওয়ামী লীগের নেতা এনু ও রূপনের চারটি মানি লন্ডারিং মামলা তদন্ত চলছে। তদন্তে দেখা যায়, খালেদের ৫২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৪১০ কোটি ৩০ লাখ টাকা জমা হয়। আর উত্তোলন করা হয় ২৭৮ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত ওই সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকা রয়েছে। এরই মধ্যে তার ১০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা এবং ৭ লাখ ৬৪ হাজার সমমূল্যের বিদেশি মুদ্রা রাষ্ট্রের অনুকূলে জমা দেওয়া হয়েছে। আর জি কে শামীমের মোট ১৯৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পাওয়া যায়। এফডিআর এবং ওই সব অ্যাকাউন্ট মিলিয়ে তার পাওয়া যায় ৩২৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। দুই ভাই এনামুল হক ওরফে এনু ভূঁইয়া ও রূপন ভূঁইয়ার ৯১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৯ কোটি ১১ লাখ টাকা পাওয়া যায়। তাদের নামে আরও জমিসহ ২০টি বাড়ি পাওয়া যায়। এ ছাড়া তিনটি প্রাইভেটকার এবং তিনটি মোটরসাইকেল পাওয়া গেছে। সেলিম প্রধানের ৮৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাওয়া গেছে ২০ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। তদন্তে থাইল্যান্ডে একটি বাগানবাড়ি, এস-৭ গ্রুপ, টি-২০ গেমিং, টি-২০ ব্যাটিং, প্রধান স্পা হাউস, প্রধান ফ্যাশন হাউস, প্রধান ল ফার্ম, ওয়াইট হাউস, এসডি কনসাল্টিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টসহ তার ফিশিং কোম্পানি রয়েছে। এদিকে পাগলা মিজানের রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বসিলায় একটি মার্কেট, মোহাম্মদপুর স্বপ্নপুরী হাউজিংয়ে চারটি ফ্ল্যাট, পুরানা পল্টনে পাঁচতলা বাড়ি, মোহাম্মদপুর আওরঙ্গজেব রোডে ২২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট পাওয়া যায়। এ ছাড়া সম্রাটের বিষয়টি অনুসন্ধানে রয়েছে। তবে দেশ-বিদেশে অনেক সম্পদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। সেগুলো বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। বিদেশে থাকা সম্পদগুলোর খোঁজ ৭৫টি দেশের সংস্থার মাধ্যমে করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর