মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

নারী পাচারের ভয়ঙ্কর চক্র

আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের ৮ সদস্য আটক, ৬ তরুণী উদ্ধার

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

র‌্যাব-১১ গত রবিবার এক অভিযানে আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের ৮ সদস্যকে আটক করেছে। এদের মধ্যে ১ জন নারী। ঢাকার কামরাঙ্গীরচর ও মুগদা এলাকায় তারা ধরা পড়েন। তাদের কবল থেকে পাচারের জন্য  আনা ২ তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ৩৯টি পাসপোর্ট, ৬৬টি পাসপোর্টের ফটোকপি, ১৮টি বিমানের টিকিটের ফটোকপি, ৩৬টি ভিসার ফটোকপি, ১টি কম্পিউটার এবং ১৯টি মোবাইল জব্দ করা হয়েছে। ধৃতরা হলো : পাচারের জন্য তরুণী সংগ্রাহক এজেন্ট নোয়াখালী জেলার সেনবাগের মো. হৃদয় আহম্মেদ ওরফে কুদ্দুস (৩৫), চাঁদপুরের মতলব থানার শিল্পী আক্তার (২৭), পটুয়াখালীর বাউফল এলাকার মো. মুসা ওরফে জীবন (২৮), মুন্সীগঞ্জের লৌহজং এলাকার রিজভি হোসেন ওরফে অপু (২৭), চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের মো. শিপন (২২), মাদারীপুরের কালকিনি এলাকার মো. স্বপন হোসেন (২২), চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের মো. মামুন (২৪) এবং লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জের মো. শাহাবুদ্দিন (৩৭)। শাহাবউদ্দিন ধানসিঁড়ি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক। সোমবার দুপুরের দিকে র‌্যাব-১১ এর সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে চক্রের ৮ সদস্যকে আটকের তথ্য দেওয়া হয়। র‌্যাব জানায়, চক্রটির সঙ্গে এজেন্ট, পাসপোর্টের দালাল, ড্যান্স বারের মালিক, ট্রাভেল এজেন্সি, ও অসাধু ব্যক্তিরা যুক্ত। চক্রের এজেন্টরা নিম্নবিত্ত পরিবার, পোশাক শিল্প এবং বাবা-মায়ের ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া পরিবারের সুন্দরী তরুণীদের টার্গেট করে থাকে। টার্গেট করা তরুণীদের ছবি বিদেশে অবস্থিত ড্যান্স বারের মালিককে পাঠানো হয়। ছবি দেখে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর ড্যান্স বারের মালিক অথবা তার প্রতিনিধি সরাসরি ঢাকায় অথবা আশপাশের কোনো রেস্টুরেন্টে অথবা লং ড্রাইভের নামে অত্যাধুনিক মাইক্রোবাসে তরুণীর সঙ্গে দেখা করে। র‌্যাব আরও জানায়, চূড়ান্ত নির্বাচিত তরুণীদের পাসপোর্ট চক্রটি তার নিজস্ব দালালদের মাধ্যমে প্রস্তুত করে এবং ট্রাভেল এজেন্ট মালিকদের মাধ্যমে নথিপত্র ম্যানেজ করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তরুণীদের মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়। বিদেশে পাচার করা তরুণীরা এয়ারপোর্টে নামার সঙ্গে সঙ্গেই পাচারকারী চক্রের সদস্যরা তাদের ‘রিসিভ’ করে হোটেলে নিয়ে গৃহবন্দী করে রাখে। প্রাথমিক অবস্থায় এরা অসামাজিক কাজ করতে রাজি না হলে তাদের নেশাজাতীয় দ্রব্য জোরপূর্বক প্রয়োগ করার মাধ্যমে দিনের পর দিন পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়। তরুণীদের কাউকে কোনো খদ্দের পছন্দ করলে বারের মালিককে নির্দিষ্ট পরিমাণের অর্থের বিনিময়ে কয়েক দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে থাকে। এর আগে ২৩ নভেম্বর দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব মোড়ের শাহ চন্দ্রপুরী রেস্টুরেন্ট থেকে এই চক্রের অনীক হোসেন (৩১), মো. মনির হোসেন ওরফে সোহাগ (৩০), মো. আক্তার হোসেন (৪০), মো. আফতাউল ইসলাম ওরফে পারভেজ (৩৭), আ. হান্নান (৫২) এবং মো. আকাশ (২৯) নামের ৬ জনকে আটক করেছিল র‌্যাব-১১। এ সময় বিদেশে পাচারের জন্য জড়ো করা ৪ তরুণীকে উদ্ধারসহ ৭০টি পাসপোর্ট, ২শটি পাসপোর্টের ফটোকপি, ৫০টি বিমানের টিকিট, ৫০টি ট্যুরিস্ট ভিসার ফটোকপি, ১টি সিপিইউ, ১টি মনিটর এবং একটি অত্যাধুনিক বিলাসবহুল মাইক্রোবাস ও নগদ এক লাখ ৫৮ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছিল। এ ধারাবাহিকতায় এবং আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য অনুসারে ২৬ জানুয়ারি অভিযান চালায় র‌্যাব।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর