বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাকায় ভোট পেছানোর দাবিতে ফের অবরোধ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

সরস্বতী পূজার কারণে ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে গতকাল আবারও শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যালয় অভিমুখে পদযাত্রা শুরুর পর শাহবাগ  মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে তারা। পরে সেখানেই প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এদিকে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের দাবিতে আজও (বৃহস্পতিবার) রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলসহ বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা। এতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আসিফ তালুকদার, সদস্য তানভীর হাসান সৈকত, জগন্নাথ হল ছাত্র সংসদের ভিপি উৎপল বিশ্বাস ও জিএস কাজল দাস প্রমুখ। মানববন্ধনে সাদ্দাম হোসেন বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পূজার দিনে নির্বাচনের তারিখ অনতিবিলম্বে পরিবর্তন করতে হবে। ইসির উদ্দেশে তিনি বলেন, হাই কোর্টের কাঁধে বন্দুক রেখে আপনারা নিজেরা সাম্প্রদায়িক সিদ্ধান্ত নিলে এটা ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না। উৎপল বিশ্বাস বলেন, একই দিনে সরস্বতী পূজা এবং নির্বাচন কখনো হতে পারে না। পরে নির্বাচন কমিশন অফিস অভিমুখে পদযাত্রা ও ঘেরাও কর্মসূচি পালন করার জন্য রওনা দিলে শাহবাগ মোড়ে বাধা দেয় পুলিশ। ফলে দুপুর পৌনে ২টার দিকে শাহবাগ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। শাহবাগ মোড় অবরোধ করার কারণে ওই সড়ক দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকে। অবরোধ চলাকালে এক ব্যক্তি গাড়ি নিয়ে শাহবাগ মোড় পার হতে চাইলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাকবিত-ার ঘটনা ঘটে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অবরোধের পর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করে অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা।

ঢাকার ভোট আগানো পেছানোর সুযোগ নেই : নির্বাচন কমিশন সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, ভোটের তারিখ পরিবর্তন নিয়ে ‘আন্দোলন করা ঠিক হচ্ছে না’, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অচিরেই তা বুঝতে পারবেন। ৩০ জানুয়ারিই ভোটের উপযুক্ত সময়। এ তারিখ আগানো বা পেছানোর সুযোগ নেই। নবীন বলেই অনেকে বুঝে, না বুঝে আন্দোলন করছেন। কয়েক দিনের মধ্যে তা বুঝে যাবেন আন্দোলন ঠিক হচ্ছে না। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন ইসি সচিব। বিকালে সিইসি ও কমিশনারদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে ভোটের তারিখ পরিবর্তন ও আন্দোলন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে উল্লেখ করেন সচিব মো. আলমগীর। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পূজার দিন নির্ধারিত সিটি ভোটের তারিখ পরিবর্তন নিয়ে রাজু ভাস্কর্য এলাকায় বিক্ষোভ করেন। দুপুরে শাহবাগ এলাকা অবরোধ করেন। বিকাল ৩টায় অবরোধ স্থগিত করে আজ বৃহস্পতিবার সকালে আবার বিক্ষোভের কর্মসূচি দিয়েছে।

 শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইসি সচিব মো. আলমগীর বলেন, আন্দোলন যারা করছেন তারা বয়সে কম, নবীন। তারা হয়তো কেউ বুঝে, কেউ না বুঝে করছেন। আমার ধারণা, কয়েক দিনের মধ্যে তারা বুঝে যাবেন যে, এটা ঠিক হচ্ছে না। ৩০ জানুয়ারিকে ভোটের উপযুক্ত দিন বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। আগানোরও সুযোগ নেই। নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত হচ্ছে ৩০ তারিখ। এর পক্ষে  যৌক্তিকতা তুলে ধরেন সচিব এভাবে- সরকারি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৯ জানুয়ারি সরস্বতী পূজা। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা।  এক দিনই সময় আছে, ৩০ তারিখ নির্বাচন করা যায়। রিট খারিজ হয়ে গেছে। কারণ তারা তাদের যে যুক্তি তা প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। আদালত নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত তারিখকে যুক্তিযুক্ত মনে করেছে এবং রিটটি খারিজ করে দিয়েছে। রিট খারিজের পর তারা জানিয়েছিলেন যে আপিল করবেন। কিন্তু আমরা খোঁজ নিয়েছি এখন পর্যন্ত কোনো আপিল দায়ের হয়নি। যেহেতু আপিল দায়ের হয়নি, অ্যাপিলেট ডিভিশন থেকে কোনো নির্দেশনা আসেনি। অতএব নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত ৩০ তারিখই ঠিক আছে। আন্দোলন শুরু হয়েছে ও বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছে- এতে নির্বাচনে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে সচিব বলেন, প্রভাব পড়ার কথাও নয়। কারণ কয়েক দিনের মধ্যে তারা বুঝে যাবেন যে আন্দোলন করা ঠিক হচ্ছে না। এটা হয়তো বা তারা না বুঝে করছেন। তারা হয়তো কেউ বুঝে, কেউ না বুঝে করছেন। আমার ধারণা একটু পরেই তারা বুঝে যাবেন যে এটা ঠিক হচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর