শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সমুদ্রসৈকতে সাংস্কৃতিক মিলনমেলা

কক্সবাজার থেকে মোস্তফা মতিহার

সমুদ্রসৈকতে সাংস্কৃতিক মিলনমেলা

বিস্তীর্ণ সাগর। চারদিকের অথৈ জলরাশি গোধূলিলগ্নের দিগন্তে মিশে একাকার। পশ্চিমাকাশের সূর্যটাও অস্তমিত হওয়ার জন্য সমুদ্রের অথৈ জলে হেলে পড়ছে। সাগর আর সূর্যের মিলনের এ এক হৃদয়হরণ করা নৈসর্গিক শৈলী। আর সৈকতে আছড়ে পড়া সেই ঢেউয়ে চিত্রিত হলো প্রকৃতির অপার সুষমার শৈল্পিকতা। অস্তমিত সূর্য আর ঢেউয়ের গর্জনের সঙ্গে সৈকতের উন্মুক্ত মঞ্চে সুরের মূর্চ্ছনা, নৃত্যের ঝংকার আর বাউলের একতারায় অনন্য এক সন্ধ্যার সৃষ্টি হয়েছিল পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের লাবণী পয়েন্টে। সাগর ও সূর্যের মিলনের এমন নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের সঙ্গে তাল মিলিয়েই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে শুরু হলো দুই দিনব্যাপী ‘সৈকত সাংস্কৃতিক উৎসব ২০২০’। নীলাকাশে রং-বেরঙের বেলুন উড়িয়ে গতকাল বর্ণিল এ উৎসব উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী  লাকী। কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুল আফসারের  সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আদিবুল ইসলাম, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল। এতে স্বাগত বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব বদরুল আনাম ভূঁইয়া।

উদ্বোধনকালে লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ঋদ্ধ, সৃজনশীল ও মানবিক সমাজ গঠনের অংশ হিসেবে এ বছর বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতে প্রথমবারের মতো এ উৎসব শুরু করেছি। আমাদের  সংস্কৃতির সঙ্গে বিদেশি পর্যটকদেরও একটা সুনিবিড় সম্পর্ক তৈরি হবে। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী এবং কক্সবাজার, বান্দরবান ও চট্টগ্রামের শিল্পীদের নিয়ে শুরু হয় সংস্কৃতির মহাযজ্ঞ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই অ্যাক্রোবেটিক শো পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অ্যাক্রোবেটিক দল। শারীরিক কসরতের নৈপুণ্যে সৈকতের উন্মুক্ত মঞ্চ থেকে আগত দর্শকদের মধ্যে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেন অ্যাক্রোবেটিক শিল্পীরা। এরপর সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন পাহাড়ি জেলা বান্দরবানের ত্রিপুরা নৃগোষ্ঠীর শিল্পীরা। উদ্বোধনী সন্ধ্যায় মারমা সম্প্রদায়ের শিল্পীরা পরিবেশন কপ্রণ ময়ূরনৃত্য ও ছাতানৃত্য,  ম্রো সম্প্রদায়ের শিল্পীরা নাচের মাধ্যমে তুলে ধপ্রণ তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির নববর্ষের নৃত্য ও যুগল নৃত্য। চাকমা সম্প্রদায়ের শিল্পীরা পরিবেশন কপ্রণ বিজুনৃত্য ও জুমনৃত্য। নাচের পর একক গান নিয়ে মঞ্চে আসেন স্থানীয় শিল্পী মানষী বড়ুয়া। ‘ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনেরও মন্দিরে’ কবিগুরুর এমন বাণীর সুরে অনুষ্ঠানস্থলে রবীন্দ্রনাথকে মূর্ত করে তোলেন স্থানীয় এ শিল্পী। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও একক সংগীত পরিবেশন করেন মিনা মল্লিক, মেহরীন রাহাব্বাত ইফশিতা ও মো. জাহিদ। এদিনের আয়োজনে সমবেত নৃত্য, সমবেত সংগীত, একক সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিল্পীরা। উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে লাবণী পয়েন্টের বিস্তীর্ণ প্রান্তরে স্থাপন করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৪৩ ফুট দৈর্ঘ্যরে প্রতিকৃতি।

সর্বশেষ খবর