মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
কুবির সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি

সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে মাদককে রুখে দিতে হবে

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, সামাজিক বিপ্লবের মাধ্যমে মাদককে রুখে দিতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে। তিনি বলেন, সারা দেশ মাদকে সয়লাব। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও মাদক পাওয়া যায়। শুনেছি কুমিল্লায়ও মাদকের রুট আছে।

গতকাল বিকালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে আচার্য ও রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। সমাবর্তনে ২ হাজার ৮৮৮ জন গ্র্যাজুয়েটকে ডিগ্রি দেওয়া হয়। শিক্ষায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৪ জন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক প্রদান করেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন করেছি। আজ সেই দেশটি মাদকের ছোবলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে। এজন্য শিক্ষার্থী, তরুণসমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় টাকা কামানো আর র‌্যাগিংয়ের জায়গা নয়। তোমরা অর্জিত ডিগ্রি ও সম্মানবোধকে ভূলুণ্ঠিত করবে না। বিবেকের কাছে কখনো পরাজিত হবে না। তিনি বলেন, শিক্ষার সঙ্গে মানবিক মূল্যবোধ পৃথিবীকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে মূলত জ্ঞানচর্চা, মুক্তচিন্তা আর মানবিক মূল্যবোধ বিকাশের ক্ষেত্র। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে নতুন নতুন জ্ঞানের ক্ষেত্র ও সে বিষয়ে কার্যকর, প্রাসঙ্গিক ও ব্যবহারিক কার্যক্রম প্রণয়ন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের বিশাল তরুণসমাজকে দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করার জন্য আনুপাতিক হারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই। এই বিবেচনায় বর্তমান সরকার প্রায় প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এতে দেশের সব অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা মানববিদ্যা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে এবং আগামীতেও পাবে। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী ও সমাবর্তন বক্তা আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ২০২৪ সালের পর আমরা মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাব। যারা লেখাপড়া করছ কেউ বেকার থাকবে না। শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব, সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক আলী আশরাফ, সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূইয়া ও আঞ্জুম সুলতানা সীমা, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ আফজল খান প্রমুখ।

রাষ্ট্রপতি হাসালেন : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ মজার কথা বলে নিজে হাসলেন এবং সবাইকে হাসালেন। অবশ্য সবাই অপেক্ষাও করছিলেন লিখিত বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপতির মজার বক্তব্য শোনার জন্য। তিনি লিখিত বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে মজার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনটা ভালো নেই। আমার বউ চলে গেছে। গণভবনে এদিক থেকে সেদিকে যেতে পারি না। সবাই জেনে যায়। অথচ আমার বউ কোথায় গেছে কেউ জানে না! পরে জানলাম মেয়ের বাসায় গেছে। ফোন করলে নাতনি ধরে। সে আমাকে নানাভাই বলে ডাকে। সে বলে- নানাভাই নানু বলছে তিনি আর বঙ্গভবনে যাবেন না। মনে মনে বললাম, বয়সকালে চলে গেলে তো ভালোই হতো!’ তিনি আরও বলেন, ‘আজ ১৪ জনকে পদক দিলাম। তার মধ্যে ১১ জনই মেয়ে। ভাইরে সমান সমান না থাক কাছাকাছি তো থাকবে। মেয়েদের নিয়ে বলাও যাবে না। নারী নির্যাতন আইন যে কড়া! তোমরা কি ঘোড়ার ঘাস কাট। তোমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। কোথাও ভেজাল আছে। ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।’ তার কথা শুনে শিক্ষার্থীরা হাসিতে ফেটে পড়েন।

সর্বশেষ খবর