বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
দিল্লিকে প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে ঢাকা

নিত্যপণ্য রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার আগে অবহিত করুন

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পিয়াজসহ যে কোনো ধরনের নিত্যপণ্যে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে সেটি যেন বাংলাদেশকে আগেভাগেই অবহিত করা হয়, সে বিষয়ে চুক্তির প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পিয়াজ নিয়ে সংকট দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এখন এই ইস্যুটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে। আগামী ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি নয়াদিল্লিতে বাণিজ্য সংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা হওয়ার কথা। সূত্রগুলো জানায়, বাংলাদেশ-ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সংক্রান্ত ওয়ার্কিং কমিটির সভায় অন্য যে ইস্যুগুলো রয়েছে, সেগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময় এর আগেও আলোচনা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সে সব ইস্যুতে এবার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে। তবে নিত্যপণ্যে নিষেধাজ্ঞা জারির আগে আগাম অবহিতকরণের বিষয়টি একটি নতুন ইস্যু এবং ঢাকার পক্ষ থেকে এবার এটিতেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ এর সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি জড়িত। বিষয়টি স্বীকার করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এই ইস্যুটির বিষয়ে আমাদের দিক থেকে যতটা সম্ভব জোর দেওয়া হবে। আমরা চাই, তারা পণ্য নিষেধাজ্ঞার আগে আমাদের অবহিত করুক। এতে আমরা আগাম প্রস্তুতি নিতে পারব। ‘আমাদের এই প্রস্তাবটি মেনে নিলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত যে আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র এবং বিভিন্ন দুর্যোগে তারা আমাদের পাশে দাঁড়ায়-এটি অন্তত মানুষ বিশ্বাস করবে,’ বলেন বাণিজ্য সচিব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, একটি নির্দিষ্ট সময়ের আগে ভারত যাতে বাংলাদেশকে সংকেত দেয় সেই বিষয়টি আলোচনায় উল্লেখ করা হবে। সেটি ৬, ৪ কিংবা ২ মাস যে কোনো সময় হতে পারে। এটি পিয়াজ, আদা, রসুন বা অন্য যে কোনো নিত্যপণ্যের ক্ষেত্রে হতে পারে। কারণ, এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা রয়েছে। বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে এক্ষেত্রে ভারতের দিক থেকেও দায় রয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি একাধিক সভায় বলেছেন, মহারাষ্ট্রে নির্বাচনের পর পিয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে বলে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা এখনো প্রত্যাহার হয়নি। তারা যদি এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে আমাদের অবহিত করত তবে আমরা প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পেতাম। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গিয়েও এ বিষয়টি উল্লেখ করেন। দিল্লিতে একটি সেমিনারে তিনি হিন্দিতে বলেছিলেন, ভারত পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির আগে যদি আমাদের অবহিত করে, তবে এ বিষয়ে আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া সহজ হয়। ওই সময় নিষেধাজ্ঞা জারির পর প্রধানমন্ত্রী রান্নায় কোনো পিয়াজ ব্যবহার করছেন না বলেও সেই সেমিনারে উল্লেখ করেছিলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব শওকত আলী ওয়ারেছী বলেন, মহাজোট সরকারের আমলে ২০১৩ সালে পিয়াজ সংকটের সময়ও ভারতের সঙ্গে নিত্যপণ্য নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত ইস্যুতে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ওই সময় বাংলাদেশ প্রস্তাব করেছিল, ভারত যদি পণ্য রপ্তানিতে অন্য দেশের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে তবে বাংলাদেশকে যেন তার আওতামুক্ত রাখা হয়। কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোতে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ওই ইস্যুটি নিয়ে আর কোনো আলোচনা হয়নি। এমন কি নিত্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভারতীয় একটি সংস্থার সঙ্গে টিসিবির একটি সমঝোতা চুক্তির বিষয়েও আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছিল বলে জানান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক এই অতিরিক্ত সচিব।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর পিয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। এরপর এক দিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম দ্বিগুণ বেড়ে যায়। একপর্যায়ে রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে কেজিপ্রতি ৩০০ টাকায় ওঠে পণ্যটির দাম। মিয়ানমার, তুরস্ক, মিসর, চীন ও পাকিস্তান থেকে পণ্যটি আমদানি করে সংকটকালীন পরিস্থিতি সামালের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ভারতের নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে।

সর্বশেষ খবর