বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
আইসিজেতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলা

রোহিঙ্গা গণহত্যার রায় ২৩ জানুয়ারি

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

রোহিঙ্গা গণহত্যা ইস্যুতে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) আগামী ২৩ জানুয়ারি রায় ঘোষণা করবে। গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার করা মামলায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না সে বিষয়েই রায় দেবে আদালত। গাম্বিয়ার বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয় সোমবার এক টুইটে আদেশ দেওয়ার এ তারিখের কথা জানিয়েছে। অবশ্য পূর্ণাঙ্গ নাকি অন্তর্বর্তীকালীন রায় ঘোষণা করা হবে সে বিষয়টি স্পষ্ট করেনি আইসিজে। আইসিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থাগুলো। আইসিজের বিচারক প্যানেলের প্রধান আবদুলকাভি আহমেদ ইউসুফের নেতৃত্বে আইসিজের ১৭ সদস্যের বিচারক প্যানেল শুনানি করেছে। তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতেই রায় ঘোষণা করবেন। মুসলিম দেশগুলোর সংগঠন ওআইসির পক্ষে গত বছর নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া। তাতে অভিযোগ করা হয়, সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার। এ অভিযোগের শুনানিতে হেগে অবস্থিত আদালতে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের পক্ষ না নিয়ে, নির্যাতনকারী সেনাবাহিনীর পক্ষ নেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অং সান সু চি। তিনি সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গান। মিয়ানমারে গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন তিনি। উল্টো বলেন, মিয়ানমারের ওই পরিস্থিতিতে আদালতের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। এতে বিস্মিত হয় বিশ্ব। গাম্বিয়ার অভিযোগ, সেনা অভিযানের মাধ্যমে দেশ থেকে কমপক্ষে ৭ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে বিতাড়িত করে মিয়ানমার ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে। তাই আইনি প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গাদের আর যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় বা অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দিতে আইসিজের প্রতি আহ্বান জানায় গাম্বিয়া। নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের পিস প্যালেসে গত ১০ থেকে ১২ ডিসেম্বর মামলার শুনানিতে গাম্বিয়ার প্রধান কৌঁসুলি পল রিখলার বলেন, নৃশংসতার জন্য দায়ী সেনা সদস্যদের বিচার ও সহিংসতা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে মিয়ানমারের ওপর আস্থা রাখা যায় না। তাই মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চান গাম্বিয়ার প্রধান কৌঁসুলি। গাম্বিয়া রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থে অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদনে গণহত্যার আলামত সংরক্ষণের বিষয়েও আদেশ চেয়েছে। কারণ মিয়ানমার গণহত্যা চালিয়েছে কিনা তা প্রমাণের জন্য এসব আলামতের প্রয়োজন আছে। জানা যায়, ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে) কোনো ব্যক্তিবিশেষকে সাজা দিতে পারে না। তাই মিয়ানমারের গণহত্যা প্রমাণ হলেও অং সান সু চি কিংবা মিয়ানমারের জেনারেলদের গ্রেফতার করা কিংবা তাদের বিচার করার মতো পদক্ষেপ নিতে পারবে না আইসিজে। এই আদালতে শুধু জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গের অভিযোগ তুলতে পারে। মিয়ানমারকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত রায় দিলে নিষেধাজ্ঞা আরোপের মতো পদক্ষেপ আসতে পারে। তাতে মিয়ানমার বিশ্বে ভাবমূর্তি সংকট এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। আইসিজেতে মামলা হলে আদালতের সিদ্ধান্ত মানার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে সদস্য দেশগুলোর ওপর। আর সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করার কোনো সুযোগ নেই। তবে সিদ্ধান্ত মানতে বাধ্য করার কোনো ক্ষমতা নেই এ আদালতের। সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করারও বহু উদাহরণ রয়েছে। অবশ্য ব্যক্তিবিশেষকে সাজা দিতে সক্ষম জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) আলাদাভাবে রোহিঙ্গা গণহত্যার ঘটনার তদন্ত চালাচ্ছে। সেখানেও আলাদা মামলা হতে পারে।

সর্বশেষ খবর