রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত আজ

গাজীপুর ও টঙ্গী প্রতিনিধি

বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত আজ

ইজতেমা ময়দানে গতকাল মুসল্লির ঢল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমা ময়দান। প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে লাখ লাখ মুসল্লির ঢল এখন ময়দানমুখী। আজ আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের এ ঢল অব্যাহত থাকবে। তাবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বিদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ান ও মুসল্লিদের নফল নামাজ, তাসবিহ তাহলিল, জিকিরের মধ্য দিয়ে গতকাল বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত হয়েছে। আজ সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে আলমি শূরাদের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত তিন দিনব্যাপী ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এরপর চার দিন বিরতি দিয়ে আগামী ১৭ জানুয়ারি সা’দ অনুসারীদের তত্ত্বাবধানে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে এবং ১৯ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমা শেষ হবে। প্রথম পর্বের আয়োজন শেষ করে ময়দান প্রশাসনের  কাছে বুঝিয়ে দেবেন আয়োজক কমিটি। আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় কল-কারখানা ছুটি ঘোষণা করেছেন কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া টঙ্গী-কালিগঞ্জ সড়ক, কামারপাড়া সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, আশুলিয়া সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। যারা ময়দানে জায়গা পাননি তারা সড়ক মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছেন। আবার অনেকে বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসা ও ময়দানের আশপাশে খালি জায়গায় চট কিংবা বিভিন্ন সামানা বিছিয়ে অবস্থান নিচ্ছেন। এবারের বিশ্ব ইজতেমায় বিপুলসংখ্যক মুসল্লি হাজির হওয়ায় মাঠে জায়গা পাচ্ছেন না অনেকে। টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুর এলাকা থেকে আসা এক মুসল্লি আলী মাস্টার জানান, তাদের ৫০ জনের একটি জামাত ইজতেমা ময়দানে আসেন, কিন্তু জায়গা না পেয়ে ফেরত চলে যান। আবার অনেকে ময়দানের বাইরে অবস্থান নিয়ে কষ্ট করে বসে আছেন, আখেরি মোনাজাত শেষ করেই তারা ময়দান ত্যাগ করবেন। আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য। এ ছাড়া দেশি-বিদেশি মুসল্লিদের সেবায় সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাড. শেখ মো. আবদুল্লাহ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুর সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর জেলা প্রশাসন এস এম তরিকুল ইসলাম। নিরাপত্তার বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, আগত লাখ লাখ মুসল্লির নিরাপত্তায় পুলিশ, র‌্যাব, গোয়েন্দাসহ যৌথ বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য ৫ স্তরে ভাগ হয়ে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে ১৫টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। র‌্যাবের পক্ষ থেকে ১০টি ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন, ১১টি চেকপোস্ট, হেলিকপ্টার ওঠানামার জন্য দুটি পয়েন্টে হ্যালিপ্যাডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। থাকছে পুরো ময়দানজুড়ে সিসিটিভি, আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর। খিত্তায় খিত্তায় নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর পাঁচটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র চালু রয়েছে। নিরাপত্তা মনিটরিংয়ের জন্য একটি প্রধান কন্ট্রোল রুম ও ৮টি সাব কন্ট্রোল রুম স্থাপিত হয়েছে। এ ছাড়াও ইজতেমা মাঠসহ আশপাশে কোথায় কী হচ্ছে তা সিসিটিভিতে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে।

মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বয়ান : গতকাল বাদ ফজর ভারতের মাওলানা আবদুর রহমান ইমান, আমল, জাহান্নাম, জান্নাত ও দাওয়াতে মেহনতের ওপর গুরুত্বপূর্ণ বয়ান রাখেন। তিনি তাঁর বয়ানে বলেন, আমাদের জানমাল দ্বীনের দাওয়াতের কাজে ব্যয় করতে হবে। ঘর তৈরি করতে গেলে যে পরিমাণ মেহনত করা প্রয়োজন, ঠিক একইভাবে দাওয়াতের কাজে যে পরিমাণ মেহনত করা প্রয়োজন, সে পরিমাণ মেহনত করলে আল্লাহতায়ালা আমাদের দাওয়াতকে কবুল করবেন। আর দাওয়াত কবুল হলে আমাদের দোয়া কবুল হবে। দোয়া কবুল হলে আমাদের জীবন পরিবর্তন হয়ে যাবে।

আরও ৫ মুসল্লির মৃত্যু : গত শুক্রবার রাত ও শনিবার সকালে ময়দানে আরও পাঁচ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেনÑ রাজশাহী জেলার চারঘাট থানার বন কিশোর গ্রামের আবদুর রাজ্জাক (৬৫), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ থানার বড় তল্লা গ্রামের শাহজাহান (৬০), কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার ভিংলাবাড়ি গ্রামের তমিজ উদ্দিন (৬৫), নওগাঁ জেলার শহিদুল ইসলাম (৫০) ও বরিশালের গৌরনদী থানার আলী আজগর (৭০)। এ পর্যন্ত ৯ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।

মুসল্লিদের দুর্ভোগ : ময়দানের বাইরে অবস্থানকৃত মুসল্লিরা পানি, টয়লেট, রান্নাবান্নাসহ থাকার জায়গা নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। পানি সংকটে বিভিন্ন জায়গা থেকে পানি কিনে ব্যবহার করছেন। আবার অনেকেই জায়গা না পেয়ে ইজতেমা শেষ না করেই ফেরত চলে গেছেন।

যৌতুকবিহীন বিয়ে : গতকাল বাদ আসর ময়দানের মূল মঞ্চের পাশে ৯৮ জন নারী-পুরুষকে যৌতুকবিহীন বিয়ে পড়ানো হয়েছে। এর আগে দুপুরে বিদেশিদের কামরায় গাজীপুরের গাছা এলাকার বাসিন্দা রতন বসাক হিন্দু থেকে মুসলিম হয়েছেন। আয়োজক কমিটির মুরব্বি ডা. কাজী সাহাবুদ্দিন ও মিডিয়া সমন্বয়কারী জহির বলেন, আলমি শূরাদের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এবারের বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের ময়দানে জায়গা দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই আগামী বছর প্রথম পর্ব দুই ভাগে করার দাবি জানান তারা। আয়োজক কমিটির লোকজন আরও বলেন, দুই ভাগে ভাগ না করলে মুসল্লিদের চরম সমস্যা হবে, তাই সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি বিবেচনায় আনা দরকার বলে মনে করছেন তারা।

সর্বশেষ খবর