শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

মোড়ক এক পণ্য হরেক

মির্জা মেহেদী তমাল

মোড়ক এক পণ্য হরেক

ফেনীর ছাগলনাইয়ার বাসিন্দা কাশেম আলী। ঢাকায় এসেছেন তার ছেলের বাসায়। গোলাপবাগে তার ছেলের বাসায় যাওয়ার আগে নাতির জন্য তিনি কিছু কিনতে চান। রিকশা থেকে নেমে একটি দোকানে গিয়ে তিনি চকলেট কিনলেন। ডেইরি মিল্ক লেখা বেগুনি রঙের প্যাকেটের বেশ কিছু চকলেট নিয়ে ছেলের বাসায় গেলেন। দাদাকে দেখে ৫ বছরের নাতি মামুন দৌড়ে এলো। দাদা তাকে আদর করে কোলে তুলে নিলেন। পাঞ্জাবির পকেট থেকে চকলেট বের করে নাতির হাতে দিলেন। দুহাতে দুটি চকলেট দিয়ে আরও একটির প্যাকেট খুলে ফেললেন কাশেম আলী। নিজ হাতেই প্রিয় নাতির মুখে খাইয়ে দিলেন চকলেট। কোল থেকে নামিয়ে দেওয়ার পর মামুন খুশিতে ছোটাছুটি করতে থাকে।

মাত্র তিন থেকে পাঁচ মিনিট, এর পরই শিশু মামুন বমি করতে শুরু করে। ওর বমির শব্দে মামুনের বাবা-মা ছুটে যান। মামুনকে দেখে তারা আঁতকে ওঠেন। বমি করে ফ্লোর ভাসিয়ে ফেলছে। লালা বেরুচ্ছে। সঙ্গে চকলেটও বেরুচ্ছে। শিশু সন্তানের এমন অবস্থা দেখে ভয়ে চিৎকার শুরু করেন। দাদা ছুটে আসেন পাশের রুম থেকে। তারা মামুনকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। ভর্তি করান। চার দিন হাসপাতালে ছিল মামুন। এ যাত্রায় তার প্রাণ রক্ষা পেলেও শরীরের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে। ডায়েরিয়া-বমিতে কাবু হয়ে পড়ে শিশুটি। পুরোপুরি সুস্থ হতে দিন দশেক লাগে। চিকিৎসকরা বলেছেন, চকলেট খেয়েই মামুনের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। চকলেটটি ছিল নিম্নমানের। হাসপাতালে পৌঁছাতে দেরি হলে, হয়তো তাকে বাঁচানো সম্ভব হতো না। কিন্তু কাশেম আলী চিকিৎসকের এমন কথা শুনে আঁতকে ওঠেন। তিনি ডাক্তারকে বলেন, তিনি তো দেখেই কিনলেন। প্যাকেটটি তার চেনা বেশ। তবে লেখাগুলো ঠিকমতো পড়ে দেখেননি। সব সময় কি আর লেখা দেখে কেনা সম্ভব! কাশেম আলী বলেন, এ ধরনের চকলেট আগেও কিনেছেন। কিন্তু এমন তো হয়নি।

হাসপাতাল থেকে ছেলের বাসায় ফিরে চকলেটের মোড়ক খুঁজে পান। ভালো করে লেখাগুলো পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার বুক কাঁপে। কারণ, তিনি যে কোম্পানির চকলেট ভেবে কিনেছেন, আসলে সেটি তা নয়। হুবহু মোড়কের চকলেটটি নকল। দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই। শুধু এক জায়গায় ক্যাডবেরির স্থানে ভিন্ন একটি নাম ছোট করে লেখা রয়েছে। কাশেম আলী বুঝতে পারেন, তিনি ভেজাল চকলেট কিনেছেন। সেই চকলেট আবার নিজ হাতেই খাইয়েছেন তার নাতিকে। সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে তার নাতি প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। কাশেম আলীর নাতি মামুন হয়তো প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। বাজার থেকে কেনা এমন ভেজাল চকলেট খেয়ে শিশুদের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া বহু শিশু নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বাজার এখন ভেজাল ক্যাডবেরি ডেইরি মিল্ক চকলেটে সয়লাব। মুখরোচক খাবার চকলেট। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই যার ক্রেতা। ফলে চাহিদাও রয়েছে এর। আর এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল চকলেট উৎপাদন করে দেশি এবং বিদেশি ব্র্যান্ডের মোড়ক লাগিয়ে  বাজারজাত করছে। শুধু তাই নয়, নামিদামি চকলেটের মোড়ক হুবহু নকল করে বাজারজাত করছে তারা। বিদেশি মোড়ক দেখেই ক্রেতারা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এসব ভেজাল চকলেট। তুলে দিচ্ছেন প্রিয় মানুষদের হাতে। র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার হোসেন বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল চকলেট তৈরি করছে। এমন খবর তাদের কাছেও রয়েছে। গুলশানের বেশ কয়েকটি সুপারশপে অভিযান চালিয়ে এমন ভেজাল চকলেট উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, এমন বেশ কয়েকটি কারখানাও ধ্বংস করা হয়েছিল। তারা বলছেন, চকলেট কেনার আগে অবশ্যই নাম খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। মোড়কে কোথাও না কোথাও ব্যত্যয় খুঁজে পাওয়া যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর