শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ক্রেতাদের চাপের মুখে পোশাকশিল্প

রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ বিজিএমইএর

রুহুল আমিন রাসেল

ক্রেতাদের শর্ত পালন করতে গিয়ে চাপের মুখে পড়েছে পোশাকশিল্প। দেশে রপ্তানি আয়ের প্রধান এই খাত বিদেশি ক্রেতাদের কমপ্লায়েন্স নিয়ে প্রচুর চাপ সামলাচ্ছে। আবার সামান্য অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি-বিচ্যুতি পেলেই কাস্টমস জরিমানা করছে। বন্ড সুবিধায় শর্তারোপ করা হচ্ছে। এতে রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ক্রেতারা চান নির্ধারিত সময়ে পণ্য। কিন্তু কাস্টমসে জটিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গিয়ে সময় নষ্ট হচ্ছে। রপ্তানি কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আবার কমপ্লায়েন্স নিয়ে ক্রেতাদের চাপও সামলাতে হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বন্ডেড ওয়্যারহাউসের অভ্যন্তরে পণ্য সংরক্ষণ ও গুদামজাতকরণের আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। পোশাকশিল্পের চলমান সমস্যা সমাধানে   জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে গত ১৪ ডিসেম্বর, ২১ নভেম্বর ও ৯ সেপ্টেম্বর পৃথক তিনটি পত্র দিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক। এর মধ্যে একটি পত্রে বলা হয়Ñ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড)-এ স্থাপিত কারখানাসমূহের সঙ্গে সাবকন্ট্রাক্ট, কুইলটিং, স্টোন ওয়াশ, ফেব্রিক্স রি-প্রসেসিং, তৈরি পোশাকে আইলেট সংযোজন, এমব্রয়ডারি, প্রিন্টিংসহ নানাবিধ কাজের জন্য অস্থায়ী বন্ড অনুমোদন করতে হয় কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থেকে। এতে শর্ত পূরণ ও নিয়ম-কানুন প্রতিপালন করে অনুমোদন দেওয়া হয়, যা সময়সাপেক্ষ এবং জটিল প্রক্রিয়া। এ অবস্থায় ইপিজেডের কারখানাসমূহের সঙ্গে ইপিজেডের বাইরের বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের সাবকন্ট্রাক্টসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা চেয়েছে বিজিএমইএ। ইপিজেডের ভিতর সহযোগী প্রতিষ্ঠানে সাবকন্ট্রাক্ট করার অনুমোদনের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করেছে, যা তৈরি পোশাকশিল্পের রপ্তানি বাণিজ্যকে জটিল করবে। এ অবস্থায় আরোপিত শর্ত প্রয়োগ না করে ইপিজেডের ভিতর ও বাইরে থাকা প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য ইন্টার-বন্ড কার্যক্রম অনুমোদনের ক্ষমতা চেয়েছে বিজিএমইএ। পোশাকশিল্পের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় প্রযুক্তি আমদানির অনুমোদন চেয়ে আরেকটি পত্রে বিজিএমইএ বলেছে, এ শিল্পে প্রতিনিয়ত কমপ্লায়েন্সের শর্ত পালন করার জন্য বিদেশি ক্রেতাদের প্রচুর চাপের সম্মুখীন হতে হয়। কমপ্লায়েন্স কারখানা গড়ে তোলার জন্য একটি আধুনিক বন্ডেড ওয়্যারহাউস ব্যবস্থা স্থাপন করা একান্ত প্রয়োজন। এতে বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে রপ্তানি আদেশ পাওয়া সম্ভব। ইতিমধ্যে অধিকাংশ পোশাকশিল্প কারখানায় রাকিং সিস্টেম প্রযুক্তি স্থাপন শুরু হয়েছে। এতে বন্ডেড ওয়্যারহাউসে অল্প জায়গায় অধিকসংখ্যক পণ্য গুদামজাতকরণ সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে রাকিং সিস্টেম প্রযুক্তি বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে উচ্চহারে শুল্ককর প্রযোজ্য, যা খুবই ব্যয়বহুল। পোশাকশিল্পের এই ক্রান্তিকালে ৫৮ দশমিক ৬০ শতাংশ শুল্ক প্রদান করে রাকিং সিস্টেম প্রযুক্তি আমদানি করা প্রায় অসম্ভব। এ ছাড়া রাকিং সিস্টেম প্রযুক্তির জন্য কোনো পৃথক এইচএস কোড নেই। কিন্তু পোশাকশিল্পে আধুনিক ও কমপ্লায়েন্স পদ্ধতিতে বন্ডেড ওয়্যারহাউস ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য রাকিং সিস্টেম প্রযুক্তি অত্যাবশ্যক। এ অবস্থায় পোশাকশিল্পের সব প্রতিষ্ঠানের জন্য রাকিং সিস্টেম প্রযুক্তি শুল্কমুক্ত ও রেয়াতি সুবিধায় আমদানির সুযোগ চেয়েছে বিজিএমইএ।

অন্য পত্রে বিজিএমইএ জানায়, বেনাপোল, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসসহ অন্যান্য কাস্টমস স্টেশনের মাধ্যমে পোশাকশিল্পের সুতা ও কাপড় আমদানির ক্ষেত্রে কাউন্ট ও কম্পোজিশনে সামান্য ত্রুটি-বিচ্যুতি পেলে জরিমানা করা হচ্ছে। এজন্য বিজিএমইএ ৫ থেকে ৭ শতাংশ পর্যন্ত টলারেন্স চাইলে বিষয়টি নিজেদের এখতিয়ারবহির্ভূত বলে জানিয়েছেন কাস্টমস কমিশনাররা। তবে রপ্তানির বৃহত্তর স্বার্থে এ টলারেন্স থাকা অতীব জরুরি।

সর্বশেষ খবর