শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বিভক্তি আওয়ামী লীগে মামলায় ব্যস্ত বিএনপি

জেলার রাজনীতি : যশোর

সাইফুল ইসলাম, যশোর

জেলার সব সংসদীয় আসন আওয়ামী লীগের দখলে। তবে সম্প্রতি যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সদস্য ইসমাত আরা সাদেক ইন্তেকাল করায় আসনটি শূন্য রয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনও হয়ে গেল মাত্র দুই মাস আগে গত ২৭ নভেম্বর। আগের কমিটি দল ভালোই চালিয়েছে। তারই পুরস্কার হিসেবে সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার আবারও যশোর আওয়ামী লীগের কা-ারি হলেন। দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ওই সম্মেলনের দ্বিতীয় অধিবেশনে নতুন কমিটির নাম ঘোষণা করেন, যেখানে জেলার ছয় সংসদ সদস্যকে জেলা কমিটির সদস্য হিসেবে রাখা হয়। শীর্ষ পদগুলো জেলার পরিচিত গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেরই দেওয়া হয়েছে। তাতে এক গ্রুপ একটু বেশি খুশি হয়েছে, অন্য গ্রুপ একটু কম। বেজার হননি কেউ। গ্রুপিং, রেষারেষি সত্ত্বেও এগিয়ে চলছে দল। অনেকেই বলছেন, এই গ্রুপিং থাকার কারণেই যশোরে আওয়ামী লীগ ক্রমেই সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হচ্ছে। কেন্দ্রও সম্ভবত তাই ভাবছে। তাই গ্রুপিং না মিটিয়েই যশোর আওয়ামী লীগের শক্তি ধরে রাখার কৌশল নিয়েছেন তারা, এমনটাই  মনে করছেন অনেকে। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার দলের একটি বড় অংশকে দীর্ঘ সময় সঙ্গে রেখে নিজের সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। অন্যদিকে যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের সঙ্গেও আছেন অনেক নেতা-কর্মী। সব মিলিয়ে জেলার রাজনীতির মাঠ এখন পুরোটাই আওয়ামী লীগের দখলে। কেন্দ্রীয় অনেক কর্মসূচি তারা আলাদাভাবে পালন করলেও কার্যত রাজনীতির মাঠ আওয়ামী লীগের দখলেই থাকছে। এদিকে গত নভেম্বরে আওয়ামী লীগের যশোর সদর উপজেলা ও শহর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও নতুন কমিটি হয়েছে। তবে জেলা যুবলীগ চলছে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে। তাদের কোনো কর্মসূচিই সেভাবে পালন হয় না। অনেকটাই নিষ্ক্রিয় তারা। আর ২০১৯ সালের মার্চে কেন্দ্র থেকে যশোর জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরপর আর নতুন কমিটি হয়নি। এদিকে যশোর বিএনপি মাঝে মধ্যেই খোলস ছেড়ে বাইরে বেরুনোর চেষ্টা করলেও তা পেরে উঠছে না। কেন্দ্রীয় কর্মসূচিসহ বিভিন্ন প্রোগ্রাম করার জন্য তাদের পুলিশের অনুমতির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। ফলে তাদের সব কর্মসূচিই দলীয় কার্যালয়ে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। তবে এভাবেও তারা কেন্দ্রীয় বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়মিত পালন করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের স্ত্রী নার্গিস ইসলামকে আহ্বায়ক করে ৫৩ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি করা হয় গত বছর এপ্রিলে। এই কমিটি করতে গিয়েও দলের সিনিয়র নেতারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। পরে কিছু যোগ-বিয়োগ করে আহ্বায়ক কমিটি চূড়ান্ত করা হয়। সেই কমিটি এখনো দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। দলটির অনেক নেতাই বলছেন, তাদের নেতা-কর্মীরা মামলা-হামলায় জর্জরিত, কোর্টে হাজিরা দিতে দিতে ক্লান্ত, আর্থিকভাবে সর্বস্বান্ত। যারা বিভিন্ন মামলায় জামিনে আছেন, তারা কিছুটা প্রকাশ্যে বের হতে পারছেন। যারা নানা কারণে জামিন নিতে পারেননি, তারা ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ অবস্থায় তাদের রাজনীতি করতে হচ্ছে অনেক চিন্তা-ভাবনা করে। নতুন করে নেতা-কর্মীদের আবারও মামলায় জর্জরিত করার দায় কেউ নিতে চাচ্ছেন না। সে কারণেই সব কর্মসূচি নির্বিষ, নিরীহভাবে সাবধানের সঙ্গে পালন করছেন তারা।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শরিক দলগুলোর তৎপরতা খুব একটা চোখে পড়ে না। জাসদ (ইনু) জেলা কার্যালয়ের মধ্যে নিয়মিত কিছু প্রোগ্রাম করে। ওয়ার্কার্স পার্টি কিছুটা সক্রিয় থাকলেও সম্প্রতি তা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম নেতা কমরেড অমল সেনের মৃত্যুবার্ষিকীও গত সপ্তাহে দলটির দুই অংশ আলাদাভাবে পালন করেছে। জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কোনো কর্মসূচি থাকলে মাঝে মধ্যে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয়। জামায়াতেরও  প্রকাশ্যে কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। এর বাইরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির অন্য শরিক দলগুলো একেবারেই নিষ্ক্রিয়।

উপজেলা পর্যায়েও রাজনীতির মাঠ মূলত আওয়ামী লীগের দখলে। সেখানেও বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীরা মামলায় জর্জরিত থাকলেও কোনো কোনো জায়গায় তারা মাঝে মধ্যে কর্মসূচি পালন করতে পারছেন। কিন্তু উপজেলা পর্যায়ে শরিক দলগুলোর কোনো তৎপরতাই নেই। তবে যশোর-৪ আসনের (কেশবপুর) সংসদ সদস্য ইসমাত আরা সাদেকের মৃত্যুতে ওই আসনটি শূন্য হওয়ার পর সেখানকার রাজনীতি এখন নির্বাচনের দিকে ঝুঁকছে। উপনির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই তৎপরতা শুরু করেছেন। তাই নিশ্চিত করেই বলা যায়, আগামী তিন মাস যশোরের রাজনীতির পর্যবেক্ষকদের চোখ থাকবে কেশবপুরের দিকেই।

সর্বশেষ খবর