শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রার্থীদের অভিযোগ ঝুড়িতে সত্যতা পাচ্ছে না ইসি

প্রতিদিনই আসছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

গোলাম রাব্বানী

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিদিনই নির্বাচন কমিশন ও দুই রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে অভিযোগ আসছে। দুই রিটার্নিং অফিসারের কাছে ৯৪ লিখিত অভিযোগ পড়েছে। রিটার্নিং অফিসাররা এসব অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন।

এদিকে নির্বাচন কমিশনেও শতাধিক অভিযোগ এসেছে। তবে দুই সিটির কোনো অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের ফাইলে রাখা হচ্ছে না। যখন যার কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে, তা ওই টেবিলেই থাকছে। নির্বাচন কমিশনার ও কর্মকর্তারা অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ফেলে দিচ্ছেন ঝুড়িতে। নির্বাচন কমিশনে কত অভিযোগ পড়েছে এবং এগুলো ফাইলে উপস্থাপন হচ্ছে কিনা জানতে ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, অভিযোগ আমলে নেওয়া দূরের কথা, অভিযোগ যাচ্ছে সব ঝুড়িতে। অন্যদিকে রাতের আঁধারে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ উঠছে দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। পোস্টার, ব্যানার, প্রচারণা ও মাইকিংয়ের ক্ষেত্রে কেউ আচরণবিধি মানছে না। প্রতিদিনই আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আসছে ইসিতে। এ নিয়ে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়ায় ‘ঘাটতি’ রয়েছে বলে মনে করছেন ইসির কর্মকর্তারাও। সেই সঙ্গে ভোট নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগও করছেন মেয়র প্রার্থীরা। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, আচরণবিধি লঙ্ঘন চলছে। আচরণবিধি দেখার কেউ নেই। ইসির কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না। তাদের প্রশ্নÑ আচরণবিধি কজনে মানছেন? প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় কে? সাদা-কালো রঙের পোস্টার না দিয়ে রঙিন পোস্টার কেন? দেয়ালে কেন পোস্টার? কাউন্সিলরের পোস্টারে দলীয় প্রধানের ছবি কেন? রাস্তাঘাট বন্ধ করে সভা-মিছিল করছে কারা? সিটি নির্বাচনের প্রচারে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি। এ বিষয়ে সিইসির কাছে চিঠি দিয়েছে দলটি। একজন নির্বাচন কমিশনার আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশও করেছেন। সিইসির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন তিনি। তবে কোনো লাভ হয়নি। দুই সিটির সহকারী রিটার্নিং অফিসাররাও বলছেন, আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার চলছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও ব্যবহার করছেন প্রার্থীরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মাইকিং করা হচ্ছে। রঙিন পোস্টার দেখা যাচ্ছে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে। এ ছাড়া মেয়র প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা প্রার্থীর ছবি ও প্রতীক সম্বলিত টি-শার্ট ব্যবহার করছেন। যদিও এসব আচরণবিধির লঙ্ঘন। ৭ দিনেও অভিযোগের তালিকা পেল না ইসি : দুই সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং কতটি অভিযোগ পাওয়া গেছে তা জানতে দুই রিটার্নিং অফিসারকে গত ১৬ জানুয়ারি চিঠি দিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি ২০ জানুয়ারির মধ্যে চিঠির জবাব চেয়ে এখনো পাননি। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেনÑঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীগণ পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ দায়ের করছে। এ ছাড়াও প্রার্থীরা নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষ, বিশেষত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করছে বলে গণমাধ্যমে পরিলক্ষিত হয়। এসব অভিযোগ কতগুলো এবং কী কী ধরনের, তার বিশদ বিবরণসহ উল্লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, সে বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে ২০ জানুয়ারি বিকাল ৫টার মধ্যে আমার কাছে পেশ করা যেতে পারে। বিষয়টি জরুরি। তবে এই চিঠির জবাব তিনি ৭ দিনেও পাননি বলে তার দফতর সূত্রে জানা গেছে। তবে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি : ঢাকা উত্তর সিটির আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দুটি অভিযোগের একটিরও সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম। গত বৃহস্পতিবার তিনি এ কথা বলেন। আবুল কাসেম বলেন, আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগটি আচরণবিধি ভঙ্গের। সেখানে তিনি (তাবিথ আউয়াল) যে ছবিগুলো দিয়েছেন, সেগুলো সেদিনের ছবি ছিল না। ওখানে চারটা ছবি ছিল। তার মধ্যে দুটি ছবিতে তারিখ ও সময় বলা ছিল। ওই ছবি দুটোতে আতিকুল ইসলাম ছিলেন না। অন্য যে দুটি ছবি, সেখানে আতিকুল ইসলাম ছিলেন। তিনি বলেন, ‘একই ক্যামেরা দিয়ে তুললে দুটি ছবিতে তারিখ থাকলে অন্য দুটিতে থাকবে না কেন? ওই ছবিগুলো ফেক (ভুয়া) ছিল।’ আবুল কাসেম বলেন, আরেকটি অভিযোগের বিষয় স্মরণ নেই। তবে সেই অভিযোগেরও সত্যতা পাওয়া যায়নি। এর আগে ২০ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনা বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের দুই অভিযোগের বিষয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম। ঢাকা উত্তর সিটির বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ২০ জানুয়ারি ইসিতে একটি চিঠি দিলেও তা আমলে নেয়নি কমিশন। তিনি চিঠিতে লিখেছেন, “নির্বাচন বিধিমালা অনুসারে কোনো প্রার্থীর অধীন বা পক্ষে কর্মরত আছেন বা ছিলেন এমন কোনো ব্যক্তিকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আতিকুল ইসলাম উত্তর সিটি মেয়র পদে দায়িত্বরত ছিলেন। কিন্তু তার অধীনস্থ উত্তর সিটির কর্মকর্তা/কর্মচারীদের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হচ্ছে এবং তারা প্রশিক্ষণে নিয়োজিত রয়েছে। যা বিধানের পরিপন্থী।” ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিএনপি মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন ১৮ জানুয়ারি সিইসির কাছে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তিনি লিখেছেনÑ “ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস দক্ষিণ সিটির প্রতিটা থানায় একাধিক নৌকা মার্কার নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে তার নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছে। বিধিমালা বর্ণিত আছে যে, ‘একজন মেয়র প্রার্থী প্রতিটা থানায় একের অধিক নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করিতে পারিবে না’।” চিঠিতে এই প্রার্থী বলেছেন, আইনের তোয়াক্কা না করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রতিটা থানায় একাধিক নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করেছে। যা নির্বাচন আচরণ বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এদিকে আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও কঠোরভাবে আচরণবিধি মানতে প্রার্থীদের বাধ্য করার দাবি জানিয়ে গত ১৮ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। চিঠিতে বলা হয়- সব প্রার্থীর সমান সুযোগ প্রদান গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমাদান থেকে শুরু করে প্রতিদিন অনেক প্রার্থী, বিশেষত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন। এ বিষয়ে ইসির নির্বিকার ভূমিকা আমাদেরকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করেছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সব প্রার্থীকে আচরণবিধি মানতে বাধ্য করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিও জানিয়েছে দলটি।

সর্বশেষ খবর