রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা

বহুজাতিক ও শীর্ষ কোম্পানির শেয়ারেরও দর কমছে

আলী রিয়াজ

আতঙ্কিত এখন শেয়ারবাজারের সব বিনিয়োগকারী। যারা শেয়ারবাজারে বৃহৎ বিনিয়োগ নিয়ে স্থিতিশীলতা ধরে রাখেন তারাও আতঙ্কে রয়েছেন। কারণ শেয়ারবাজারে ভালো ও ব্লু চিপস বলে পরিচিত বহুজাতিক ও বড় মূলধনী কোম্পানির শেয়ারদর কমছে। ২০১০ সালে ভয়াবহ ধসের সময়ও এসব কোম্পানির শেয়ার দর তুলনামূলক স্থিতিশীল ছিল। গত ডিসেম্বরে কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর ব্যাপক কমছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে এখন কেউ বিনিয়োগ ধরে রাখতে চাচ্ছে না। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন, এ ছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছেন। তাই সব ধরনের কোম্পানির শেয়ারদর কমছে। এভাবে ভালো কোম্পানির শেয়ারদর কমতে থাকায় বাজারে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভুক্ত ভালো কোম্পানি বা ব্লু চিপস বলে পরিচিতি সব শেয়ারের দর কমছে। তালিকাভুক্ত বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ারদরও একইভাবে কমছে। এর মধ্যে রয়েছেÑ রেকিটবেন, গ্লাক্সোস্মিথ, মেরিকো, বার্জার, লিনডে বিডি, রেনাটা, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট, বিএটিবিসি, রেনইউক, ন্যাশনাল টি, ফার্মা এইড,  এমবি ফার্মা, গ্রামীণফোন, স্কয়ার ফার্মা, এপেক্স ফুড ইত্যাদি। ২০১০ সালের ভয়াবহ ধসের পর তালিকাভুক্ত থাকা এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে বিনিয়োগকারীদের। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সাধারণত এসব ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে থাকেন। কিন্তু সাম্প্রতিককালে দেখা গেছে, অন্যান্য কোম্পানির মতো বড় মূলধনী সব কোম্পানির শেয়ারের দর কমছে। এসব কোম্পানির মধ্যে গ্রামীণফোন নিয়ে বিটিআরসির সঙ্গে সংকট থাকায় প্রতিষ্ঠানটির দর এক মাসে ৩৩০ টাকা থেকে ২৫৯ টাকায় নেমেছে। ডিএসইর তালিকাভুক্ত কোম্পানির সবচেয়ে বেশি দামের শেয়ার রেকিট বেঙ্কইজার-এর দর ৩৩০০ টাকা থেকে ২৮০০ টাকায় নেমেছে। এক মাসে কমেছে ৫০০ টাকার বেশি। এভাবে গ্লাক্সোস্মিথ ১৮৬০ থেকে ১৬৫৬ টাকা, বার্জার ১৪১০ থেকে ১৩০০ টাকা, লিনডে বিডি ১৩০০ থেকে ১২১০ টাকা, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্ট ১০০৫ থেকে ৯৫০ টাকায় নেমেছে। এভাবে সব কোম্পানিই তাদের শেয়ার দর হারিয়েছে। ডিএসইর তালিকা করা শীর্ষ কোম্পানিগুলোর (ডিএস-৩০) দরও একইভাবে কমেছে। অর্থাৎ কেউ তাদের বিনিয়োগ ধরে রাখার সাহস পাচ্ছে না। আতঙ্কিত হয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজার ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ডিএসইতে ২০১৯ সালে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করেছেন ৭ হাজার ৮৪৫ কোটি  টাকার শেয়ার। এর মধ্যে বিক্রি করেছেন ৪ হাজার ১৬৬ কোটি টাকার শেয়ার। আর কিনেছেন ৩ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। নতুন বিনিয়োগ না এসে উল্টো প্রায় হাজার কোটি টাকা কমেছে বিদেশি বিনিয়োগ। আগের বছরেও বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ কমে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, গত ১০ বছরে শেয়ারবাজারকে সামান্য পরিমাণ এগিয়ে নিতে পারেনি সরকার। বাজারে বড় ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীও এখন সন্দিহান হয়ে উঠেছে যে, আপাতত বাজারের কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন নেই। এতে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাজার ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এটা খুবই আশঙ্কার বিষয়, কারণ যারা বাজার ছেড়ে চলে যাচ্ছে তাদের ফেরানো খুবই কঠিন হবে। বিনিয়োগকারীদের বড় অংশ এখন মনে করছেন, বিনিয়োগ ধরে রাখার মানে হচ্ছে আরও লোকসান গোনা। তাই তারা দ্রুত শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। বিনিয়োগ ধরে রাখার মতো তাদের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু কথা বললে বাজারে আস্থা ফিরবে না। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে। তাদের বাজারে নিয়ে আসতে হবে। ভারত ও পাকিস্তানে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত। কিন্তু এখানে বহুজাতিক কোম্পানি তালিকাভুক্ত হতে চায় না। এটা কর্তৃপক্ষের ওপর আস্থাহীনতার কারণে। দ্রুত এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর