রাজধানীর অদূরে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে শুরু হয়েছে ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমা। আজ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে ইজতেমা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও গতকাল বাদ আসর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে আমলি শূরার তত্ত্বাবধানে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। ১২ জানুয়ারি রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ পর্ব। চার দিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব ১৭ জানুয়ারি শুরু হয়ে চলবে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। বৈরী আবহাওয়া, বৃষ্টির দুর্ভোগ উপেক্ষা করে ইজতেমায় যোগ দিতে বাস, ট্রাক, পিকআপ, ট্রেনসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের  লাখো মুসল্লির ঢল এখন তুরাগতীরের বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে। বিশ্বের ৩৫টি দেশের ২ হাজার বিদেশি মুসল্লিও ময়দানে উপস্থিত হয়েছেন। এ ছাড়া অন্যান্য দেশের মুসল্লিরা আসার পথে রয়েছেন। মুসল্লিদের উদ্দেশে আজ বাদ ফজর বয়ান করবেন পাকিস্তানের মাওলানা ওবায়দুল্লাহ খুরশিদ। জুমার নামাজ পড়াবেন বাংলাদেশের মুরব্বি মাওলানা যোবায়ের হাসান। জুমা শেষে বয়ান করবেন ফ্রান্সের মাওলানা শেখ ইউনুস, বাদ আসর মাওলানা এহসান, বাদ মাগরিব বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা আহমদ লাট। ইজতেমা মাঠের মুরুব্বি প্রকৌশলী মফিজুর রহমান জানান, দেশের তাবলিগ জামাতের মুসল্লি ও সর্বস্তরের মুসলমান এবং বিশ্বের প্রায় বিভিন্ন দেশের মুসল্লি ইজতেমায় অংশ নেবেন। এবার পুরো ময়দানকে ৮৭ খিত্তায় ভাগ করে আগত মুসল্লিদের জেলা অনুযায়ী অবস্থান নিশ্চিত করেছেন আয়োজকরা। তবে মুসল্লির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ময়দানের বাইরে অবস্থান নিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, ‘বিশ্ব ইজতেমা চলাকালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় মুসল্লিদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকবে। সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মুসল্লিদের জন্য চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে।  গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন জানান, ‘আগত লাখ লাখ মুসল্লির নিরাপত্তায় পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দাসহ যৌথ বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য পাঁচ স্তরে ভাগ হয়ে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে ১৪টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। থাকছে ময়দানজুড়ে সিসিটিভি, আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর। খিত্তাগুলো নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। সার্বিক নিরাপত্তায় এবার ইজতেমায় সাড়ে ৯ হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করবেন। নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র চালু থাকবে।’ র‌্যাবের মুখপ্রাত্র লে. কর্নেল সরওয়ার-বিন-কাশেম জানান, ‘প্রতি বছরের মতো বাড়তি পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মাঠের ভিতর ও বাইরে বিভক্ত হয়ে কাজ করবেন। র‌্যাবের দুটি হেলিকপ্টার ইজতেমা মাঠের আকাশে টহল দেবে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে ১০টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। নজরদারির জন্য মাঠের চারদিকে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।’ র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘এবারের বিশ্ব ইজতেমায় কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। স্থল, জল ও আকাশপথে নিরাপত্তা নিশ্চিতে র‌্যাবের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ত্রিমাত্রিক নিরাপত্তাব্যবস্থা। নিন্ডিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আগে থেকেই কাজ করেছে এবং র‌্যাব গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করেই নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে।’ গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

বৃষ্টি ও যানজটে দুর্ভোগ : গতকাল দিনভর গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ও যানজটের কারণে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সীমাহীন ভোগান্তি হয়েছে। ভোর থেকেই গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা প্রায় সারা দিন অব্যাহত থাকে। স্থবির সড়কে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে দীর্ঘ পথ হেঁটে ময়দানে পৌঁছান মুসল্লিরা।

 আল্লাহকে রাজিখুশি করার জন্য সবাই একসঙ্গে তাবলিগের মেহনতে কাজ করব। আগে যেমন সবাই একসঙ্গে ইজতেমায় অংশ নিয়েছি তেমনি আগামীতেও একসঙ্গে অংশ নেব। টঙ্গীর এ ইজতেমা ময়দান খুবই পবিত্রতম স্থান। এখানে এসে কোনো বিরোধপূর্ণ কাজ করা যাবে না।’ গতকাল দুপুরে টঙ্গী মুন্নু কটন টেক্সটাইল মিলস্ প্রাঙ্গণে হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ আয়োজিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।