শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

নারীবান্ধব নয় মেগাসিটি ঢাকা

নারীর জন্য বিশ্বের ভয়ঙ্কর শহরের তালিকায় ঢাকা সপ্তম ♦ গণপরিবহন, রাস্তাঘাট ফুটপাথ, পাবলিক টয়লেট ও পার্কে নারীর ব্যবহার উপযোগিতা সীমিত

জিন্নাতুন নূর

নারীবান্ধব নয় মেগাসিটি ঢাকা

মেগাসিটি ঢাকায় বসবাসরত বিভিন্ন বয়সী ও শ্রেণি-পেশার নারীকে  দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে যেতে হয়। কিন্তু ঘরের বাইরে যেতেই অধিকাংশের মনে ভর করে এক অজানা আতঙ্ক। এলাকার বখাটে থেকে শুরু করে রাস্তাঘাটের উত্ত্যক্তকারীর অশ্লীল চাহনি এবং গণপরিবহন ও পাবলিক প্লেসে অপরিচিত ব্যক্তির আপত্তিকর স্পর্শ থেকে বাঁচতে নারীদের সতর্ক থাকতে হয়। ঢাকার গণপরিবহন, রাস্তাঘাট, ফুটপাথ, পাবলিক টয়লেট, পার্কের মতো গণপরিসরেও নারীদের ব্যবহার উপযোগিতা সীমিত। এ কারণে শঙ্কা, নিরাপত্তাহীনতা ও সহিংসতার ভয় নিয়ে এই শহরে নারীদের চলাচল করতে হয়। অ্যাকশন এইডের জরিপভিত্তিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে ঢাকা শহর ‘নারীবান্ধব নয়’। আবার নগরবিদরাও মনে করেন ঢাকা কোনো অবস্থাতেই নারীবান্ধব নয়। অ্যাকশন এইডের জরিপভিত্তিক ‘নারী সংবেদনশীল নগর পরিকল্পনা’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে জানানো হয়, ঢাকা শহরের প্রায় ২২.৫ শতাংশ নারী বাইরে বের হয়ে বাস সহকারী, চালক বা সহযাত্রীর কাছ থেকে যৌন হয়রানির শিকার হন। এ ছাড়া রাজধানীর ৫৬ শতাংশ নারী ভালো পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় ঘরের বাইরে যেতে চান না। ঢাকার মার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, ফুটপাথ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন বয়সের ২০০ জন নারীর ওপর জরিপ চালিয়ে তৈরি এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ কথা বলছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাটি। গবেষণাপত্রে বলা হয়, ২৬ শতাংশ নারীর নিরাপত্তার অভাবে তাদের পরিবার ঘরের বাইরে যেতে দেয় না। আর অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে ৫৮ শতাংশ নারী গণপরিবহনে উঠতে পারেন না। ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ নারী মনে করেন, ফুটপাথগুলো যথেষ্ট প্রশস্ত নয়। তাই চলাচলে সমস্যা হয়। ৯৩ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা পাবলিক টয়লেট ব্যবহার করেন না নিরাপত্তা ও সুবিধার অভাবে। জরিপে ৮৭ শতাংশ নারী বলেছেন, ঢাকা শহরে নেই পর্যাপ্ত পার্ক ও উদ্যান; যেগুলো আছে সেগুলো নিরাপদ নয় বলে মনে করেন ৪২ শতাংশ নারী। রাজধানীর গণপরিবহন সম্পর্কে ৭৮ দশমিক ৫ শতাংশ নারী বলেন, বাসের সংখ্যা অপ্রতুল। নগরীতে পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট না থাকার কারণে নারীরা নানা ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন বলেও উঠে আসে গবেষণাপত্রে। নগরবিদ ও স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা কোনো অবস্থাতেই নারীবান্ধব নয়। এ শহরে নারীদের জন্য পর্যাপ্ত টয়লেটের সুযোগ-সুবিধা নেই। আর মেডিকেল প্রতিবেদন অনুযায়ী টয়লেট না থাকায় ঢাকার নারীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই কিডনি রোগে ভোগেন। রাতে কিংবা দিনে কোনো সময়ই এই শহরের নারীরা স্বাধীন ও স্বাভাবিকভাবে সড়কে চলাচল করতে পারেন না। গণপরিবহনে উঠতে গিয়েও নারীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। যেহেতু প্রয়োজনীয় কাজে ঢাকায় নারী-পুরুষ সবাইকে ঘরের বাইরে যেতে হয় এজন্য নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে নারীদের জন্য আলাদা সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থা থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন বিশে^ নারীবান্ধব মেগা সিটিগুলোর ওপর ২০১৭ সালে একটি জরিপ পরিচালনা করে। সেই জরিপের তথ্য অনুযায়ী, নারীদের জন্য ভয়ঙ্কর শহরের তালিকায় বিশ্বের ১৯টি মেগা সিটির মধ্যে ঢাকার অবস্থান সপ্তম। ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের এই শহরে নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা ও হয়রানির চেহারা খুব খারাপ। নারীদের জন্য এই শহরের সংস্কৃতি আরও খারাপ।

সর্বশেষ খবর