শিরোনাম
শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

মুক্তহস্তে দান করুন

মির্জা মেহেদী তমাল

মুক্তহস্তে দান করুন

রাজধানীর সায়েদাবাদে যানজটের মাঝে ভরদুপুরে এ গাড়ি-ও গাড়িতে উঁকি দিচ্ছেন কয়েকজন লোক। মাথায় টুপি, লম্বা পাঞ্জাবি আর রুমাল রয়েছে কাঁধে। তারা মসজিদ-মাদ্রাসার নামে টাকা তুলছেন। কাউকে রিসিট দিচ্ছেন, কাউকে দিচ্ছেন না। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি তারা টাকা তুলছেন গাড়িতে হাত বাড়িয়ে। সাধারণ মানুষও তাদের হাতে দানের টাকা তুলে দিচ্ছেন।

হাটবাজার, ফুটপাথ, বিভিন্ন দোকান, দেয়ালে ঝুলানো অবস্থায় কিছু লাল বাক্স দেখা যায়। এ বাক্সগুলার সঙ্গে আমরা কম-বেশি সবাই পরিচিত। যার নাম হচ্ছে ‘দানবাক্স’। মসজিদ, মাদ্রাসা, মাজার বা বিভিন্ন পীরের নামে সারা দেশে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে ৫০ লাখেরও বেশি এমন দানবাক্স। ফোন নাম্বার দেওয়া থাকলেও সবই থাকে বন্ধ। এসব দানবক্স বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় অবস্থিত মাজার অথবা নানা নামে থাকে। লাল ও কালো রঙের ছোট গোল এবং চৌকোনাবিশিষ্ট এসব দানবাক্সে সারা দেশে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা জমা পড়ে। মসজিদ-মাদ্রাসার নামে কিছু কিছু দানবাক্স থাকলেও মূলত মাজার ও পীরের নামে থাকা দানবাক্সের সংখ্যাই বেশি। কোথায় মসজিদ, কোথায় মাদ্রাসাÑ কয়জন রাখেন সে খবর? তাই দানের কথা বলে হাত বাড়ালেই মানুষ তুলে দিচ্ছেন টাকা। লাল রঙের গোল সেই দানবাক্স চোখের সামনে পড়লেই টাকা গুঁজে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু পুণ্যের আশায় দান করা ধর্মভীরু এসব মানুষের অনেকেই জানেন না তাদের টাকা আসলে যাচ্ছে কোথায়। মানুষের সরল অনুভূতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে পুঁজি করে জমজমাট ব্যবসা করছে এ চক্র। চক্র ছড়িয়ে আছে সারা দেশে। সায়েদাবাদে যে দলটি টাকা তুলছে, তাদের কাছে রয়েছে মহাখালী সাততলা বস্তির একটি মসজিদ ও মাদ্রাসার রিসিট। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেই মসজিদ কমিটি এমন গ্রুপ রাস্তায় নামিয়েছে টাকা তোলার জন্য। তাদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছেÑ তারা প্রতি মাসে মসজিদে ১০ হাজার টাকা জমা দেবে। ওপরে যা থাকবে সবই থাকবে দান আদায়কারীর। পটুয়াখালী মির্জাপুরের একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানার নামে লাল গোল বাক্স চোখে পড়ে সর্বত্র। এ বাক্স রাজধানীর পাশাপাশি ছড়িয়ে আছে সারা দেশে। রাজধানীর কারওয়ানবাজারে একটি চায়ের দোকানে দেখা মেলে এ দানবাক্স। চা দোকানদার বলেন, এ বাক্স খোলা হয় প্রতি মাসে। এ বাক্স থেকে টাকা ওঠে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার। এ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা দেওয়া হয় তাকে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, এ টাকার একাংশ দিতে হয় ওপর মহলে। ওপর মহল কে জানতে চাইলে চুপ হয়ে যান তিনি। প্রশাসনের হাতে যায় কিনাÑ এমন প্রশ্নের জাবাবে মৌন সম্মতি দেন। আবার এ দানবাক্সের রয়েছে সিন্ডিকেট। নিয়ন্ত্রিত হয় কিছু ব্যক্তি দ্বারা। সেই চায়ের দোকানদারের কাছে নম্বর নিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা। দোকানদার রশিদ নাম বললেও তিনি মোবাইলে নাম বলেন তরিকুল ইসলাম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দিয়ে রাজধানীর কয়েকটি বিশ্বিবিদ্যালয়ের সামনে কয়েকটি নতুন বাক্স লাগানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রথমে না বললেও পরে জানান, ২০টা বাক্স লাগাতে পারবেন। এ জন্য তাকে দিতে হবে প্রথমে ২০ হাজার টাকা। এর পর প্রতি মাসে দিতে হবে ২০ হাজার টাকা করে। আর বছরে দুবার কিছু টাকা দিতে হবে এতিমখানায়। তাকে এ মুহূর্তে ২০ হাজার টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। বাক্স লাগানোর পর আপনাকে টাকা দেওয়া হবে বললে, তিনি বলেন তাহলে ভাই টাকা জোগাড় করে ফোন দিয়েন। ব্যবসা করবেন খালি হাতে। তা কি আর হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইসলাম ধর্ম কখনো মাজার সংস্কৃতিকে অনুমোদন করে না, তার পরও ধর্মকে পুঁজি করে আর সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে সারা দেশে একশ্রেণির ধর্ম ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষের পকেট থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, মসজিদ-মাদ্রাসা হলো সম্মানিত প্রতিষ্ঠান। আর এ মসজিদের জন্য দান করতে হবে সম্মানিত পদ্ধতিতেই। ভিক্ষাবৃত্তি করে নয়। এক্ষেত্রে মসজিদের সীমানার ভিতরে রাখা দানবাক্স বা সঠিক দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকের হাতেই দান করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর