শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
সিটি ভোটে জমছে লড়াই

জেতার জন্য লড়বে বিএনপি কেন্দ্র পাহারায় হচ্ছে কমিটি

মাহমুদ আজহার

ঢাকার দুই সিটি ভোটে জেতার জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে বিএনপি। রাজধানীর মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের এরই মধ্যে সেই দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্র পাহারায় ত্যাগী ও সাহসী নেতা-কর্মীদের নিয়ে ‘কেন্দ্র পাহারা কমিটি’ করে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ভোট কেন্দ্রের ভিতরে যারা পোলিং এজেন্ট থাকবেন, তাদেরও ইভিএমসহ নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পোলিং এজেন্টের জন্য স্থানীয় সাহসী, ত্যাগী ও পরিচিত নেতা-কর্মী বাছাই করা হচ্ছে। এদিকে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীকে   এরই মধ্যে ২০-দলীয় জোট সমর্থন দিয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টও সমর্থন দিয়ে ভোটের মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপি গঠিত নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘যে কোনো পরিস্থিতিতে আমরা ভোটের শেষ পর্যন্ত থাকব। এরই মধ্যে আমাদের এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরেক প্রার্থীকে অপহরণ করে মুন্সীগঞ্জে আলু খেতে ফেলে রেখে গেছে। মাজেদা নামে সংরক্ষিত (মহিলা) প্রার্থীকে বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে যেন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এর পরও কি মনে হয়, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে? সরকার ও নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ভোট দেবে না, এটাও পরিষ্কার। তার পরও আমরা একাদশ জাতীয় নির্বাচনের মতো এ নির্বাচনকে দেশবাসী বিশেষ করে তরুণদের দেখাতে চাই, এ সরকারের আচরণ কেমন। তারা যে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, তা জাতি দেখুক।’

ভোটকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে জয়-পরাজয় দুটোকেই ইস্যু বানাবে দলটি। বিএনপি নেতারা বলছেন, সুষ্ঠু ভোট হলে বিএনপি দুই সিটিতেই বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে। আর ভোট কারচুপি হলে তাও ইস্যু হিসেবে নিয়ে রাজপথে সরব হবে দলটি। এদিকে স্থানীয় সরকারের ভোট হলেও ভোটের প্রচারণায় জাতীয় ইস্যুতে সরকারের নানা ব্যর্থতার দিকগুলো তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। প্রচারণায় থাকছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুও। তৈরি করা হয়েছে কয়েক লাখ লিফলেট। প্রতিটি ঘরে এ লিফলেট পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভোটের জোয়ার তুলে শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকতে চায় বিএনপি। সূত্রমতে, ইভিএম নিয়ে বিএনপি নেতিবাচক বক্তব্য দিলেও দুই সিটিতে প্রাথমিকভাবে ৩ হাজার নেতা-কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হছে। খুব শিগগিরই এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি সংগঠন এ প্রশিক্ষণের দায়িত্বে থাকবে। সিটি ভোটকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে এরই মধ্যে নির্বাচন পরিচালনাসহ ১০টি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল থেকে মেয়র পদে প্রতীক নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মাঠে নেমেছে বিএনপি। বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি দুই ঢাকার ওয়ার্ড পর্যায়ে ২৫ জন করে নেতা-কর্মীকে ইভিএম বিষয়ে প্রশিক্ষণ করাব। তারা ওয়ার্ড পর্যায়ে আরও নেতা-কর্মীকে পোলিং এজেন্ট হিসেবে প্রশিক্ষণ দেবেন। দক্ষিণ সিটিতে ৭৫ ও উত্তরে ৫৪টি ওয়ার্ডেই এ কার্যক্রম চলবে। তবে এবার নেতা-কর্মী বাছাই করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।’ বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, কেন্দ্র পাহারায় এবার গতানুগতিক কমিটি করা হবে না। ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বেই এ কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এলাকায় যাদের পরিচিতি আছে, নানা প্রতিকূলতায় ভোট কেন্দ্রের আশপাশে থাকতে পারবেন, ভোটারদের নানাভাবে সাহস প্রদান করতে পারবেন তাদেরই এ তালিকায় নিয়ে আসা হচ্ছে। জানা যায়, দুই হেভিয়েট নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পাশাপাশি আরও সাতটি কমিটি গঠন করেছে বিএনপি। এগুলো হলো- লিগ্যাল এইড কমিটি, নির্বাচনী প্রচারণায় সাংস্কৃতিকবিষয়ক কমিটি, টকশোবিষয়ক পর্যবেক্ষক কমিটি, নির্বাচনে নিরপেক্ষতা ও ইভিএম বিষয়ে বিশিষ্টজনদের নিয়ে নাগরিক কমিটি, কূটনীতিকদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কূটনৈতিক কমিটি ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ভোটের প্রচারণার জন্য আরও কয়েকটি উপকমিটি কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এর বাইরেও তৃণমূলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের নিয়ে ভোট কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। যে কোন মূল্যে জয় চায় বিএনপি। এজন্য ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর