শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ফেসবুক ঝড়ে সব শেষ

মির্জা মেহেদী তমাল

ফেসবুক ঝড়ে সব শেষ

বাবা-মায়ের পছন্দের মেয়েকে বিয়ে করে স্ত্রী-সংসার নিয়ে সুখেই দিন কাটছিল শামীমের (ছদ্মনাম)। বিয়ের পর স্ত্রী লায়লাকে নিয়ে চলে আসেন ঢাকায়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি। দিনের অধিকাংশ সময় শামীমকে বাসার বাইরেই থাকতে হয়। স্ত্রী বাসায় একা। সারা দিন কাটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। হঠাৎ ফেসবুকে লায়লার পরিচয় হয় জাহাঙ্গীর আলম বাপ্পী নামে একজনের সঙ্গে। প্রথমে পরিচয়, এরপর চ্যাটিং, পরিণতি প্রেম পর্যন্ত গিয়ে গড়ায়। দিনে দিনে তাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। সারা দিন কাজ শেষে শামীম বাসায় ফেরেন। কিন্তু লায়লা আগের মতো ঠিক করে কথাও বলতে চান না। কোনো কিছু জানতে চাইলেও উত্তর দেন না। সারাক্ষণ ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কার সঙ্গে এত কথা? জানতে চাইলে ছয়নয় বোঝানোর চেষ্টা করেন। এভাবে কাটে কিছুদিন। স্ত্রীর হঠাৎ এমন পরিবর্তনে শামীমের মনে সন্দেহ। খোঁজ নেন। যা খবর পেলেন, তাতে আঁতকে ওঠেন শামীম। তার স্ত্রী একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সঙ্গে পরকীয়ায় হাবুডুবু খাচ্ছেন। শামীম তার স্ত্রীর কাছ থেকে এমনটি আশা করেননি। মেনে নিতে পারেননি স্ত্রীর পরকীয়া। এর কিছুদিন পরই সংসারে অশান্তি শুরু হয়। আর এর পরিণতি হয় সংসার ভাঙার মধ্য দিয়ে। ফেসবুকে প্রেম করে শিশু সন্তান-স্বামীকে ফেলে ঘর ছাড়েন গৃহবধূ। এ নিয়ে থানা পুলিশও হয়। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ফেসবুকে গুজবসহ নানা কারণে মামলা হওয়ার নজির আছে। কিন্তু ফেসবুকে প্রেমের সূত্র ধরে সন্তান রেখে মায়ের চলে যাওয়ার ঘটনা সাধারণত শোনা যায় না বা মামলা হওয়ারও নজির কম।’ তিনি আরও জানান, ঢাকার পল্লবী এলাকার বাসিন্দা চাকরিজীবী হাসান নামে এক ব্যক্তির ঢাকার সিএমএম আদালতে দায়ের করা মামলার তদন্ত করতে গিয়ে মিলেছে এমন তথ্য। মামলার অভিযোগে বাদীর দাবি, তার স্ত্রী ফেসবুকে আসক্ত ছিলেন। ফেসবুক থেকে এক ছাত্রের সঙ্গে প্রেম হয়। সেই প্রেমের সূত্র ধরেই তার স্ত্রী চার বছরের সন্তান রেখে বা কোনো প্ররোচনায় পড়ে প্রেমিকের সঙ্গে চলে গেছেন। কর্মকর্তারা বলেন, ফেসবুক ঝড়ে সংসার তছনছ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মুঠোফোনে ইন্টারনেটের সুবাদে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো সহজলভ্য হওয়ায় তরুণরা ঝুঁকছে নানা অপকর্মে। এমনকি পাশে স্ত্রীকে রেখে স্বামী অন্যের স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক যোগাযোগ করছেন। পরকীয়ায় জড়াচ্ছেন। এতে বাড়ছে দাম্পত্য কলহ। সুখ উড়াল দিচ্ছে জানালা দিয়ে। শুধু দম্পতি নয়, উঠতি তরুণ-তরুণীরাও প্রচুর সময় ব্যয় করছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফেসবুক নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ছেন বহু তরুণ। এভাবে দিনের পর দিন পার করায় নৈতিক মূল্যবোধ বিদায় নিচ্ছে তাদের মধ্য থেকে। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক বলেন, ‘মানুষের নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধ নষ্ট হওয়ার কারণে পরকীয়া, খুন, হত্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক। অপসংস্কৃতি চর্চায় মানুষের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে স্বামী-স্ত্রীরা বিদ্যমান সম্পর্কের বাইরে গিয়ে অন্য মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করছেন। এতে সোনালি সংসার ভেঙে যাচ্ছে।’ এর থেকে বের হয়ে আসার উপায় সম্পর্কে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সন্তানদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। সামাজিক মূল্যবোধ শেখাতে হবে। ইন্টারনেটের অপব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পাঠ্যবইয়ে নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে।’

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর